নিউজ ডেস্ক : আমেনা বেগম (১১০)। শতবর্ষী এই বৃদ্ধার একসময় পরিপূর্ণ সংসার ছিল। স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখেই কাটছিল দিন। কন্যাসন্তান জন্মানোর পর আমেনা বেগমের কোলজুড়ে ছেলেসন্তান জন্ম নেওয়ায় পরিবারে সুখের বন্যা বইছিল। কিন্তু জীবনসায়াহ্নে এসে কষ্টের সীমা নেই এই বৃদ্ধার। ছেলের বিশাল অট্টালিকায় ঠাঁই হয়নি আমেনা খাতুনের।
তবে ফেলতে পারেননি নাতনি রমেছা খাতুন। শতবর্ষী আমেনা খাতুনের দিনরাত কাটে ঘরের বাইরের পলিথিনে ঘেরা একটি চিলেকোঠায়। সেখানে নেই কোনো চৌকি। নেই বিছানা বা বালিশ!
অথচ চাটমোহর উপজেলার চর এনায়েতপুর গ্রামের আমেনা খাতুনের একমাত্র ছেলে পার্শ্ববর্তী নাটোর জেলার চাচকৈড় বাজারে শ্বশুরবাড়ি এলাকায় বিশাল অট্টালিকায় বসবাস করেন। পেশায় ওষুধ ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালেব দীর্ঘ ১০ বছরেরও অধিক সময় মায়ের কোনো খোঁজ রাখেন না। এমনকি মায়ের মুখ পর্যন্ত দেখেননি!
বিষয়টি এলাকাবাসী ভালো চোখে দেখেননি। ছেলে মোতালেবের এহেন কর্মকাণ্ডের বিচার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শহীদুল্লাহ এস স্কয়ার নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে এর প্রতিবাদ জানিয়ে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। ফেসবুকের সেই পোস্টটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। চারিদিকে বইতে থাকে নিন্দার ঝড়।
রোববার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাটির মেঝেতে জরাজীর্ণ শরীর নিয়ে শুয়ে আছেন শতবর্ষী বৃদ্ধা আমেনা খাতুন। উঠোনের এক কোণে পলিথিনে ঘেরা চিলেকোঠায় রাতযাপন করে থাকেন তিনি। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়লেও এখনো চোখে দেখেন স্পষ্ট। বলতে পারেন কথা। কানে শোনেন স্বাভাবিক মানুষের মতোই। বারান্দায় শুয়ে থেকে একমাত্র ছেলেকে একনজর দেখার জন্য আহাজারি করছেন এই বৃদ্ধা। লোক মাধ্যমে মায়ের চিৎকার ছেলের কান পর্যন্ত পৌঁছালেও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই ছেলে মোতালেব হোসেনের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী আমেনা খাতুন। মেয়ে হাজেরা খাতুনকে বিয়ে দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই মারা যান। তবে রেখে যান ছয় মাস বয়সি কন্যাসন্তান রমেছা খাতুনকে। নানা-নানির কাছেই বড় হতে থাকে নাতনি রমেছা খাতুন। এদিকে রমেছা খাতুন বড় হওয়ার পর তার নামে নানা ওসমান মোল্লা ১০ শতক জায়গা রেজিস্ট্রি করে দেন। এতেই বাধে বিপত্তি! এই দশ শতক জায়গা ভাগনিকে দেওয়ায় বাবার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ছেলে মোতালেব হোসেন চাচকৈড় এলাকায় বিয়ে করে সেখানেই বসবাস শুরু করেন।
ওষুধের ব্যবসা করে এখন মোতালেব বিপুল সম্পদের মালিক। এর মধ্যে প্রায় ১০ বছর আগে মারা যান আমেনা খাতুনের স্বামী ওসমান মোল্লা। বাবার জানাজা নামাজ পড়েই মাকে ফেলে রেখে নিজ কর্মস্থলে চলে যান আব্দুল মোতালেব। সেই যাওয়াই শেষ যাওয়া! একা হয়ে পড়েন আমেনা খাতুন।
ছেলে ফেলে গেলেও ফেলতে পারেননি নাতনি রমেছা খাতুন। একই উপজেলার ছাইকোলা কানাইয়েরচর গ্রামে নাতনি রমেছা খাতুনের কাছে ঠাঁই হয় শতবর্ষী আমেনা খাতুনের।
রোববার বিকালে রমেছা খাতুনের কাছে ছেলের এমন কর্মকাণ্ডের কোনো প্রতিকার চান কিনা এমন কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন- না, কিছুই চাই না আমি। আমার ছেলে ভালো থাকুক। সুখে থাকুক।
সোমবার সকালে এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে মোতালেব হোসেনের মোবাইলে কল দিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পারিবারিক অনেক বিষয় আছে যার কারণে আমি বাড়িতে যাই না। আমি অন্যের বাড়িতে (শ্বশুরবাড়িতে) থাকি। যারা আমার মায়ের দায়িত্ব নিয়েছেন; তারা কেন মাকে (আমেনা খাতুন) এমন করে রাখেন, তাদের জিজ্ঞেস করুন।
মায়ের সাথে এমন আচরণ করতে পারেন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাহলে আমার কী করা উচিত বলে দেন।
নাতনি রমেছা খাতুন বলেন, নানা আমার নামে ১০ শতক জমি লিখে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই জমি তো আমার মামা (মোতালেব) দখল দেননি। কিন্তু তাই বলে, মায়ের মুখ দেখতে আসবে না? কোনো খোঁজ রাখবে না? এটা কোন ধরনের মানসিকতা?
ছাইকোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নূরু বলেন, বিষয়টি জানা নেই। তবে এমন ঘটনা সত্যিই অমানবিক। কোনো সন্তান তার মাকে এভাবে অবহেলা করতে পারে না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। (যুগান্তর)