ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক সকলের জীবন। আগামীকাল বুধবার মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরব সহ বিভিন্ন দেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে। আর একদিন পরে বাংলাদেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আযহা।
মুসলমানের দুই ঈদ ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহা। রমজানের পর ঈদ-উল-ফিতর হয় এবং জিলহজ্জ মাসে হজের সময় হয় ঈদ-উল-আজহা। যাকে বাংলার গ্রামে বলা হয় ‘কুরবানি’। আরবি ‘কুরবান’ শব্দটি ফারসি বা উর্দুতে ‘কুরবানি’ রূপে পরিচিত হয়েছে, যার অর্থ ‘নৈকট্য’। মানুষ আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানি দেয়।
নবী ইব্রাহিম আল্লাহ-কে কতটা ভালবাসেন তার একটা পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আল্লাহতালা। আল্লাহ স্বপ্নে ইব্রাহিমকে বললেন- তোমার সব চাইতে প্রিয় জিনিসটি আমাকে উৎসর্গ করো। পর পর তিন রাত ইব্রাহিম একই স্বপ্ন দেখলেন। এমন স্বপ্নসমূহ দেখবার পর তিনি চিন্তা করতে লাগলেন তাঁর সব চাইতে প্রিয় জিনিস কী হতে পারে! তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস তাঁরই পুত্র ইসমাইল। ফলে ইব্রাহিম তাঁর সন্তান ইসমাইলকে আল্লাহর নামে কুরবানি দিতে উদ্যত হলেন। কোরবানি দেওয়ার পর দেখা গেল ইসমাইলের জায়গায় একটা দুম্বা (মতান্তরে ছাগল) কুরবানি হয়ে পড়ে আছে। এর পর থেকে ইব্রাহিমের অনুসারীরা এই ঘটনার স্মরণে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য চান্দ্র মাসের উক্ত দিনে পশু কুরবানি দেওয়া চালু করেন।
এখন প্রশ্ন হলো :১.
কুরবানি কি বাধ্যতামুলক ? এ বিষয়ে মুসলিমদের মাঝে দু‘টো মত রয়েছে। কেউ কেউ এটাকে বাধ্যতামুলক মনে করেন [ ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কুরবানি কর ।’ – সূরা কাওসার ] তবে অনেকের সুর ভিন্ন [‘তোমাদের মাঝে যে কুরবানি করতে চায়, জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর সে যেন কুরবানি সম্পন্ন করার আগে তার কোন চুল ও নাখ না কাটে।’ (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ১৯৭৭)।] তাঁদের যুক্তি ‘যে কুরবানি করতে চায়’ কথা দ্বারা বুঝা যায় এটা ওয়াজিব (বাধ্যতামুলক) নয়।
২.কুরবানির সময় সারা দুনিয়ার মুসলমানদের মধ্যে (সৎ বা অসৎ যে কোন ভাবে উপার্জিত পয়সায়) পশু যোগাড়ের ধূম পড়ে যায়। প্রতিযোগিতা চলে কে কত বেশি দামের পশু কুরবানি দেবে। মাঝে মধ্যে এটা নিয়ে পত্রিকায়ও কিছু কিছু খবর প্রকাশ করা হয়। কেউ আবার উট বা দুম্বা কুরবানি দেয়। উট হলো আরব দেশের জন্তু। ইসলামের জন্মও আরব দেশে। তাই কেউ কেউ মনে করতে পারেন যে- উট কুরবানিতে বেশি নেকি (পুণ্য)।
যদিও পশু কুরবানির একটা আলাদা গুরুত্ব আছে, বিশেষকরে আর্থিকভাবে গরীব মানুষদের কাছে। তবু আমার মনে হয় আত্মত্যাগই সব চেয়ে বড় কুরবানি।
ঈদুল আযহায় ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক সকলের জীবন। সবাইকে আবারো ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।