বাবা-মায়ের সঙ্গে দেশে প্রবেশের সময় বিএসএফের ধাওয়ায় ডুবে মারা যাওয়া নিখোঁজ দুই শিশুর লাশ ৩৬ ঘণ্টা পর নীলকমল নদ থেকে উদ্ধার করেছে ভারতীয় পুলিশ ও বিএসএফ।
রোববার দুপুর ১টার দিকে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধর্মপুর সীমান্তের আন্তর্জাতিক ৯৪৩ পিলারের জিরো লাইনের নীলকমল নদের দিগলাকুরা থেকে ভাই ও বোনের লাশ উদ্ধার করেছে তারা।
এ সময় নীলকমল নদের বাংলাদেশ-ভারত এর দুই ধারে বিজিবি বিএসএফের টহল জোরদার করা হয়। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নিহত শিশু ভাই-বোনের লাশ পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করবে কি করবে না, তা কেউই বলতে পারছে না।
বিজিবি জানিয়েছে, মৃত শিশু দুই ভাই-বোনের লাশ এক সপ্তাহ মর্গে রাখতে পারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তবে মৃত শিশুদের কাগজপত্র ও ছবি বিএসএফের কাছে দেওয়া হলে ফেরত নিয়ে আসার জন্য পরবর্তী আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা হবে।
শুক্রবার ভারতের দিল্লি থেকে পারভীন খাতুন (৮) ও সাকেবুল হাসান (৪) তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কুরবানি ঈদ পালন করার জন্য অবৈধপথে বাংলাদেশে ফিরছিল। এ সময় ভারতীয় দালালরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদের সীমান্তে নিয়ে এসে এক বাড়িতে রাখে। ওই দিন মধ্যরাতে আন্তর্জাতিক ৯৪৩নং মেইন পিলারের কাছ দিয়ে ফুলবাড়ী উপজেলার ধর্মপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার চেষ্টা করে দুই দেশের দালাল চক্র।
দালাল চক্র মা-বাবাসহ শিশুদের কাঁটাতার কেটে নীলকমল নদের তীরে নিয়ে আসে। এ সময় ডিউটিরত ভারতের শেউটি-১ ক্যাম্পের বিএসএফের সদস্যরা টর্চলাইট জ্বালিয়ে দেখার পর ধাওয়া করে। দালালরা তড়িঘড়ি করে নদ পার হওয়ার জন্য তাদের চাপপ্রয়োগ করে।
এ সময় মৃতের বাবা রহিচ উদ্দিন মালপত্র নিয়ে নদীর মধ্যখানে চলে যান। তখন দুই ভাইবোন মা ছামিনার কাছে থাকে। কিন্তু তারা কেউই সাঁতার না জানার কারণে স্রোতের টানে রাতের অন্ধকারে মায়ের হাত থেকে ছুটে গিয়ে নিখোঁজ হয় শিশু পারভিন ও সাকেবুল।
বিএসএফের ধাওয়ায় নদে ডুবে যাওয়া ভাই-বোনের লাশ রোববার সকাল বেলা নিখোঁজ স্থানের নদের পানিতে ভেসে উঠে। দুইশ গজ অদূরে তাদের লাশ স্থানীয়রা দেখে খবর দেয় বিজিবিকে। নদটি ভারতের ভূখণ্ডে হওয়ায় বিজিবি বিএসএফকে অবগত করে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে বিজিবি-বিএসএফের কড়া পাহারায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটা থানা পুলিশ ও বিএসএফ ভাই-বোনের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
মৃত ভাই-বোনের বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার পশ্চিম শুখাতী গ্রামে। তাদের বাবা রহিচ উদ্দিন। মায়ের নাম ছামিনা বেগম। তারা প্রায় ২২ বছর ভারতের হরিয়ানা ও রাজস্থান রাজ্যের সীমান্তবর্তী সুলতানপুরের অমিত সিংয়ের হাসিহেসা ইটভাটায় দিন মজুরির কাজ করছিলেন।
ওই সীমান্তে বসবাসকারী ইছাহক আলীর স্ত্রী রাবেয়া বেগম জানান, সকালে নদের পানিতে লাশ দুইটি পাশাপাশি ভাসতে দেখে শত শত লোকজন নদের দুই ধারে জড়ো হন। এ সময় বিজিবি খবর পেয়ে আমাদের ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য নিষেধ করে।
নেওয়াশী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মেছের জানান, মৃত শিশুরা আমাদের এলাকার। তাদের লাশ ভারত থেকে ফেরত নিয়ে আসার জন্য কাশিপুর বিজিবি ক্যাম্পে এসেছি। তারা জানিয়েছে, মৃতদের ও তার বাবা-মায়ের কাগজপত্র লাগবে।
লালমনিহাট ১৫ বিজিবি কাশিপুর কোম্পানি কমান্ডার কবির হোসেন জানান, নদীতে দুইটি লাশ ভাসছে এ নিয়ে বিএসএফকে অবগত করা হয়েছে। সে কারণে উভয়ের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে ভারতের ১৯২ বিএসএফের শেউটি-১ ক্যাম্পের বিএসএফের এসি এসএইচ শংকর কুমারসহ ৬ সদস্য দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তারা আরও জানিয়েছেন- মর্গে শিশুদের লাশ এক সপ্তাহ থাকবে। বাংলাদেশি কাগজপত্র পাওয়া গেলে মানবিক বিবেচনায় নেবেন।