যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের সম্মেলনে বাংলাদেশকে দাওয়াত না দেওয়ার বিষয়টিকে দেশটির ‘ভূ-রাজনৈতিক হিসেব-নিকেশের’ প্রতিফলন হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট।
একই সঙ্গে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে কূটনৈতিক ফাটল ধরাতে ‘তৃতীয়পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে’ দাবি করে সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার এবং বন্ধু দেশগুলোর কাছে সব বিষয়ে ‘সঠিক তথ্য’ তুলে ধরার পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন জোটের নেতারা।
সোমবার এক ভার্চুয়ালি আলোচনা সভায় জোট নেতারা এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতির বক্তব্যে জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, সারাবিশ্ব যখন জঙ্গিবাদ আলোড়িত একটি বিষয়, সেই সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা হয়েছে। জঙ্গি নির্মূলে যেই সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ অবদান সেই সংস্থাকে আঘাত করা হচ্ছে কেন, আমাদের তা বোধগম্য নয়।
তিনি বলেন, আজকে বঙ্গোপসাগর নিয়ে যে বলয় সৃষ্টি হয়েছে, সেই বলয়ে আমাদের দেশ অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার কারণেই চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। এটা তাদের জন্যই একটা অসম্মানজনক সিদ্ধান্ত বলে পরিগণিত হবে।
তিনি বলেন, পুলিশ এবং র্যাব সদস্যরা শুধু দেশের জঙ্গিবাদ নির্মূলে সফল নয়, বিভিন্ন দেশের শান্তিরক্ষায় সফলভাবে কাজ করছে, প্রশংসিত হয়েছে। এখানে তৃতীয় কোনো শক্তি আমাদের সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরানো বা এ ধরনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই দেশের জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করার কোনো প্রয়াস আছে কিনা বা তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে কিনা, বিষয়টি তলিয়ে দেখা উচিত।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যখন কোনো দেশের সরকারকে পছন্দ না করেন বা তার ইচ্ছা অনুযায়ী সরকার পরিবর্তন করতে চান- তখন তাদের ওপর বিভিন্ন দোষারোপ করে। বাইডেন কিন্তু ঘোষণাই দিয়েছে সে বিশ্ব নেতৃত্বে ফিরতে চায়। এজন্য বিভিন্ন দেশকে তাদের বলয়বৃত্ত করার চেষ্টা করছে। এ অঞ্চলেও তারা প্রভাব বলয় সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। গণতন্ত্রের সম্মেলনে দাওয়াত না দেওয়া সেই ভূরাজনীতিই কাজ করেছে। আর যুক্তরাষ্ট্র যখন মানবাধিকারের কথা বলে, বিশ্ব তখন তা বিশ্বাস করে না।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, এ বিজয়ের মাসে যুক্তরাষ্ট্র কতিপয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার যুক্তরাষ্টে প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে- যা এই দুই রাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সঙ্গে বৈসাদৃশ্য। সংবিধানের বিধান সমুন্নত রেখেই র্যাব আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশেরও যদি বাহিনীর কোনো সদস্যই বিধান ও আইনের বাইরে গিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করে তাকে সাজা দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে অবস্থান সেই নীতির সঙ্গে এই ঘোষণা বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তা ভুল তথ্য দ্বারা পরিচালিত। বিদেশের কোন রাষ্ট্র কী বলল, সেটি দেশে বাংলাদেশের ক্ষমতার হিসাব-নিকাশ যারা করে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যে শক্তি মানতে পারেনি, সেই শক্তি এই বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর লগ্নে আমাদের আঘাত করার চেষ্টা করছে। যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে, সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত দূরভিসন্ধি এবং অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।
আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি, জোটের নেতা রেজাউর রশীদ খান, এস কে সিকদার, এজাজ আহম্মেদ মুক্তা, ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, ডা. শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।