শরীর এবং মন এই দুয়ে মিলে হয় মানুষ। তাই এদের একটির ওপর আরেকটির প্রভাব অপরিসীম। শরীর এবং মন এদের একটিকে আরেকটি নানাভাবে প্রভাবিত করে। মানসিক রোগগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ বা ব্যধি হল Phobic anxiety disorder এবং এর আরেকটা রূপ হল Specific phobia. এ রোগের ক্ষেত্রে রোগীর প্রচণ্ড ভীতি তৈরি হয়, অবশ্যই অহেতুক ভীতি, কোনো বিশেষ বস্তু বা অবস্থার প্রতি। খুব বেশি ভীতির মধ্যে যখন রোগী বসবাস করে তখন মাঝে মাঝে তার মধ্যে Panic attack-এর মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তবে অনেক সময় এই Phobia এবং Panic attack ঠিক ব্যধির পর্যায়ে না পড়ে সাময়িকভাবে কোনো অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির মধ্যে অতিরিক্ত উদ্বেগ, মানসিক চাপ এবং অস্থির আবেগ কাজ করে যা তার জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। বর্তমান সময়ে আমরা একটা বিশেষ অবস্থার মধ্যে বসবাস করছি আর তা হল করোনাময় পৃথিবী, যা সব ক্ষেত্রে অহেতুক না হলেও অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের মধ্যে অযৌক্তিক চিন্তা ও ভীতির সঞ্চার করছে এবং আমরা অনেকেই Panic attacks অনুভব করছি। তবে যারা আগে থেকেই Anxiety disorder-এর patient তাদের ক্ষেত্রে এই Situation টা তাদের পূর্ববতী রোগের তীব্রতা অনেক বাড়িয়ে দেবে এবং সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের Psychiatric চিকিৎসার আওতায় আসতে হবে।
এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, করোনা অবশ্যই মারাত্মক ক্ষতিকর একটি ভাইরাস যা আমাদের মৃত্যুর দিকেও নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি এই ভয়ে ভীত হয়ে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে ফেলব?
আমরা সবাই জানি কোনো বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞতা যেমন সে বিষয় সম্পর্কে আমাদের মধ্যে অনেক অযৌক্তিক আধিভৌতিক ধ্যান-ধারণা এবং বিশ্বাস তৈরি করে তেমনি কোনো বিষয় সম্পর্কে আংশিক জ্ঞান ও অনেক মারাত্মক পরিণতি নিয়ে আসে।
আর একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা, গতি-প্রকৃতি হচ্ছে যে কোনো পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করার মানসিকতা থাকা এবং মোকাবেলা করা। এসব ক্ষেত্রে অতি সচেতনতা, মাত্রাতিরিক্ত অস্থিরতা, অতিরিক্ত ভীতি আমাদের জীবনকে যেমন ব্যাহত করবে একই সঙ্গে অন্যদের জীবনযাত্রাকেও আমরা ব্যাহত করব। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে চধহরপ না হয়ে আসুন আমরা আমাদের কর্মপন্থা ঠিক করি। অনেকভাবেই আমরা পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করতে পারি এবং যে যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারি। যেমন-
* আমাদের যাদের পক্ষে সম্ভব তাদের উচিত করোনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা এবং অন্যদের জানানো, অর্থাৎ ঝঃধনষব বা স্থিতিশীল সচেতনতা তৈরি করা।
* গুজবে কান দেবেন না, বিশেষত ভধপবনড়ড়শ দেখে কোনো জ্ঞানার্জন না করাই ভালো।
* ভিত না হয়ে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার প্রচারমাধ্যমে প্রচলিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, আইইডিসিআর এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অর্গানাইজেশনের নির্দেশনামতো কাজ করুন। ইতিমধ্যেই নির্দেশনাগুলো প্রচারিত হচ্ছে।
* আমাদের মাথায় আসা চিন্তাগুলোকে আমরা মূলত দুভাগে ভাগ করতে পারি।
i. কার্যকরী চিন্তা
ii. অকার্যকরী চিন্তা
দুঃখজনক হলেও সত্যি দিনের মধ্যে বেশিরভাগ সময় আমরা অকার্যকরী চিন্তা করে কাটাই। যা আমাদের জীবনকে অতিষ্ট করে তোলে। মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে অতিরিক্ত ভীতি, দুশ্চিন্তা যা স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করে তা অবশ্যই একটি অকার্যকরী চিন্তা। মূলত প্রয়োজন হচ্ছে অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া।
* করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে মানুষ এর কারণে মারা যায় না। আক্রান্তদের যথাযথ চিকিৎসা এবং সে যেন তা ছড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর প্রতিকার এবং প্রতিরোধ উভয়ই সম্ভব।
* মনে রাখবেন অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা চাপ, উদ্বেগ বরং মানুষের আরও নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক ব্যাধি তৈরি করে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব সাইকিয়াট্রি, শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা