মোঃ নিয়ামুল ইসলাম আকঞ্জি,ব্রাহ্মণবাড়িয়া : নয় মাস ছোট্ট একটি টয়লেটে বন্দী ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যুবক সুজিত দাস। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়াই তাকে ভোগ করতে হয় এমন নির্মমতার। দম বন্ধ হয়ে আসা ওই কক্ষেই কাটতো তার দিন। অবেশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে বন্দী দশা থেকে মুক্ত হয়েছে সে। সামাজিক ও পারিবারিক নিরাপত্তার নামে এমন নির্মমতা নাড়া দিয়েছে সবার মনে।
আটসাটে একটি টয়লেটের ছোট্ট খুঁপড়ি দিয়ে ভেসে আসছে মানুষের গুঙ্গানির শব্দ। তিনি এখানে আটকা পড়েননি বরং ভাগ্যোর নির্মমতায় এখানে বন্দী হয়ে আছেন প্রায় ৯ মাস ধরে। বলছি মানসিক ভারসাম্যহীন সুজিত দাসের কথা। গত সোমবার দুপুরে তাকে এই বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে পুলিশ।
সুজিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কাশিপাড়া এলাকার হরেন্দ্র দাস ও আরতি দাসের ২য় ছেলে। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন। গেল ৮ বছর আগে তাকে বিয়েও করানো হয়। তবে বিয়ের ছয় মাস পর ছেড়ে চলে যায় স্ত্রী। এরপর সে আরো দিশেহারা হয়ে পড়ে। এমন কি তার আঘাতে প্রাণ হারায় আপন চাচাও। তার অস্বাভাবিক আচরণে অনিরাপদ হয়ে পড়ে এলাকার মানুষ। পরিবারের দাবী এমন অবস্থায় সামাজিক ও পারিবরিক নিরাপত্তার স্বার্থে প্রায় ৯ মাস আগে ঘরের পেছনের একটি টয়লেটে তাকে তালা বন্ধ করে রাখা হয়। ছোট্ট ওই টয়লেটেই চলত খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কাজ। সুজিতের চিকিৎসায় পরিবার দীর্ঘদিন প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু সে ঔষধ গ্রহণের ব্যাপারে কোনো ভাবেই আগ্রহী নয়। বরং বিভিন্ন সময় হয়ে উঠত হিংস্র ও আক্রমণাত্বক।
তবে অমানবিক এই ঘটনাকে সামাজিক অবক্ষয় হিসেবে দেখছন সুশীল সমাজ। তাদের মতে সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব সমাজ ও পরিবারের।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে স্থানীয় একজন টয়লেটের নিচের ফাঁকা অংশ দিয়ে সুজিতকে দেখতে পায়। পরে তিনি পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে সুজিতকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠায়।
সমাজে পিছিয়ে থাকা এই জনগোষ্ঠীর প্রতি সামাজিক ও পারিবারিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে এমন প্রত্যাশা সকলের।