রোহিঙ্গা সংকট প্রত্যাবাসন কতোদূর -জাকারিয়া জাকির

জনতার কন্ঠ, 7 October 2022, 263 বার পড়া হয়েছে,
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গাদের সেই যাত্রার পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ অগস্ট থেকে কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে ওই এলাকার ক্যাম্পে বসবাস করছিল আরো চার লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে প্রায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে।
পাঁচ বছর হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে পারেনি বাংলাদেশ। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে তাদের বসবাস। এর বাহিরে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য রোহিঙ্গা শরাণার্থী। কিছু সংখ্যক ভাসানচরে পাঠানো হলেও অনেকেই পালিয়ে এসেছে।

বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কবে তাদের দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসিত হবে-এ প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ নয়। তবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, সহসাই তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে না। বাংলাদেশ গত পাঁচ বছরের অধিককাল থেকে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

সংকটটি জাতিসংঘেও উত্থাপিত হয়ে এ বিষয়ে যথেষ্ট আলাপ-আলোচনা হয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতেও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মামলা হয়েছে। কিন্তু এসব সত্ত্বেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এই যখন বাস্তবতা, তখন আরাকান আর্মির এক ঘোষণা সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে। আরাকান আর্মি তাদের ওয়েবসাইটে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে অর্থাৎ রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবর্তন করতে হলে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকারকে তাদের সঙ্গে (আরাকান আর্মি) আলোচনা করতে হবে। এর বাইরে কোনো প্রত্যাবাসন হবে না।

অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের এখন স্বদেশে ফেরত যেতে হলে শুধু মিয়ানমার সরকার নয়, আরাকান আর্মিরও সদিচ্ছা প্রয়োজন হবে। সন্দেহ নেই, সংকট দূর হওয়া পরের কথা, সংকট আরও বেড়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, রাখাইন রাজ্য এখন আরাকান আর্মির প্রায় দখলে চলে এসেছে। ফলে তাদের অমতের বাইরে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা আরও কঠিন হয়ে পড়ল।

এ বিষয়ে রোহিঙ্গা নেতা হামিদ হোসেন বলেছেন, মিয়ামার যেমন রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করছে না, তেমনি আরাকান আর্মিও তাদের গ্রহণ করবে না। এতে রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘস্থায়ী ও কঠিন হয়ে পড়বে।

আরাকান আর্মির ঘোষণার পর নতুন এ সংকট বাংলাদেশ কীভাবে মোকাবিলা করবে, তা এক বড় প্রশ্ন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি জাতিসংঘসহ বিশ্বনেতাদের কাছে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য জোরালো দাবি জানিয়েছেন। আমাদের কথা হলো, জাতিসংঘ ও বিশ্বনেতাদের কাছে এর আগেও বহুবার জোরালো দাবি জানানো হয়েছিল।

কিন্তু ফলাফল একেবারে শূন্যের কোঠায়। সত্য হচ্ছে, বিশ্বনেতারা মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছে না। সবাই শুধু আশার বাণী শুনিয়েছেন। এটা প্রায় অবিশ্বাস্য যে, মিয়ানমার সরকার লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, মিয়ানমারের অভ্যন্তরেও বিভিন্ন ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে, অথচ বিশ্ব সম্প্রদায় বিষয়টির প্রতি একেবারেই উদাসীন!

বিশ্ব সভ্যতার এ এক বড় কলঙ্ক। এটা এখন বাংলাদেশের বড় নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার ভার দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর বহন করে যেতে হবে। এই নিয়তি খণ্ডাতে পারে যারা, তারা যতদিন কার্যকরভাবে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়াবে না, ততদিন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ইস্যুতে আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।