৩৮ বছর চাকরী শেষে কনস্টেবল আবু বক্কর সিদ্দিকের চোখের জলে বিদায়

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 5 November 2024, 43 বার পড়া হয়েছে,

শাহাদাত হোসেন সোহেল,ব্রাহ্মণবাড়িয়া : বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে সুদীর্ঘ ৩৮ বছর তিন মাস সতেরো দিন চাকরী জীবন অতিবাহিত করে নিজ বাহিনীর সহকর্মীসহ বহু মানুষের ফুলেল ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে অশ্রসিক্ত নয়নে অবসর যাপনে গেলেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর কনস্টেবল ফুটবলার আবু বক্কর সিদ্দিক। (৪ নভেম্বর) সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১নং পুলিশ ফাড়িঁ ও সদর থানার আয়োজনে তার এ অবসরজনিত বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের  আয়োজন করা হয়। বিদায়জনিত সংবর্ধনায় পুলিশবাহিনীতে তার দীর্ঘ চাকরী জীবনের অনেক সহকর্মীসহ অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী ফুটবলাররা উপস্হিত ছিলেন। এসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মোজাফফর হোসেন, সদর থানার ওসি তদন্ত মোঃ তানভীর আহমেদ,১নং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ সফিকুল ইসলাম, এ এস আই নাহিদ হোসেন,এ এস আই আইয়ুব আলী, টি এস আই ওয়াহিদুজ্জামান, এ এস আই কাজিমুদ্দিন,এ টি এস আই জয়দুল হোসেন,এ টি এস আই হামিদুল,সাবেক ফুটবলার ব্যাপারী মনির,ফুটবলার আজাদ ভূইয়া,ফুটবলার মশিউর রহমান মশু,কনস্টেবল মোঃ কামাল হোসেন,কনস্টেবল মোঃ শফিকুর রহমান,কনস্টেবল আবু তালেব,কন্সটেবল অনুপ রায়,কন্সটেবল শাহজামাল,কনস্টেবল আবুল খায়ের,কনস্টেবল ওমর ফারুক,কনস্টেবল ঋতু মিয়াসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। আবু বক্কর সিদ্দিকের জন্ম কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার নবীয়াবাদ গ্রামে। বাবা কৃষক (মৃত) নাজিম উদ্দিনের দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে আবু বক্কর সিদ্দিক সবার ছোট। বর্তমানে ব্যাক্তি জীবনে তিনি ২ ছেলে ও ২ মেয়ে সহ ৪ সন্তানের জনক। আবু বক্কর সিদ্দিক হাইস্কুলে পড়াকালীন সময়ে পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে পুলিশ বাহিনীতে চাকরী করার স্বপ্ন নিয়ে (১৭ জুলাই ) ১৯৮৬ সালে নোয়াখালী ট্রেনিং সেন্টারে ট্রেনিং সম্পন্ন করে কনস্টেবল পদে প্রথমে সিলেট পুলিশ লাইনসে জয়েন্ট করার মাধ্যমে তার চাকরী জীবনের সূচনা করেন। অতঃপর চাকরীর সুবাদে চাকরী করেছেন, বান্দরবন, নোয়াখালী, চট্রগ্রাম,চট্রগ্রাম( R.R.AF),চট্রগ্রাম জেলা পুলিশসহ সবশেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের হয়ে। চাকরীচলাকালীন সময়ে তিনি পুলিশের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও তিনি ছিলেন পুলিশের একজন পুরোদস্তুর ফুটবলার। ভালো ফুটবলার হিসেবে নিজেকে প্রমান করে তিনি পুলিশে ও বাইরে নানান সময় হয়েছেন সেরা ফুটবলার হিসেবে পুরস্কৃত ও সম্মানীত।আবু বক্কর সিদ্দিক পুলিশের ট্রাফিক বিভাগেও দীর্ঘদিন গুরুত্বের  সাথে দায়িত্বপালন করেছেন।

অবসরজনিত বিদায় সংবর্ধনায় পুলিশের সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবসর কালীন সময়ে তার সুদীর্ঘ সুন্দর জীবন কামনা করে নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।এ ব্যাপারে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোজাফফর হোসেন বলেন, পুলিশ বাহিনীতে আপনি দীর্ঘদিন সার্ভিস দিয়ে সুস্থ সুন্দরভাবে আজ বাড়ি যেতে পারছেন এটা আল্লাহ তায়ালার অনেক বড় রহমত ও দয়া। চাকরি শেষে একদিন সবাইকেই এভাবে একদিন বাড়ি যেতে হবে। আপনি আমাদের জন্য দোয়া করবেন, আমরাও সবাই আপনার জন্য দোয়া করি। তার দীর্ঘদিনের পুলিশের সহকর্মীরাও তাদের একসাথে চলা চাকরী জীবনের বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করে তাকে বিদায় জানাতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। আবু বক্কর সিদ্দিক অশ্রুসিক্ত নয়নে  কান্নাজড়িত কন্ঠে তাদের সবার উদ্দেশ্যে বলেন, আমি খুব অল্প বয়সে পুলিশের চাকরিতে জয়েন্ট করেছিলাম। চেষ্টা করেছি এ দীর্ঘ ৩৮ বছরের উপরে সময় ধরে নিজের দায়িত্বের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে মানুষের জন্য দায়িত্বের জায়গা থেকে কাজ করতে। কতটুকু পেরেছি আমি নিজে জানিনা। আমি আমার ফেলে আসা সোনালী দিনগুলো আর কখনো হয়তো ফিরে পাবোনা। কিন্তু আজ আপনারা আপনাদের এক পরিবারের সদস্যের জন্য আজ যে সম্মান জনক  বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন এতে আমি খুবই গর্বিত ও কৃতজ্ঞ বোধ করছি । আপনারা আমার ও আমার পরিবারের সকলের জন্য দোয়া করবেন আমি যেন ছেলে-মেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাকিটা জীবন সুখে শান্তিতে কাটিয়ে দিতে পারি। পরে তাকে সদর থানা ও ১ নং শহর পুলিশ ফাড়ির পক্ষ থেকে ফুলের মালা, ক্রেস্ট দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয় এবং ফুল ছিটিয়ে একটি কালো রঙের হায়েস গাড়িতে করে মোটর বাইক  শোভাযাত্রাসহ বিদায়জনিত সংবর্ধনায় সংবর্ধিত করে বাড়ির পথে এগিয়ে দেওয়া হয়।