ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনক শহীদ পলু দিবস আজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 27 November 2021, 426 বার পড়া হয়েছে,
আজ ২৭ নভেম্বর বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাবাসীর স্মরণীয় ঐতিহাসিক ৩৯তম জেলা আন্দোলন ও শহীদ ওবায়দুর রউফ পলু দিবস। আজ হতে ৩৯ বছর আগে বিগত ১৯৮৩ সালে সকল ধরণের প্রয়োজনীয় সরকারী প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বঞ্চিত তৎকালীন মহকুমা সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র স্মৃতি ধন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে জেলা ঘোষণা করার জন্য হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের নিকট দাবী জানিয়ে সর্বদলীয় এবং সর্বস্তরের জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে উঠে। সর্বদলীয় জেলা আন্দোলন সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ পালন করতে থাকে একের পর এক কর্মসূচী। আন্দোলন তীব্র গণআন্দোলনে রূপ নেয়ার পরও সেনা শাসকের সরকার দাবী মানায় নিরবতা পালন করায় জেল জুলুমকে উপেক্ষা করে চূড়ান্ত পর্বে ২৭ নভেম্বর ডাকা হয় অনির্দিষ্ট কালের হরতাল কর্মসূচী। আন্দোলনের তীব্রতায় অচল হয়ে যায় মহকুমা প্রশাসনের সকল কার্যক্রম। এরই এক পর্যায়ে একদিন সন্ধ্যায় পৌর সুপার মার্কেট চত্বরে হাজারো জনতার উপস্থিতিতে ছোট মঞ্চে সংস্কৃতির রাজধানী এই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংস্কৃতি কর্মী আল আমিন শাহীনের কঠোর অনুশীলন মূলক অভিনয়ে মঞ্চস্থ হয় একাংকীকা নাটক “এরশাদ আলী”। ছন্দোবদ্ধ নৃত্যের তালে উচ্চারিত বক্তব্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর ন্যায্য দাবী বাস্তবায়নে এরশাদ সরকারের অনীহা ফুটে উঠায় এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠা সাধারণ জনতা এবং ব্যবসায়ীরা জেলা আন্দোলনের জোড়ালো দাবীর সাথে বেশী আকৃষ্ট ও একাত্ম হয়। চূড়ান্ত পর্বে জেলা আন্দোলন সংগ্রাম পরিষদের আহুত ২৭ নভেম্বর দিনে হরতাল শুরু হওয়ার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্বস্তরের ছাত্র জনতার অবরোধে ভোর হতে রেলওয়ে আর সড়ক পথে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় পূর্বাঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমানার বাইরে সকল স্থানে লঞ্চ ট্রেন বাস ট্রাক আটকা পড়ে যায় যাত্রী ও মালামালসহ। শহরের সকল অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ করে সর্বস্তরের নারী পুরুষ শিশু মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত করে তুলে রেল ও সড়ক পথ। অবরুদ্ধ পথে প্রতিবন্ধকতা (বেড়িকেড) তৈরী করে টায়ার গাছ ফেলে জ্বালানো হয় আগুন। সে আগুন ক্রমশঃ ছড়িয়ে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন ভবন, সিও অফিস, জনতা ব্যাংক প্রধান শাখা কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে। বিক্ষোভের আগুনে পুড়ে ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয় সবকিছু। পোড়া রেলওয়ে স্টেশনে নিয়োজিত তৎকালীন বিডিআর এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় অবরোধকারী ছাত্র জনতা। সকাল থেকে চলতে থাকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এক পর্যায়ে বিডিআর এর বর্ষিত গুলিতে বিদ্ধ হন রেলব্রীজের উপরে দাঁড়ানো ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারী কলেজের বিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ওবায়দুর রউফ পলুসহ কয়েকজন। তারা মহকুমা ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে জেলা করার লক্ষ্যে আত্মদান করে শাহাদাৎ বরণ করেন। জনতা পলুর লাশ ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হলেও অন্যদের লাশ বিডিআর ছিনিয়ে নিয়ে গোপনে মাটি চাপা দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেন, তবে বিডিআর সেটা অস্বীকার করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে আসা সেনাবাহিনীর তাক করা সশস্ত্র সাঁজোয়া যানের উপস্থিতে থমথমে শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৭ নভেম্বর দুপুরে কালো পতাকায় ঢাকা ওবায়দুর রউফ পলুর শববাহী মৌন মিছিল নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মিলিত হয় বিশাল জানাজায়। বিকেলে শহরতলীর শেরপুরস্থ হযতর মীর শাহাবুদ্দীনের (রাঃ) মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে লাখো মুসল্লীর অশ্র“ সজল নয়নে দাফন সম্পন্ন হয় ওবায়দুর রউফ পলুর। এর সুফল হিসেবে ১৯৮৩ সালের শেষ নাগাদ নিয়াজ মুহম্মদ স্টেডিয়ামে রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিশাল জনসভায় তুমুল করতালির মধ্যে মহকুমার বিলুপ্তি ঘটিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাসীর দাবী ও পলুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে জেলার স্বীকৃতি ঘোষণা করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় পরে স্থাপিত হয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কার্যালয়সহ জেলা পর্যায়ের পাসপোর্ট অফিস এবং বিভিন্ন দপ্তর। যার সুফল কাছে থেকে বর্তমানে ভোগ করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী।
এদিকে, জেলা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নেতৃবৃন্দের কয়েকজন বর্তমানে আমাদের মাঝে বেঁচে নেই। কেহ অসুস্থ। অন্যরা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন নিয়ে ব্যস্ত। এরই মধ্যে জেলা আন্দোলনের স্মৃতিকে টিকিয়ে রাখতে বিগত ১৯৯১ সালের ০১ নভেম্বর গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগে পলুর স্মৃতিকে চীর জাগরুক রাখতে কোর্ট রোড এর নাম পরিবর্তন করে শহীদ পলু সড়ক নামকরণ করেছে। পাশাপাশি জেলাবাসীর স্বার্থে বাংলাদেশ সরকারের নিকট বিভিন্ন দাবী জানিয়ে এসেছে।