কসবা ও আখাউড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনব্যালট বাক্স ছিনতাই, প্রকাশ্যে সিলমারা, কেন্দ্র দখলের চেষ্টা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 21 May 2024, 23 বার পড়া হয়েছে,
মোঃনিয়ামুল ইসলাম আকঞ্জি,ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও আখাউড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ছিনতাই, প্রকাশ্যে সিল মারা, কেন্দ্র দখলের চেষ্টা, জোর পূর্বক ভোট নেয়ার চেস্টা, চেয়ারম্যান দু’প্রার্থীর মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়েছে।
জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৯টায় কসবা উপজেলার কুটি অটল বিহারী উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ব্যালট খোলার আগেই প্রকাশ্যে ভোট দেয়ার ঘটনা ঘটে।
কেন্দ্রটি উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী ছায়েদুর রহমান স্বপনের কেন্দ্রে একটি নারী বুথে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বান্ডিল থেকে ব্যালট পেপার ছেঁড়ার আগেই একজন ভোটার সিল মেরে দেন। একই ঘটনা ঘটে পাশের পুরুষ বুথে প্রার্থীর এজেন্ট পোলিং অফিসারের টেবিলেই ব্যালট পেপারে সিল মারেন।
নারী বুথে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ও কসবা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলামের চশমা প্রতীকে এবং পুরুষ বুথে উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ছাইদুর রহমান স্বপনের কাপ-পিরিচ প্রতীকে সিল মারা হয়েছে।
কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী ছাইদুর রহমান স্বপনের বাড়ি কুটি গ্রামে। তিনি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ফুফাতো ভাই। খবর পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্সকে ওই কেন্দ্রে পাঠান। ততক্ষনে ওই কেন্দ্রের ভোটাররা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এদিকে দুপুরে দিকে কসবার বাদৈর ইউনিয়নের হাতুরাবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দরজা জানালা ভেঙ্গে জাল ভোট প্রদানের সময় পোলিং এজেন্টসহ ৯ জনকে আটক করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে সালমা রুমা।
গ্রেফতারকৃতদের  পারভেজকে ২মাস, আমানুল্লাহকে ৭ দিন, আলমকে ২৫ দিন, নুরে আলমকে ১ মাস, বাতেন মিয়াকে ১৫ দিন, আবু নাইমকে ২ মাস, জাবেদকে ৭দিন, ওবায়দুলকে ১ মাস ও নুরে আলমকে ১ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে সালমা রুমা জানান, পোলিং এজেন্টসহ ৯ জন ভোটকেন্দ্র ভাঙচুর করে জোর করে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেন।
কসবায় উপজেলা নির্বাচনে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারার সময় আমজাদ (৩৯) নামের এক প্রার্থীর এজেন্টকে সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। বিকেলে উপজেলার আকছিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে আমজাদকে ৫দিনের কারাদন্ড দেয়া হয়। আমজাদ চেয়ারম্যান প্রার্থী ছাইদুর রহমান স্বপনের কাপ-পিরিচ প্রতীকের এজেন্টের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
কসবায় গোপন কক্ষে ভোট দিয়ে মোবাইলে ছবি তোলার অপরাধে চার যুবককে কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন
নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া।
দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন সাইফুল ইসলাম (২৪), শাকিল (২২), রহমতুল্লা (২৪) ও রাসেল (২০)। জানা যায়, সৈয়দাবাদ জামিয়া ছানি ইউনুছিয়া মাদরাসা কেন্দ্রে চারজন মোবাইল ফোন সঙ্গে নিয়ে গোপন কক্ষে ভোট দিয়ে সে ছবি মুঠোফোনে তোলেন।
ঘটনাটি সন্দেহজনক হলে তল্লাশি করে তাদের কাছ থেকে মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়। পরে ভ্রাম্যমান আদালত তাদের চারজনকে তিনদিন করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে।
অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহনের শেষ মুহূর্তে প্রকাশ্যে কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালটবক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
বিকেলে পৌরশহরের দেবগ্রাম পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুরাদ হোসেন ভূঁইয়ার সমর্থকরা কেন্দ্রে প্রবেশ করে একটি ব্যালট ভর্তি বাক্স ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
পুলিশ ধাওয়া করলে তারা ব্যালটবক্সটি পাশ্ববর্তী একটি পুকুরে ফেলে দেয়। পরে পুলিশ পুকুরের পানি থেকে ভাসতে থাকা ব্যালবক্সটি উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তানভীর ফরহাদ শামীম। ব্যালটবাক্সটির ভোটগুলো অক্ষত থাকায় তা গণনার জন্য প্রিজাইডিং কর্মকর্তা শাহ ইলিয়াস উদ্দিনকে নির্দেশ দেন।
সকালে আখাউড়ার নয়াদিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং মারামারির ঘটনা ঘটে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুরাধ হোসেন ভূইয়ার সমর্থক মোগড়া ইউনিয়নের আব্দুল মতিন তার কর্মী সমর্থকদের নিয়ে কেন্দ্রটি দখলের চেষ্টা চালায়। এ
এ সময় প্রতিদ্বন্ধি চেয়ারম্যান প্রার্থী মনিরুল ইসলামের লোকজন বাঁধা দিলে প্রথমে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং পরে মারামারির ঘটনা ঘটে। নয়াদিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ রানা জানান, কেন্দ্রের বাইরে ঝামেলা হলেও ভোট প্রদানে কোন সমস্যা হয়নি।