বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় চাঁদপুর আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ জানান, মায়ের সহযোগিতায় তার পরকীয়া প্রেমিক আব্দুল হান্নান (৩০) ও আরও দুজন মিলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। মামলা তদন্তে স্থানীয় উপস্থিত সাক্ষী ও বাদিকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায় মা তাহমিনা সুলতানা রুমি মেয়েকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন।
এর আগে মেয়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মা নিজেই বাদি হয়ে শাহরাস্তি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে আটটায় শাহরাস্তির নিজ বাসার শয়ন কক্ষ থেকে নওরোজ আফরিন প্রিয়ার ক্ষত বিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি কুমিল্লায় তার শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি বেড়াতে এসেছিল।
কেন এই হত্যা
মা সুলতানার প্রেমিক হান্নানের বাড়ি তাদের বাড়ির পাশেই। প্রিয়ার বাবা ইসমাইল হোসেন দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার সুবাদে গত ছয় বছর আগে প্রিয়ার মায়ের সঙ্গে হান্নানের পরকীয়ার সম্পর্ক হয়। পরিবার ও এলাকার মানুষ বিষয়টি জানতে পারলে এ বিষয়ে একটি মামলাও করা হয়। পরে স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকটি সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই প্রেমিক হান্নান বিদেশে পাড়ি জমান। গত এক মাস আগে হান্নান আবার দেশে ফিরে আসেন। মেয়ে পরকীয়ায় লিপ্ত না হওয়ার জন্য প্রায়ই মাকে বাধা দিতো। ফলে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
যেভাবে হত্যা করা হয়
ঘটনার দিন ১৬ সেপ্টেম্বর মেয়ে ও নাতনী আনহারকে (১৮ মাস) নিয়ে বিকেল আনুমানিক চারটায় বাড়ি থেকে শাহরাস্তি ঠাকুর বাজারে ডাক্তার দেখাতে যান। তখন বাড়িতে ছিল তার একমাত্র ছেলে দিয়া হোসেন পরশ (১৯)। ভিকটিম ও তার নাতনীকে ডাক্তার দেখিয়ে মাগরিবের নামাজের পর আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বাসায় ফিরে আসামাত্র ছেলে দিয়া হোসেন বাহিরে চলে যায়। তারা বাড়িতে আসা মাত্রই জনৈক হান্নান তার ঘরে এসে এসে ভিকটিম প্রিয়ার সাথে কথা বলতে থাকে। ভিকটিমকে বাড়িতে একা রেখে রুটি বানানোর কথা বলে মা কৌশলে সন্ধ্যা সাতটার দিকে তার জা, জান্নাতের বাড়িতে চলে যান।
ওই সময় ঘরে ভিকটিম প্রিয়া, তার শিশু কন্যা ও হান্নান ছিল। তখন হান্নানের দুই সহযোগী ঘরের মধ্যে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলার ও মাথার পেছনে, ডান চোয়াল এবং পিঠে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ জানান, মামলার অভিযুক্ত ও মূল পরিকল্পনাকারী মামলার বাদি তাহমিনা সুলতানা ওরফে রুমি ও হান্নানকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত তার কথিত প্রেমিকের সঙ্গে আসা অপর দুইজনকে চেনেন না বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন নিহত প্রিয়ার মা তাহমিনা সুলতানা। এক্ষেত্রে আমরা তার কথিত প্রেমিক আব্দুল হান্নানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে অপর দুই আসামিকে শনাক্ত ও আটকের চেষ্টা করবো। দ্রুতই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।