জীবনে সুখ আর এলো না বিজয়নগরের জসিম উদ্দিনের

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 6 October 2022, 90 বার পড়া হয়েছে,

ছোটবেলাতে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। বাধ্য হয়ে মায়ের সঙ্গে চরম অনটনে অনেক কষ্ট করে বেড়ে ওঠেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিঙ্গা গ্রামের জসিম উদ্দিন। পরিবারের সচ্ছলতা ফিরে আনা ও স্ত্রী-সন্তানদের মুখে হাসি ফোটানোই লক্ষ্য ছিল তার। আর এজন্য যোগ দিয়েছিলেন সেনাবাহিনীতে। মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকেই মধ্য আফ্রিকার মানুষের জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সানন্দে গিয়েছিলেন শান্তিরক্ষা মিশনে। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে যেন নিজের পরিবারকেই ডুবিয়ে দিয়ে গেলেন কান্নায়। অভাব-অনটনে বেড়ে ওঠা মানুষটির জীবনে যেন সুখ আর এলো না। বুধবার খাটিঙ্গা গ্রামে জসিম উদ্দিনের বাড়িতে গেলে স্বজনরা এসব কথা জানান।

জসিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলে ইকরাম (৬) ও ইমরান (৪) থেমে থেমেই কাঁদছে। বাবা নুরু মিয়া শোকে স্তব্ধ। স্ত্রী শারমিন আক্তার (২৫) অবুঝ দুই শিশু সন্তানদের নিয়ে এখন দিশেহারা। তার কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। জসিমের ভাবি জাহানারা বেগম বলেন, জসিমকে আমি ছোট থেকে সন্তানের মতো কোলে-পিঠে করে বড় করেছি। তার যখন আড়াই বছর তখন আমার এই বাড়িতে বিয়ে হয়। সেই থেকে তাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, খাওয়ানো, গোসল করানোসহ সবকিছুই নিজ সন্তানের মতো করেছি। সেও আমাকে মায়ের মতো সম্মান করত। কথাগুলো বলার সময় গুমরে কেঁদে ওঠেন তিনি।

এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরু মিয়ার ৬ ছেলেমেয়ের মধ্যে জসিম তৃতীয় ছিলেন। ৮ বছর আগে একই ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের আব্দুল জলিলের মেয়ে শারমিন আক্তারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

জসিমের বড় ভাই জুলহাস জানান, সিলেট ৬১ বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে ফোন করে জানানো হয় বোমা বিস্ফোরণে জসিম মারা গেছে। খুব দ্রুতই তার লাশ বাড়িতে পাঠানো হবে। তিনি আরও জানান, ১০ বছরের চাকরি জীবনের এই প্রথম গত ৯ মাস আগে শান্তিরক্ষা মিশনে আফ্রিকায় গিয়েছিল।

বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেন জসিমের লাশ দ্রুত দেশে আনা যায় সেজন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। তার পরিবারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হবে।