এখন কী হবে মুরাদের

রাজনীতি, 14 December 2021, 384 বার পড়া হয়েছে,

নিউজ ডেস্ক : বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরে আসা সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের ভাগ্যে এর পর কী ঘটতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। তার সংসদ সদস্য পদ শেষ পর্যন্ত থাকবে কিনা, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর শেষ পরিণতি কী হতে পারে- মূলত এসব প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন মানুষ।

এরই মধ্যে অনেক জেলায় মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, এটি আদালতের বিষয়। আর দলীয়ভাবে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ থেকে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, সে অনুযায়ীই কেন্দ্র থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

কানাডা পাড়ি জমাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে গত রবিবার দেশে ফেরেন বহুল আলোচিত-সমালোচিত মুরাদ হাসান। এখন তার পাশে নেই ক্ষমতায় থাকাকালীন সঙ্গী ও রাজনৈতিক সহচররা। এখন অনেকটাই একা হয়ে যাওয়া মুরাদ হাসান রবিবার সন্ধ্যায় নিজেকে আড়াল করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বের হন। ধানমন্ডির বাসায় স্ত্রী-সন্তানরা অবস্থান করলেও তিনি সোমবার পর্যন্ত সেখানে ফেরেননি। উত্তরায় ১ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর রোডে ভাইয়ের বাসায় ওঠেন। তবে সোমবার সারাদিন বাসার সামনে গণমাধ্যমকর্মীরা অবস্থান করলেও মুরাদের দেখা পাওয়া যায়নি।

এদিকে মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় অন্তত ৭টি মামলার আবেদন হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটনের নিম্ন আদালত ও রাজশাহীর আদালত মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ডা. মুরাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়ে থাকলে আইন অনুযায়ী যা হওয়ার তা-ই হবে। দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ নীতিগত প্রশ্নে যা করার তা-ই করেছে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা মুরাদকে মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ দিয়েছেন। তাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ পাঠিয়েছে জেলা কমিটি। সাধারণত জেলা আওয়ামী লীগের সুপারিশগুলো আমলে নেওয়া হয়। হয়তো দলের কার্যনির্বাহী কমিটি তার অব্যাহতি বহাল রাখবে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুলিয়াস সিজার তালুকদার গত ৭ ডিসেম্বর শাহবাগ থানায় জিডি করেন। জিডির ব্যাপারে শাহবাগ থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা অভিযোগটি ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ও স্পেশাল ক্রাইম ইউনিটে পাঠিয়েছি। তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন। সাইবার বিভাগের তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গত রবিবার সন্ধ্যায় বিমানবন্দর থেকে যে গাড়িতে করে মুরাদ হাসান বের হয়েছিলেন, সেই গাড়িই উত্তরার একটি বাসার নিচতলায় পার্ক করে রাখতে দেখা যায়। যদিও গতকাল বাসার নিরাপত্তারক্ষীরা বলেছেন, মুরাদ হাসান নামে কেউ এই বাড়িতে এসেছে কিনা, তা তারা জানেন না।

মুরাদ হাসানের ঘনিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও মুরাদ হাসানের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।

সংসদ সদস্য পদ বাতিল চায় শ্রমজীবী নারী মৈত্রী

গুরুতর নৈতিক স্খলনের অভিযোগ এনে মুরাদ হাসানকে গ্রেপ্তার ও তার সংসদ সদস্য পদ বাতিলের দাবি জানিয়েছে শ্রমজীবী নারী মৈত্রী। সংগঠনটি বলেছে, চারিত্রিক স্খলনের দায়ে মুরাদ হাসানকে প্রতিমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছে, সেই একই কারণে তার সংসদ সদস্য পদ থাকারও কোনো সুযোগ নেই। গতকাল শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর সভাপতি বহ্নিশিখা জামালী ও সাধারণ সম্পাদক রাশিদা বেগম এক বিবৃতিতে আরও বলেন, মুরাদ হাসান যে নারী বিদ্বেষী অশ্লীল আচরণ করেছেন এবং ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন, তাতে বহু আগেই তাকে গ্রেপ্তার ও বিচারের সম্মুখীন করা উচিত ছিল। তা না করে সরকার তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে আইনের শাসনকেই অস্বীকার করেছে।

জেলায় জেলায় মামলার আবেদন, কোথাও খারিজ কোথাও গ্রহণ

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান সম্পর্কে কটূক্তির অভিযোগে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে একাধিক জেলায় মামলার আবেদন হয়েছে। এসব আবেদনের বেশির ভাগই আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। তবে বরিশালে মামলার আবেদন আমলে নিয়ে পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আমাদের সময়ের আদালত প্রতিবেদক (ঢাকা) জানান, ডা. মুরাদ হাসান ও মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদের বিরুদ্ধে গত রবিবার মামলার আবেদন করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা ওমর ফারুক ফারুকী। গতকাল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের আস শামস জগলুল হোসেন আবেদনটি খারিজ করে দেন।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, ডা. মুরাদ হাসান ও উপস্থাপক মুহাম্মদ মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদের বিরুদ্ধে বরিশালে মামলা হয়েছে। গতকাল বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনালে বরিশাল জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ মামলাটি দায়ের করেন। আদালতের বিচারক গোলাম ফারুক মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক (ময়মনসিংহ) জানান, ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন হয়েছে। এতে ডা. মুরাদ হাসান ও মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদকে বিবাদী করা হয়েছে। গতকাল সকালে ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেজাউল করিম চৌধুরী এই আবেদন করেন। সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহা. বজলুর রহমান মামলার আবেদন গ্রহণ করে আদেশের জন্য পরবর্তী তারিখ নির্ধারণের জন্য রেখে দেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক (রাজশাহী) জানান, ডা. মুরাদ হাসানের নামে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলার আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত আবেদনটি খারিজ করে দেন। এর আগে ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মো. জিয়াউর রহমান মামলার আবেদনটি গ্রহণ করেছিলেন।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ডা. মুরাদ হাসানের নামে মামলার আবেদন করেছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু। গতকাল সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের (সদর আমলী) আদালতে (ক) এই আবেদন করেন তিনি।