এক মায়ে এত রূপ, এত বৈচিত্র্য 🔲 মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ

জনতার কন্ঠ, 12 May 2024, 146 বার পড়া হয়েছে,

কেউ আমাদের মা, কেউ আমাদের সন্তানের মা, আমাদের কোনো সন্তান হবে কারো মা। পৃথিবীর যেখানে মানুষ; সেখানে মা। মায়ে ভরা এই বিশ্ব। মা জন্মদাত্রী, মা লালন-পালনকারী, মা খাদ্যদানকারী, মা সেবা-শুশ্রূষাকারী। মা চিকিৎসক, মা শিক্ষক, মা পথপ্রদর্শক। মা বিপদে রক্ষাকারী, মা আশ্রয় দানকারী, মা মঙ্গল কামনাকারী। মা সুন্দর, মা কমনীয়, মা নমনীয়, মা কঠিন। মানুষের প্রথম খাদ্য মাতৃদুগ্ধ, প্রথম আশ্রয় মায়ের কোল। মায়ের মুখের ভাষাই আমাদের ভাব প্রকাশ, কথা বলার মাধ্যম। মায়ের বুক পরম নির্ভরতার স্থান, টুকরো স্বর্গ।

মা রাতে চাঁদ তারা হয়ে আরামের ঘুম পাড়ায়। দিনের সূর্য হয়ে উষ্ণতা দান করে। মা মাটির মতো সবকিছু সহ্য করে নেয়। সন্তানের বিপদে মা ইস্পাত কঠিন পাহাড়ের মত দাঁড়িয়ে থাকে। মা গাছের মতো ছায়া দান করে। মা আকাশের মতো উদার, বাতাসের মতো শীতল। মায়ের হাসি ফুলের চেয়েও অপরূপ। মায়ের কান্না যেন পাহাড়ের ঝরনার বেগ। মায়ের মমতা এক বহতা নদীর স্রোত। যে মমতার ঢেউয়ের শুরু আছে; শেষ নেই। মায়ের একটু স্পর্শ এক খণ্ড বরফের চাইতেও রোমাঞ্চকর। শত্রুর সামনে মা এক জ্বলন্ত অগ্নিগিরি। এক মায়ে এত রূপ, এত সৌর্ন্দয, এত বৈচিত্র্য !

আকাশে বিরাজমান নিরাকার সৃষ্টিকর্তা যেন তাঁর সকল গুণাবলীর একটু একটু পরশ দিয়েই তৈরি করেছেন এক একজন মায়ের প্রতিরূপ। তিনি পৃথিবীর সকল সৃষ্টির ভালো বৈশিষ্ট্যগুলো রেখেছেন এক এক জন মায়ের। সৃষ্টিকর্তাকে দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না বলে অনেকেই তাঁকে শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতা জানাতে অস্বীকার করেন। তবে মা-কে তো দেখা যায়, ছোঁয়া যায়। মায়ের কষ্ট, ত্যাগ তিতিক্ষা আমাদের সবারই জানা। নিজের জীবনের সকল সুখ, স্বাদ, আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে একজন মা তার সন্তানের সকল চাহিদা পূরণ করেন। তবে কেনো পৃথিবীতে লাখো মা আজ অনাহারে, অনাদরে, স্বল্প বসনে থাকে!

মানুষ ছাড়া প্রাণীকুলের আর সকল বাচ্চাই জন্মের পর পর খাওয়া-দাওয়া, হাঁটাচলা, ওড়াউড়ি, সাঁতার কাটা বা দৌড়ানো শিখে যায়। মানবশিশু এগুলো শিখতে সময় লেগে যায় বেশ কয়েক বছর। ততদিনে প্রাণিকুলের অন্যান্য বাচ্চারা পরিণত হয়ে নিজেরা বাচ্চা জন্ম দিয়ে বৃদ্ধ কালে পৌঁছে যায়। দশ মাসের অধিক সময় একজন মানব শিশুকে পেটে ধারণ এবং জন্মের পর কয়েক বছর তার সমুদয় আদর-যত্ন করেন যে নারী- তিনিতো আমাদের মা। পৃথিবীতে এই মার চেয়ে সুন্দর আর কে হতে পারে ?

অট্টালিকা হোক কিংবা কুঁড়েঘর, এমনকি রাস্তায় থাকা অসহায় স্বল্পাহারী, স্বল্পবসনা, পাগলিনি মায়েরাও তার সন্তানের প্রতি সমান ভাবে যত্নশীল। পৃথিবীতে মায়ের বিকল্প কেবল মা-ই। আর কিছু নয়, কিছু নেই। মা হারা সন্তান অভাগা, দুর্ভাগা। মার সেবা পওয়া থেকে, মার চেহারা দেখা থেকে বঞ্চিতরা পৃথিবীর দুঃখী মানুষদের একজন। আর মা পেয়েও যারা মার সেবা করে না, দায়িত্ব নেয় না, তাদের থেকে খারাপ মানুষ, তাদের থেকে অভিশপ্ত মানুষ পৃথিবীতে আর কেউ নেই। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ তিনি আমাদের একজন মা দিয়েছেন।

সকল মা-দের শ্রদ্ধা করুন। ভালোবাসুন, কৃতজ্ঞতা জানান, সহযোগিতা করুন। সেই মা আপনার জন্মদাত্রী হোক বা না হোক। প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী মা দিবস হিসেবে উদ্যাপন করা হয়। যদিও পৃথিবীর প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত, মায়েদের জন্য। তবুও বিশেষ এই একটি দিন মাদেরকে সম্মান, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাতে একটি দিন একটু বেশিই গুরুত্ব বহন করে। আজ মা দিবস। সকল মাকে জানাই আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

লেখক : মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ (লেখক, সম্পাদক, সংগঠক)