মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃতিসন্তান, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ কালজয়ী উপন্যাসের রচিয়তা, অমর কথাসাহিত্যিক, অদ্বৈত মল্লবর্মণ এর জন্মভিটায় উদ্বোধন করা হয় বহুল প্রত্যাশিত ‘অদ্বৈত মল্লবর্মণ স্মৃতি গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্র। এ উপলক্ষ্যে গতকাল ২০ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার বিকেলে অদ্বৈত জন্মভিটা, পৌর এলাকার গোকর্ণঘাট এর ল ঘাট সংলগ্ন বট তলায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ঐতিহাসিক এই কার্যক্রমটির পরিকল্পনা, উদ্যোগ গ্রহণ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার মো. আ. কুদ্দূস। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, অদ্বৈত মল্লবর্মণ এর সাহিত্যপাঠ ও জীবনী পড়ে আমি ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত হই। কয়েকমাস আগে একটি সাহিত্য আড্ডায় তার নামে একটি স্মৃতি গ্রন্থাগার করার ইচ্ছা কথা প্রকাশ করলে উপস্থিত সুধীজন তাতে ব্যাপক সমর্থন দেন। ফলে এটি প্রতিষ্ঠায় আমি উদ্যোগী হই। একটি গঠনতন্ত্র ও সুনির্দিষ্ট কাঠামোর মাধ্যমে এই গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্রটির বাস্তবিক রূপ প্রদান করা হবে। স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণসহ একটি গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্রে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার পর্যায়ক্রমে সবকিছুই এতে সংযোজন করা হবে। এই রাস্তাটির নামও অদ্বৈতর নামে নামকরণ করা হবে।
বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে এই গবেষণা কেন্দ্র ও তিতাস নদীকে কেন্দ্র করে একটি দর্শনীয় স্পট এখানে তৈরী করা হবে। দেশে-বিদেশের ভ্রমণ পিপাসু ও সাহিত্যপ্রেমী লোকজন এখানে আসবে। এমন একটি ব্যবস্থাপনা তৈরী করা হবে, যাতে আমি না থাকলেও ভবিষ্যতে এটির কার্যক্রম সঠিকভাবে চলতে থাকবে। তিনি অদ্বৈতর নামে একটি প্রশিক্ষণ স্কুল প্রতিষ্ঠার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বক্তব্যে তিনি এই গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করার জন্য পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবিরসহ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাবেক ও বর্তমান কাউন্সিলর, এলাকাবাসী ও জেলার সাহিত্য-সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতি ধন্যবাদ জানান।
সাহিত্য একাডেমির সভাপতি, কবি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক জয়দুল হোসেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ৬নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ ফারুক মিয়া, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কাউছার আহমেদ, সাবেক কাউন্সিলর আলহাজ্ব মোঃ ফেরদৌস মিয়া। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন গোর্কণঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, রম্য লেখক পরিমল ভৌমিক।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মুজিবুর রহমান, এসএম আলম, মোখলেছুর রহমান, সুমন দত্ত, এড. হুমায়ন কবির ভূঞা, ডা. মু. আব্দুল মতিন, মোঃ হিরন মিয়া, কবি ও কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন, কবি ও কথাসাহিত্যিক এড. মানিক রতন শর্মা, কবি এম.এ হানিফ, কবি ও গীতিকার মোঃ আব্দুর রহিম, কবি ও গল্পকার শিরিন আক্তার, নদী ও পরিবেশ কর্মী শামীম আহমেদ, নিহার রঞ্জন সরকার, সাংবাদিক এম এ মতিন শানু, কবি রোকেয়া রহমান, কবি রুদ্র মোঃ ইদ্রিস, মোঃ ফারুক আহমেদ ভুইয়া, খালেদা মুন্নি।
সাহিত্য-সংস্কৃতিকর্মী মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ এর উপস্থাপনায় সভায় অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কবি হুমায়ুন কবির, কবি রিপন দেব নাথ, সঙ্গীত শিল্পী জয়নাল আবেদিন, মোঃ আব্দুল হেকিম, আব্দুল হান্নান, মোঃ আমির ফারুক, সুশান্ত পাল, মোশাররফ হোসেন, গিয়াস উদ্দিন, ওমর ফারুক মেহরুন নেছা মিতুলী,ও অদ্বৈতর নাতি নির্মল মল্লবর্মণ প্রমুখ।
সভায় এলাকাবাসী বলেন, আমাদের এই কৃতিসন্তান অদ্বৈত, শুধু গোকর্ণঘাট নয়, পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়া এমনকি পুরো বাংলাদেশের একটি সম্পদ। তাঁর স্মৃতি ধারণ করতে এখানে যে গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, তাতে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। নানান সময় অদ্বৈতের জন্মভিটা দেখতে দেশ-বিদেশের অনেক জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিগণ এখানে আসেন। কিন্তু আমরা তাদের উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু দেখাতে পারি না। এই পাঠাগার ও গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হলে খুব সহজেই তারা অদ্বৈত সম্পর্কে অনেক বেশী জানতে পারবে।
সভায় সাহিত্য-সংস্কৃতির ব্যক্তিবর্গ বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃতিসন্তান অদ্বৈতকে নিয়ে ত্রিপুরা, আসাম, কলকাতাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানান গবেষণা হয়। তাঁর রচিত বই বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে, সিনেমা তৈরী হয়েছে। সেই তুলনায় তার জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিনি দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য-সংস্কৃতিকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবী ছিল অদ্বৈত নিয়ে কিছু করার। সাহিত্য-সংস্কৃতিকর্মীদের সেসব দাবি পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হয়েছে, হচ্ছে। অদ্বৈত আবক্ষ মূর্তি স্থাপন, অদ্বৈত মেলা আয়োজনসহ বিভিন্ন সাহিত্য-সংস্কৃতির অনুষ্ঠানে অদ্বৈতর বিষয়টি বারবার উপস্থাপিত হয়েছে। বাকী ছিলো অদ্বৈত স্মৃতি ধারণ করা একটি গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্রর, আজকে এই গ্রন্থাগার এবং গবেষণা কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে সেটিও বাস্তবায়িত হলো। এটি একটি ঐতিহাসিক কাজের সূচনা। এর মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অদ্বৈত গবেষণায় এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো।
বক্তারা এই পরিকল্পনা, উদ্যোগ গ্রহণ করায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আ. কুদ্দূসকে জেলাবাসীর পক্ষে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, অদ্বৈত গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনিও ঋত্বিক ঘটক, অধ্যাপক শান্তনু কায়সার, আসাদ চৌধুরী, সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল মান্নান এর মত মো. আ. কুদদূসও আজীবন ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
উল্লেখ্য বর্তমানে অস্থায়ীভাবে একটি ঘরে গ্রন্থাগার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণসহ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। এই গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্র বাস্তবায়ন ও পরিচালনা করবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা। অনুষ্ঠানে মো. আ. কুদ্দূস এর সম্পাদনায় প্রকাশিত শরৎ সাময়িকী ‘তিতাসের তীরে কাশফুলের ভিড়ে’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।