জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষ্যে কবির কলমের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু সংখ্যার মোড়ক উম্মোচন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 14 August 2022, 138 বার পড়া হয়েছে,

ইতিহাস তার নিজের প্রয়োজনেই বঙ্গবন্ধুকে সৃষ্টি করেছে এবং নিজের প্রয়োজনেই বঙ্গবন্ধুকে অমর করে রাখবে।” -কথাসাহিত্যিক রফিকুর রশীদ

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-চেতনার বাতিঘর” শীর্ষক স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কবি ও কবিতা বিষয়ক সংগঠন কবির কলমের আয়োজনে গতকাল ১৩ আগস্ট শনিবার সন্ধ্যায় জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের হলরুমে এই মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত, বরেণ্য কথাসাহিত্যিক রফিকুর রশীদ। মুখ্য আলোচক ছিলেন সাহিত্য একাডেমির সভাপতি, বিশিষ্ট কবি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক জয়দুল হোসেন। বিশেষ আলোচক ছিলেন জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার এর সহকারী পরিচালক জনাব মো. সাইফুল ইসলাম লিমন।

কবির কলমের প্রধান উপদেষ্ঠা, কবি ও কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা রতন কান্তি দত্ত, কবির কলমের অন্যতম উপদেষ্টা, রম্য লেখক ও উপন্যাসিক পরিমল ভৌমিক, তিতাস সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদের উপদেষ্ঠা, কবি ও গীতিকার মোঃ আব্দুর রহিম, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা ‘বঙ্গকথা’ এর সম্পাদক কবি এম এ হানিফ, সরাইল সাহিত্য ভূবন গণগ্রন্থাগারের সভাপতি কবি আবুল কাশেম তালুকদার, উদীচী জেলা শাখার সহ-সভাপতি ফারুক আহমেদ ভূঁইয়া, সাহিত্য একাডেমির সহ-সভাপতি কবি ও কথাসাহিত্যিক এড. মানিক রতন শর্মা, নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন নোঙরের জেলা কমিটির সভাপতি শামীম আহমেদ।

কবির কলমের সভাপতি মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ এর উপস্থাপনায় সভায় অনান্যের বক্তব্য রাখেন এ.এম. টিভি বাংলার বার্তা সম্পাদক কবি রুদ্র মোহাম্মদ ইদ্রিস, কবি শিরিন আক্তার, কবি অ্যাড মোঃ হুমায়ুন কবির, সাহিত্য একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মোঃ নুরুল আমিন, কবি ও কন্ঠশিল্পী শাহাদাত হোসেন সোহেল, কবি তোবারক হোসেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি কর্মকর্তা মোঃ আনিস ভূঁইয়া, সোনালী সকাল সংগঠনের সভাপতি কবি ফাহিম মুসতাসির, সাহিত্য একাডেমির সদস্য কবি রিপন দেব নাথ প্রমুখ। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কবির কলমের সিনিয়র সহ-সভাপতি কবি হুমায়ুন কবির।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে পরাজয়ের পর ইংরেজরা এবং তাদের এদেশীয় সহযোগীরা নবাব সিরাজউদ্দৌলার চরিত্রে অসংখ্য কালিমা লেপন করে তাকে ভিলেনে পরিণত করেছিল। কিন্তু দীর্ঘ দিন ব্রিটিশ শোষণ-বঞ্চনা শিকার হয়ে ভারতবর্ষের মানুষ যখন মুক্তি খুঁজছিল, মুক্তির নায়ক খুঁজছিল তখন ইতিহাস সিরাজউদ্দৌলার চরিত্র থেকে সকল কাঁদা সরিয়ে দিয়ে, সকল কালিমা মুছে দিয়ে তাকে বীরের আসনে, নায়কের চরিত্রে উপবিষ্ট করেছিল। তেমনিভাবে পাকিস্তানিদের দীর্ঘদিনের শোষণ-বঞ্চনার শিকার হওয়া বাঙালির মনে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা জাগিয়েছিলেন যে নেতা তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু নিজে নিজে তৈরি হয়ে যাননি। সময়ের প্রয়োজনে ইতিহাসই তাকে তৈরি করেছেন। তিনি ছিলেন জনগণের নেতা। তিনি বাঙালিদের এমন ভাবে ভালোবেসে ছিলেন, বাঙালিরা তাঁকে এমন ভাবে ভালোবেসে ছিলেন যে, তিনি বাঙালির হৃদয়ে একেবারে গেঁথে গিয়েছিলেন। আর তাই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তার শারিরিক উপস্থিতর প্রয়োজন হয়নি।

তিনি বলেন পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি হওয়ার পর ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার শপথ নেওয়ার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। অথচ তাঁর নামেই সরকার গঠন হয়েছে। তাঁর নামেই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়েছে। তাঁর নামেই দেশকে শত্রুমুক্ত করার শপথ নেওয়া হয়েছে। এবং তার দেয়া ৭ ই মার্চের ভাষণকে পুঁজি করেই লক্ষ লক্ষ মুক্তি সেনা দেশকে স্বাধীন করার জন্য জীবনবাজী রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শারীরিকভাবে উপস্থিত না থাকলেও আদর্শিকভাবে তিনি আমাদের বুকে এতটাই গেঁথে গিয়েছিলেন, আমাদের চেতনায় তিনি এমনভাবে মশাল জ্বালিয়েছেন যে, তিনি নাই এ কথা মনেও হয় নাই। তিনি থাকার প্রয়োজনই হয় নাই। বরং তিনি যে নাই এই কথাটি মনে হলে মনের মধ্যে আরও বেশি করে শক্তি সঞ্চয় করেছি, বেশি করে আগুন জ্বালিয়েছি হানাদারদের বদ করার জন্য।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট অত্যন্ত নির্মম নিষ্ঠুর ভাবে তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার বিচার বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। নবাব সিরাজউদ্দৌলার মত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের চরিত্রের উপরে কালিমা লেপন করার মাধ্যমে দুষ্ট চক্র যে ঘৃণিত কাজটি করতে চেয়েছিল তাদের সেই ষড়যন্ত্র অতীতেও সফল হয়নি ভবিষ্যতেও হবে না। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যদি কখনো কেউ তা করেও বসে তবে ইতিহাস তার নিজের প্রয়োজনেই বঙ্গবন্ধুকে বাঙালিদের কাছে চিরঅমর করে রাখবে। এই পৃথিবী, এই দেশ যতদিন থাকবে। পৃথিবীর বুকে বাঙালি যতদিন থাকবে, বঙ্গবন্ধু ততদিন বেঁচে থাকবেন। ইতিহাস তার নিজের প্রয়োজনেই বঙ্গবন্ধুকে সৃষ্টি করেছে এবং ইতিহাস তার নিজের প্রয়োজনেই বঙ্গবন্ধুকে অমর করে রাখবে। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, প্রকাশিত স্মরণিকার নাম “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-চেতনার বাতিঘর”একটি সার্থক নাম হয়েছে। কেননা বঙ্গবন্ধু বাঙালির চেতনার বাতিঘর ছিলেন, আছেন এবং চিরকাল থাকবেন।

উল্লেখ্য যে, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-চেতনার বাতিঘর” শীর্ষক ১১২ পৃষ্ঠার এই স্মরণিকাটিতে বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনীসহ বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত দুই বাংলার নবীন-প্রবীণ, জাতীয় ও স্থানীয় ৫৩ জন লেখকের ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ ও গল্প প্রকাশিত হয়েছে। এটি সম্পাদনা করেছেন কবির কলম প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ।