প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর। ‘ভারতরত্ন’র মৃত্যুতে আচমকাই থমকে গেছেন সংগীতপ্রেমীরা।
তার প্রয়াণের পর তাকে নিয়ে নানা স্মৃতিচারণে ব্যস্ত অনেকেই।
লতার সেরা সব গান, কীভাবে বলিউডের সেরা নারী কণ্ঠ হয়ে উঠলেন এসব নিয়ে খবর প্রকাশ হচ্ছে অনেক।
সেই সঙ্গে যে প্রশ্ন ফের সামনে এসেছে- কেন বিয়ে করেননি লতা মঙ্গেশকর?
ভারতীয় গণমাধ্যম পাওয়া সূত্রের খবর, পরিবারের জন্যই আজীবন অবিবাহিত থেকেছেন লতা মঙ্গেশকর। অল্প বয়সেই বাবাকে হারালে ভাই-বোনদের দায়িত্ব অভিভাবকের মতো পালন করেন লতা। পরে আর বিবাহিত জীবনে প্রবেশের সুযোগ হয়নি তার। আগ্রহও হারিয়ে ফেলেন পরে।
২০১১ সালে নিজের জন্মদিনে সাংবাদিক খালিদ মোহাম্মদকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অবিবাহিত থাকার এমন কারণই জানিয়েছিলেন লতা।
এ সুরেলা কণ্ঠী বলেছিলেন, সব কিছু ঈশ্বরের ইচ্ছানুযায়ী হয়। জীবনে যা ঘটে তা ভালোর জন্যই ঘটে এবং যা ঘটে না তাও ভালোর জন্যই ঘটে। বাড়ির সব সদস্যের দায়িত্ব আমার ওপর। এমতাবস্থায় বহুবার বিয়ের কথা ভাবলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি তিনি। আমি খুব অল্প বয়সে (১৩ বছর) কাজ শুরু করি। আমার অনেক কাজ ছিল।
১৯২৯ সালে মধ্যপ্রদেশের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম লতার। পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকরের সবচেয়ে বড় সন্তান লতা। তার তিন বোন মীনা, আশা, ঊষা ও ভাই হৃদয়নাথকে তিনিই কোলেপিঠে মানুষ করেছেন। পরিবারের জন্য উপার্জন, ভাই-বোনদের পড়ালেখা করানো থেকে শুরু করে সব বিষয়াদির দেখভাল করতেন লতা। পাশাপাশি বলিউডে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টাও করে যাচ্ছিলেন প্রতিনিয়ত। প্রচণ্ড দায়িত্ব আর ব্যস্ততার বেড়াজালে আটকে নিজের জন্য ভাবার ফুরসত মিলেননি লতার।
যদিও এক সময়ের গুঞ্জন ছিল, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সাবেক সভাপতি রাজ সিং দুঙ্গারপুরের সঙ্গে প্রেম করেছিলেন লতা। রাজ ছিলেন লতার ভাই হৃদয়নাথের বন্ধু। রাজের সঙ্গে লতার বিয়ে হওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু লতা সাধারণ ঘরের মেয়ে বলে এ সর্ম্পক মেনে নিতে রাজি ছিলেন না রাজ সিংয়ের বাবা। বাবার কথা মানলেও লতাকে না পেয়ে অবিবাহিত থেকে যান রাজ। লতাও সাতপাকে বাধা পড়েনা আর কারো সঙ্গে।
রাজ ছিলেন লতার ভাই হৃদয়নাথের বন্ধু।
ভারতীয় গণমাধ্যমে এ নিয়ে অনেক সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। সেই প্রেমে ব্যর্থ হয়েই কী বিয়ে করেননি লতা? যদিও সব সময় গোটা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন লতা।
সেই বিতর্ক এড়িয়ে সাংবাদিক খালিদ মোহাম্মদ তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আজীবন কুমারী থাকলেন, একাকিত্ব ঘিরে ধরেনি?
জবাবে লতা বলেছিলেন, ‘আমার কাছে আমার পরিবার বিয়ের চেয়ে বেশি জরুরি ছিল। কিন্তু এমনটা অস্বীকার করব না যে আমাকে কোনো দিন একাকিত্ব ঘিরে ধরেনি, তাহলে তো আমি মানুষই হতাম না। বিবাহিত কিংবা সিঙ্গেল, একাকিত্ব সবার জীবনে আছে। কখনো কখনো এই একাকিত্ব ক্ষতিকারক হয়। তবে আমি বলব, আমি খুব সৌভাগ্যবান যে ভালোবাসার মানুষেরা আমার আশপাশে সব সময় থেকেছে। আসলে বিয়ের জন্য একমাত্র আমার মা আমাকে বেশ জোরাজুরি করতেন, একসময় তিনিও হাল ছেড়ে দেন।
তবে কি কোনোদিন প্রেমে পড়েননি? মুচকি হেসে লতা বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, পড়েছি তো, নিজের কাজের সঙ্গে। আর আমি ভালোবেসেছি আমার আপনজনদের, আমার পরিবারকে, আর কাউকে নয়।