খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সময়ের প্রয়োজনে ও জনগণের চাহিদার প্রেক্ষিতে কাউতলী ব্রীজের পাশে সড়ক ও জনপদের জায়গার উপর গড়ে উঠে বাজারটি। পরে নতুন ব্রীজ হলে সংকুচিত হয়ে পড়ে বাজার। এই অবস্থায় ব্যক্তি মালিকানার জায়গা ভরাট করে বাজারের আয়তন বাড়ানো হয়। বর্তমানে খুচরার পাশাপাশি পাইকারী ব্যবসার প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি কাউতলী বাজারে আভ্যন্তনীর নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ জেটি স্থাপন করলে বাজারের ভেতর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের প্রয়োজন পড়ে। ফলে সড়ক ও জনপদের জায়গা আরো সংকুচিত হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় বাজারের সরকারি জায়গায় বানানো অস্থায়ী দোকান ঘরগুলো ছোট করে তা ব্যবসায়ীদের বরাদ্ধ দেয়া হয়। সেখানে বশির মিয়া ও আনসর আলীকে একটি দোকান বরাদ্ধ দেয়া হয়। তারা এটি অর্ধেক করে ব্যবসা শুরু করেন। এ অবস্থায় বশির তার ছোট ভাই মোস্তাককেও ব্যবসায় যুক্ত করেন। একপর্যায়ে মোস্তাক তাদের অর্ধেক অংশের দোকান আনসর আলীর কাছে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে। টাকা নিলেও দোকান বুঝিয়ে দেয়নি বশির মিয়া ও তার ভাই। এমনকি দোকান তালাবদ্ধ করে রাখায় আনসর আলী দোকানে বসে আর ব্যবসা করতে পারেনি। ফলে আনসর আলী কাউতলী বাজারে খোলা আকাশের নিচে হকারি শুরু করেন। এ বিষয়ে স্থানীয় সাহেব সরদারদের জানায় অসহায় আনসর আলী। কাউতলী গ্রামের সাহেব সরদাররা এ বিষয়ে বশির মিয়া ও তার পরিবারের কাছে বারবার যোগাযোগ করেও কোনও কূল কিনারা করতে পারেনি। সবশেষ তারা কেনা অংশ বাদে আনসর আলীর নিজের অংশ ছেড়ে দিতে অনুরোধ করলেও বশির তা ছেড়ে দেয়নি। এ অবস্থায় স্থানীয় সাহেব সরদার ও বাজার সংশ্লিষ্টরা আনসর আলীর দোকান বুঝিয়ে দিতে গত ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই দোকানে যায়। বশির মিয়াকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সেখানে যাননি। তখন উপস্থিত লোকজন দোকানের বাইরে থাকা লোহার খাঁচা সরিয়ে রেখে আনসর আলীকে দোকানের অর্ধেক বুঝিয়ে দেয়। পরে লোকজন চলে গেলে ৭টার দিকে বশির মিয়া বাজারে গিয়ে জরুরি সহায়তা নাম্বার ৯৯৯ এ ফোন দেয়। সদর থানার উপ পরিদর্শক এস আই মুহাম্মদ মাজেদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যায়। সেদিন রাতেই আনসর আলী, তার ছেলে নুরুল আমিনসহ ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা সাহেব সরদারদের বিরুদ্ধে চুরি ও ভাংচুরের মামলা দায়ের করে বশির মিয়া। এতে বশির মিয়া, তার দোকানে থাকা সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা ও ১০০ মুরগি চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ করে। কিন্তু সে সময় বাজারে থাকা পার্শবর্তী দোকানদার এমনকি সিসিটিভি ফুটেজেও কোন মালামাল চুরি করতে দেখা যায়নি। তাহলে কেন এত দ্রুত কোন তদন্ত না করে মামলা এফআইআর করল পুলিশ? কেনইবা পরদিন বাজার থেকে বৃদ্ধ আনসব আলীকে গ্রেফতার করা হল এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরী।
এই বিষয়ে কাউতলী কাঁচা বাজার কমিটির সেক্রেটারি লিটন মিয়া জানান, এ ঘটনায় বাজারে উত্তেজনা বিরাজ করছে। একটা মামলা হয়ে গেলো আমরা কিছুই জানিনা। মামলাটা ভালোভাবে তদন্ত করে নেওয়া উচিত ছিলো পুলিশের।
এ বিষয়ে বাজার কমিটির সভাপতি আনিস মিয়া বলেন, এ ঘটনার পরের দিন বাজার কমিটি সবাই থানায় গিয়ে ওসি সাহেবের সাথে কথা বললে তিনি বলেন-‘মামলা হয়ে গেছে, এখন আমার কিছুই করার নেই, আপনারা আর একটা মামলা করে দেন এদের বিরুদ্ধে।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান বলেন, সেদিন বাজার কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও এলাকার পঞ্চায়েত কমিটির গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং বাজারের ব্যবসায়ীদের অনুরোধে আমি বাজারে এসে সবার উপস্থিতিতে আনসব আলীর বৈধ দোকানের জোরপূর্বক বশিরের দখলকৃত অংশে অবৈধভাবে রাখা মোরগের খাঁচা সরানো হয়। পরে শুনতে পেলাম, জোরপূর্বক দখলকারী বশির মামলা দায়ের করেছে। এই মামলায় মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাকে আসামী করা হয়েছে। আমি এই মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন মামলার সঠিক তদন্ত করে দোষীদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
এই বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ মাজেদুল ইসলামের কাছে জানতে ২নং পুলিশ ফাঁড়িতে গেলে ফাঁড়ির ইনচার্জ হুমায়ূন কবিরের নির্দেশে তিনি বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। ফাঁড়ি ইনচার্জ হুমায়ূন কবির নিজেও কোন বক্তব্য দেননি।