শিক্ষা কেবল জ্ঞানের আলোই নয়, সমাজে পরিবর্তন আনার শক্তি। আর এই শক্তি ধারণ করেছিলেন এক অদম্য মনোবল আর সংকল্পে গড়া এক মানুষ, যার নাম আব্দুল মজিদ মাস্টার। ১৯৩২ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেড্ডা এলাকায় জন্মগ্রহণ করা এই সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার থেকে উঠে এসেছিলেন এক শিক্ষাব্রতী ব্যক্তি, যিনি নিজের জীবনকে বিকশিত করার পাশাপাশি সঙ্গী করে নিয়েছিলেন নিজের ছোট ভাইবোনদের উন্নতি।
আব্দুল মজিদ মাস্টারের শৈশব কেটেছিল এক কঠিন সময়ের মধ্যে, যেখানে আর্থিক দুরাবস্থার পাশাপাশি অনেক সামাজিক বাধা ছিল। কিন্তু তিনি কখনো পিছু হটেননি। তাঁর বাবা মো. ছমির উদ্দিন এবং মা আয়েশা খাতুন ছিলেন সাধারন মানুষ, কিন্তু তাঁদের কাছে শিক্ষার মূল্য ছিল অপরিসীম। আব্দুল মজিদ মাস্টার কেবল নিজেই শিক্ষা গ্রহণ করেননি, ছোট ভাইবোনদের শিক্ষাদানে সহযোগিতা করেছেন। কঠোর শাসন আর একাগ্রতা দিয়ে তাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছেন যে, জীবন সংগ্রামের মধ্যে থেকেও একজন মানুষের স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব।
মাধ্যমিক শিক্ষা লাভের পর তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হন এবং সেখানে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা সম্পন্ন করেন। কিন্তু তার জ্ঞানের ক্ষুধা থেমে থাকেনি। ১৯৮০ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন, যা তাঁর শিক্ষার প্রতি একাগ্রতার উদাহরণ হয়ে ওঠে।
শিক্ষক হিসেবে তাঁর পেশাগত জীবন শুরু হয় এক অদম্য সংকল্পে। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিক্ষকতার মাধ্যমে একজন শিক্ষক সমাজে অন্ধকারকে আলোতে রূপান্তরিত করতে পারে। তাই তো তিনি কখনো পায়ে হেঁটে ছাত্রদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়াতেন, যা আজকের দিনে চিন্তা করাটাও কল্পনাতীত। আব্দুল মজিদ মাস্টার সত্যিই ‘মানুষ গড়ার কারিগর’ ছিলেন। তিনি শুধু পড়াশুনার গুরুত্ব শেখাননি, জীবনের নানা দিকও ছাত্রদের কাছে তুলে ধরেছেন, যাতে তারা সমাজে ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা, নির্ভীক ও সমাজ সংস্কারের ধারক। একজন শিক্ষক হিসেবে তাঁর কাজ কখনো থেমে থাকেনি। সমাজে অসংগতি দূর করতে তিনি জীবনের বহু মূল্যবান সময় ও শ্রম দিয়েছিলেন। তার এই অবদান আজও আমাদের কাছে এক বড় শিক্ষা।
আব্দুল মজিদ মাস্টারের জীবন শুধু শিক্ষা ও শিক্ষা-সংগ্রামের গল্প নয়, এটি একটি প্রেরণার গল্প। এমন গল্প, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সঠিক চেষ্টার মাধ্যমে কঠিন পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব, আর একজন শিক্ষক জাতির ভবিষ্যৎ গড়তে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
লেখক : আবদুল মতিন শিপন