মোঃ নিয়ামুল ইসলাম আকঞ্জি,ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে চোরাই পথে আসা ভারতীয় পণ্যভর্তি কাভারভ্যান আটক নিয়ে দিনভর পুলিশের লুকোচুরিতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। রফাদফার পর উৎকোচের বিনিময়ে প্রথমে ভারতীয় পণ্যভর্তি কাভারভ্যানটি ছেড়ে দিলেও জানাজানি হয়ে যাওয়ায় পরে আটক করতে বাধ্য হয় পুলিশ। তবে পঞ্চাশ লাখ টাকারও বেশী মূল্যের বিপরীতে পুলিশের জব্দ তালিকায় মাত্র বিশ লাখ টাকার পণ্য দেখানো হয়। এমন কি জব্দ তালিকা তৈরির সময় মালামাল নিয়ে শুরু হয় পুলিশ সদস্য ও সোর্সদের হরিলুট। ফলে এ ঘটনায় গত ৪দিন ধরে খোদ পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট মহলে পরিলক্ষিত হচ্ছে নানা কানাঘুষা।
নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে গত শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ সোনারামপুর এলাকা থেকে ঢাকাগামী একটি কাভারভ্যান আটক করে থানার এস আই মাহবুব ও শাহীন। যার মধ্যে কসমেটিক্স, চকলেট ও বিস্কুটসহ চোরাই পথে আসা পঞ্চাশ লাখ টাকারও বেশী মূল্যের বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য ছিল। আটকের পর পুলিশ কাভারভ্যানটিকে থানায় না নিয়ে স্থানীয় উজানভাটি হাইওয়ে হোটেলের পিছনের গলির একটি গাড়ির গ্যারেজে রাখে। এরপর দুই এস আই মিলে গাড়ীর মালিকের সাথে দর কষাকষি করতে থাকেন। প্রথমে ১০ লক্ষ পরে পর্যায়ক্রমে ৩ লক্ষ টাকা উৎকোচের বিনিময়ে গাড়িটি সেতু পার করে দেয়ার চুক্তি করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর টোলপ্লাজা পুলিশের কথিত সোর্স জসীম উদ্দিন এতে মধ্যস্থতা করেন। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে সোর্স জসীমকে সামনে বসিয়ে কাভারভ্যানটি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে মহাসড়কে উঠতেই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিকল হয়ে যায়। এরই মধ্যে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। এসময় একজন সংবাদকর্মী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পুলিশ জানায়, গাড়িটি নষ্ট হয়ে গেছে তাই সহযোগিতা করা হচ্ছে। গাড়িতে কুরিয়ারের সার্ভিসের মাল রয়েছে বলে এস আই মাহবুব ও শাহীন তখন সাংবাদিকদের জানান। পরে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ভারতীয় মালামালসহ কাভারভ্যানটি জব্দ করা হয়। এসময় গাড়িতে থাকা মোঃ আল আমিন (৩০) ও মোঃ জাকির হোসেন (৩৫) নামে দুজনকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় আশুগঞ্জ থানার এসআই মোঃ ওমর ফারুক বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেন।
আটকরা তাৎক্ষণিকভাবে সাংবাদিকদের জানান, তাদের গাড়িতে পঞ্চাশ লক্ষ টাকারও বেশী মালামাল ছিল। জব্দ তালিকা তৈরির সময় মালামাল নিয়ে পুলিশ সদস্যসহ অনেকেই হরিলুট শুরু করে দেয়।
কথিত সোর্সের মাধ্যমে এসআই মাহবুবের সাথে কাভারভ্যানটিকে মালামালসহ ছাড়িয়ে নিতে যোগাযোগ করছিলেন নরসিংদী জেলার হাসু ও আবীর নামে দুই ব্যক্তি। তারা জানান, অনেক দর কষাকষির পর তারা তিন লক্ষ টাকায় গাড়িটি সৈয়দ নজুরুল ইসলাম সেতু পার করে দেয়ার চুক্তি করেন এবং সে অনুযায়ী এসআই মাহবুবকে টাকাও প্রদান করেছিলেন। তিনি এ উৎকোচের টাকাও ফেরত দেননি। হাসু ও আবীর আরো জানান, তাদের গাড়িতে পঞ্চাশ লক্ষ টাকারও বেশী মালামাল ছিল। কিন্তুমাত্র বিশ লক্ষ টাকার মালামাল জব্দ দেখিয়ে পুলিশ বাকী মাল আত্মসাৎ করেছে।
তবে এসআই মাহবুব এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি জব্দ তালিকা করিনি। এছাড়া আমি এ মামলার বাদীও নয়, তদন্তকারী অফিসারও নয়। কিন্তু মামলার বাদী আশুগঞ্জ থানার এসআই মোঃ ওমর ফারুক বলেন, জব্দ তালিকায় আন্দাজ করে মূল্য লিখা হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে আগে থেকে কিছুই জানিনা। সারাদিন নাটক করে রাতে আমাকে বাদী করা হয়েছে।
এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে এধরনের একাধিক অভিযোগ রয়েছে আশুগঞ্জ থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। গত কয়েক মাসে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ টোল প্লাজা এলাকায় অবৈধ মালমালের গাড়ি থেকে পুলিশী বাণিজ্য বেড়ে গিয়েছে। প্রতিদিন ৩-৪ টা মাদক মামলা হত সেখানে বর্তমানে মাসে ৩-৪ টা মামলাও হচ্ছেনা বলে জানা গেছে। পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করছে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী জসীম। প্রকাশ্যে আশুগঞ্জ টোল প্লাজায় কথিত সোর্স জসীম নিয়মিত গাড়িতে তল্লাশী চালাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে তিনিই জেলার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের চালানগুলি পাস করতে সহযোগিতা করেন।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাহিদ আহাম্মেদ বলেন, পুলিশ কাভারভ্যানটি আটক করে সকলের উপস্থিতিতে জব্দ তালিকা তৈরি করেছে। এরপরও কোন প্রকার অনিয়ম প্রমানিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।