পাওনা টাকা চাওয়ায় ব্যবসায়ির মাথায় কোপ, মহিষ লুটের অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 5 July 2024, 48 বার পড়া হয়েছে,
মোঃ নিয়ামুল ইসলাম আকঞ্জি,ব্রাহ্মণবাড়িয়া :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার খাঁটিহাতা গ্রামে পাওনা টাকা চাওয়ায় এক মাংস বিক্রেতা ও তার ছোট ভাইকে কুপিয়ে আহত এবং তাদের ছয়টি মহিষ লুটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একই গ্রামের একদল দাঙ্গাবাজের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ি রাকিব প্রকাশ কালু মিয়া বাদি হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, খাঁটিহাতা গ্রামের কেরামত আলীর ছেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের আইনজীবী সহকারি নূর আলম মামলার বাদি কালু মিয়ার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ধার নেন। এই পাওনা টাকা চাওয়া নিয়ে গত ১৭ জুন, ঈদের দিন সকালে নূর আলমের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। এর চারদিন পর গত ২১ জুন নূর আলমের চাচা মামলার দুই নম্বর আসামি ইদ্রিস মিয়ার বাড়ির সামনের খোলা জমিতে কালু মিয়ার ১৫টি মহিষ ঘাস খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে চড়ানো হয়। সেখান থেকে ৬টি মহিষ নূর আলমের গোষ্ঠীর লোকেরা লুট করে নিয়ে যায়।
এদিকে, মহিষ নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তর্কাতর্কির জের ধরে একই দিন বিকেলে নূর আলমের পক্ষের অন্তত ২০/২৫ জন দাঙ্গাবাজ রাম দা, লোহার রড ও লাঠিসোটা নিয়ে কালু এবং তার ছোট ভাই সুমনের ওপর চড়াও হয়।  আসামিরা এসময় সংঘবদ্ধ হয়ে সুমনের মাথায় কোপ দেয় এবং তাকে বাঁচাতে গেলে কালুর মাথা ফাটিয়ে দেয়। এরই মধ্যে কালু মিয়া রক্তাক্ত আহত হওয়ার সুযোগে মামলার আরেক আসামি জাবেদ মিয়া তার সঙ্গে থাকা নগদ ৪৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এসময় অন্য গ্রামবাসীরা তাকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরার পর তিনি এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গেল বছরের ১৭ অক্টোবর খাঁটিহাতা গ্রামের শরাফত আলীর ছেলে সাব্বির মিয়াকে (৯) অপহরণ করে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে গ্রামের একটি চক্র। মুক্তিপণ না দেওয়ায় চার দিন পর বাড়ির অদূরে শিশুটির লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় শিশুর বাবা বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পরপরই সদর থানার পুলিশ শিশু অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আবু মিয়াসহ (৩৫) তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। কয়েক দিন আগে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে আবু মিয়ার জামিন হয়। পরে বাদিপক্ষ আপিল করলে উচ্চ আদালত তাঁর জামিন বাতিল করেন।
এরপর এই নিয়ে আবু মিয়ার পক্ষের লোকজন বাদীপক্ষের লোকজনের ওপর ক্ষিপ্ত হন। বাদিপক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন খাঁটিহাতা গ্রামের হোসেন মিয়া (৫৫) এবং আসামিপক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিজান মেম্বার (৫৮)। এই মামলার বাদি কালু মিয়া মিজান মেম্বারের পক্ষের লোক। মূলত শিশু সাব্বির হত্যা মামলায় মিজান মেম্বারের পক্ষের লোকজনদেরকে জড়িয়ে দিতে প্রতিপক্ষের লোকজনদের অপচেষ্টার কারণেই গ্রামে দাঙ্গা হচ্ছে।
মামলার বাদি কালু মিয়া বলেন, শিশু সাব্বির হত্যার আট মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত আদালতে চার্জশীট দেয়নি পুলিশ। এই সুযোগে গ্রামে আধিপত্য বিস্তারে জড়িত কিছু দুষ্ট প্রকৃতির লোক আমাদের মতো নিরপরাধ লোকজনদেরকে মামলায় জড়ানোর চেষ্টা করছে। এছাড়া আমি এবং আমার ভাইয়ের উপর হামলার ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপর না হওয়ায় আমরা নিজেদের উদ্যোগে মামলার ১৪ নম্বর আসামী উসমানকে আটক করি। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহিদ আহসান বলেন, মামলার একজন আসামি গ্রেপ্তার আছে। এখন মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে৷ তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আসলাম হোসেন বলেন, খাঁটিহাতা গ্রামে বিবাদমান দুটি পক্ষের দায়ের করা মামলাগুলোরই তদন্ত চলছে। তদন্ত সম্পন্ন হলে আদালতে চার্জশীট জমা দেওয়া হবে।