জামান বলেন, শুরুতে মূলত অন্যদের হামলা থেকে নিজেদের প্রটেক্ট করার জন্যই আমরা কয়েকজন বন্ধু একত্রিত হই। পরে বেশ বড় একটা গ্যাং তৈরি হয় আমাদের”।
পরে আমরা দেখলাম, এটা একটা ট্রেন্ড। সবাই গুন্ডামি করছে, গ্যাং বানাচ্ছে, তখন আমরাও শুরু করলাম। তখন রাজনৈতিক এক বড় ভাইয়ের অনুসারী হলাম আমরা। এক সময় ৫/৬ টা হোন্ডা নিয়ে একসঙ্গে মুভ করতাম। ধীরে ধীরে বেশ বড় একটা গ্যাং তৈরি হয় আমাদের। বলছিলেন জামান আহমেদ। তবে গ্যাং তৈরি হওয়ার পর খুব দ্রুতই অন্য এলাকার গ্রুপগুলোর সঙ্গে সংঘাত শুরু হয় বলে জানিয়েছেন জামান।
অনেক সময় তুচ্ছ কারণেও ঘটতো মারামারির ঘটনা। এক এলাকার ছেলে অন্য এলাকায় গেলে মারধরের ঘটনা ঘটতো। কাউকে গালি দিলে, ‘যথাযথ সম্মান’ না দেখালে, এমনকি বাঁকা চোখে তাকানোর কারণেও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। মেয়েলি বিষয় এবং সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব থেকেও অসংখ্য মারামারি হয়েছে বলে জানান জামান।
জামান আরো বলেন, আমাদের গ্যাংয়ে একসময় কয়েকটা আর্মস ক্যারি (অস্ত্র বহণ) করা শুরু করি আমরা। এসব দিয়ে মাঝে মধ্যে ফাঁকা ফায়ারিং করা হতো। তবে আমরা কাউকে গুলি করিনি কখনো।
আমাদের গ্যাংয়ের কয়েকজনের মধ্যে একটা সময় লোভ চলে আসে। গ্রুপটাকে কাজে লাগিয়ে টাকা আদায়ের ধান্দা শুরু করে কেউ কেউ। ছিনতাই শুরু হয়। আর মাদক নেয়া তো ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যায়।
দুয়েকজন বিভিন্ন অপরাধে জেলও খেটেছে। ফলে নিজেকে রক্ষায় নিজের তৈরি গ্যাং থেকে একসময় নিজেই বেরিয়ে আসেন বলে দাবি করেন জামান।
ব্রাহ্মনবাড়িয়া শহরের প্রায় সব এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। যার বর্তমান নাম “রাজনৈতিক বড় ভাইয়ের অনুসারী দল”।
যেমন, “কাউকে পরোয়া করেনা ট্যাংকের পাড়ের বখাটেরা“, নবীনগরে কিশোর গ্যাং: জন্মদিনে গাছে বেঁধে মাথায় ডিম, আটা, ময়লা, এছাড়াও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সরকার পাড়ার রিমন হত্যা।
তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সদর থানার ওসি জানিয়েছেন, কিশোর গ্যাংয়ের কোনো অস্তিত্ব এখনও খুঁজে পাননি তারা। কিন্তু দিন দিন বাড়ছে কিশোর অপরাধীদের সংখ্যা। তাই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করছেন তারা।
সদর থানা সূত্রে জানা গেছে,গত ২০১৯ সালে ৫০টি মামলায় ৬৮ জন কিশোরকে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ।এছাড়াও অপরাধের ধরন ও মাত্রা বিবেচনা করে তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় কিশোর অপরাধীর সংখ্যা দিন-দিন বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের পরিচয় ব্যবহার করেও অনেক কিশোর অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জরাচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধে জড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ শোভন বলেন, কিশোররা আবেগের তাড়নায় অপরাধের সাথে জরিয়ে পড়ছে, ছাত্রলীগ কখনো কোন অপরাধ বা অপরাধীকে সমর্থন করেনা।
সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, স্কুল পড়ুয়া কোন ছেলে ছাত্র সংগঠনের অংশ নয়। তাদের পরিবারকে সন্তানের ব্যপারে যত্নশীল হতে হবে।
স্থানীয়রা জানান, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা রাজনৈতিক নেতা এবং শহরের প্রভাবশালী পরিবারের বিধায় তাদেরকে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। তাদের দৌরাত্ম্য তাই দিন দিন বাড়ছে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুন নূর বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতায় আমরা আতঙ্কিত। কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে পুলিশের তৎপরতা আরও জোরদার করার দাবি জানান।