‘এসো মোরা কাজ করি মানবতার কল্যাণে, গড়ি এক সমৃদ্ধ সমাজ’ সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যেই জীবনের যথার্থ সার্থকতা নিহিত। অপরের কল্যাণ কামনাকে প্রাধান্য দিয়ে নিজের স্বার্থকে ত্যাগ করার নামই মানবসেবা।
ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশিষ্ট সমাজসেবক ও নারী সংগঠক, বেশ কয়েকটি সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এর কর্ণধার ‘কোহিনূর আক্তার প্রিয়া‘ প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদুল আজহার দিনে হতদরিদ্র মানুষ, ছিন্নমূল মানুষ, যারা পশু কুরবানী দিতে পারেননি। এমন মানুষদের মুখে এক টুকরো মাংস তুলে দেয়ার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফারুকী পার্কে (অবকাশ) বেলা ১১ টায় হাজির হয়েছেন নিজের রান্না করা মাংস, নুডুস, পায়েস আর সেমাই নিয়ে। বেলা ১১ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত তিনি এসব ছিন্নমূল ভাসমান মানুষকে নিজের রান্না করা খবার নিজের হাতে’ই খাইয়ে দেন। আর সেজন্য’ই তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সেচ্ছাসেবী হিসেবে অনন্যা।
মানবসেবা’র শাখা-প্রশাখা রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো মানুষের কষ্ট হয় এমন বস্তুকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া। অর্থাৎ মানুষের চলাচলের সুব্যবস্থা করা। পথহারা পথিকদের সঠিক পথের সন্ধান দেওয়া। অন্ধ, অসুস্থ, বিকলাঙ্গ ও লুলা ব্যক্তিদের কাজে সহযোগিতা করা। অভাবী, অনাথ, আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসা। বস্ত্রহীনদের বস্ত্রের ব্যবস্থা করা। অসুস্থদের সেবা-শুশ্রূষার ব্যবস্থা করা।
বস্তুত মানবসেবার বিষয়টি অত্যন্ত ব্যাপক। হিতৈষী মনোভাব ও সহমর্মিতার গুণ ছাড়া মানবিকতা ও মহানুভবতার বিকাশ পূর্ণতা পায় না। দুই বেলা শাহী খাবার বিচিত্র স্বাদ আস্বাদন ছাড়া আমার রসনা তৃপ্ত হয় না। অথচ পাশের বস্তিতে খাবার না পেয়ে অবোধ শিশুরা চিৎকার করে কাঁদে। জঠরজ্বালা সইতে না পেরে কত কত অসহায় পথের ধারে উপুড় হয়ে কাতরায়। রসে টইটুম্বর আঙ্গুর ও টসটসে কমলা বিত্তশীলরা প্রায়শই নিক্ষেপ করে ডাস্টবিনে। অথচ অভাবীরা পঁচা ও উচ্ছিষ্ট ফল খাওয়ার জন্য ইতর প্রাণীর সঙ্গে যুদ্ধ করে ডাস্টবিনে। মানুষ বুদ্ধিমান জীব বলে অন্য সব জীবজন্তু একেবারে বুদ্ধিহীন নয়। বরং বুদ্ধির সঙ্গে বিবেক এবং আপন চাহিদার সঙ্গে মানবিকতার সংশ্লেষই অন্য সব জীব-জন্তুর ওপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব এনে দিয়েছে।
বলাবাহুল্য প্রদত্ত সম্পদের অপচয় করা অথচ নিকটস্থ অসহায়ের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করাও এক ধরনের অবিচার। একে অপরকে সাহায্য করা, একে অন্যকে যৎসামান্য হলেও কিছু দেয়াও তাই গুরুত্বপূর্ণ।
মানবসেবার মহান ব্রতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসলে সমাজের রূপই পাল্টে যায়, যা উন্নত দেশ ও জাতি গঠনে ব্যাপক কার্যকরী ভূমিকা রাখে। অন্যের কল্যাণ কামনায় নিয়োজিত করতে পারার মধ্যেই মানুষের জীবন সুখময় ও আনন্দময় হয়ে ওঠে। প্রত্যেক মানুষের উচিত নিজের ভিতরে লুকিয়ে থাকা হিংসা-বিদ্বেষ, কপটতা-ভন্ডামি, এসব কুপ্রবৃত্তিকে শক্ত হাতে দমন করে সমাজসেবার মহান আদর্শে নিজেকে পরিচালিত করা।