মো. রুহুল আমিন,বিশেষ প্রতিবেদক : আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও উদযাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
এই দিবস পালন উপলক্ষে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৮ মার্চ (বুধবার) বেলা সাড়ে এগারটায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস’২০২৩ উপলক্ষে উপজেলা প্রাঙ্গনে শোভাযাত্রা শেষে উপজেলা অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, সাবেক সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার’২০১৯ প্রাপ্ত, চাঁদপুর (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) -৫ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম।
উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, শাহরাস্তি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ন রশিদ। উক্ত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, সহকারী প্রোগ্রামার মোঃ শাহজাহান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কামরুন্নাহার (কাজল)। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাকসুদা আক্তার।
উক্ত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তা প্রাপ্ত উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসডিএফ ৫ নং খিলাবাজার কাস্টারের কর্মকর্তা বিমল গোলদার।
বক্তরা বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী আর এই নারীদের বাদ দিয়ে কোন পরিবারের, সমাজের বা দেশের উন্নয়ন আদৌ সম্ভব নয়। তাই দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক সেই নারীদের শ্রম ও মেধাকে কাজে লাগাতে হবে। আর নারী ক্ষমতায়নের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তি, নারীরা অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি পেলে তারা এমনিতেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।
অনুষ্ঠানে উপজেলার বিভিন্ন নারী সংগঠনের প্রতিনিধি সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নারী শিক্ষার্থীগন উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আন্তর্জাতিক নারী দিবস ( পূর্বনাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস) প্রতি বছর মার্চ মাসের ৮ তারিখে পালিত হয়।সারা বিশ্বব্যাপী নারীরা একটি প্রধান উপলক্ষ্য হিসেবে এই দিবস উদ্যাপন করে থাকেন। বিশ্বের এক এক প্রান্তে নারীদিবস উদ্যাপনের প্রধান লক্ষ্য এক এক প্রকার হয়। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদ্যাপনের মুখ্য বিষয় হয়, আবার কোথাও মহিলাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠাকে বেশি গুরুত্ব দেয়।
দিবসটি উদ্যাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস। ১৮৫৭ সালে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকারি বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ, যিনি জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদেরও একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ঐ সম্মেলনে ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি যোগদেন। ঐ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব রাখেন। সিদ্ধান্ত হয় ১৯১১ সাল থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রী রাজনৈনিত দল ও ব্যক্তিরা। ১৯১৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে শুরু হয়। বাংলাদেশেও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালন করতে শুরু করে। অতঃপর ১৯৭৫ সালের ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানান রাষ্ট্রসংঘ। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে এই দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে। সারা বিশ্বের সকল দেশে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। তন্মধ্যে আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, কিউবা, জর্জিয়া, গিনি-বিসাউ, ইরিত্রিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, লাওস, মলদোভা, মঙ্গোলিয়া, মন্টেনিগ্রো, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উগান্ডা, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম এবং জাম্বিয়া।
এছাড়া, চীন, মেসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার, নেপালে শুধুমাত্র নারীরাই সরকারি ছুটির দিনভোগ করে থাকে।