মো. রেজাউল,ব্রাহ্মণবাড়িয়া : কখনো সিআইডি কখনো সাংবাদিক আবার কখনো বড় ব্যবসায়ী। এই পরিচয় দিয়ে তিনি আয় রোজগার করেন আর নিঃস্ব করেন সাধারণ মানুষকে। তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মামলা রয়েছে। তার নাম ইফরেখারুল ইসলাম নাইম (৩০), তিনি নরসিংদী জেলা সদরের বাগদী মার্কাজ মসজিদ এলাকার সফিকুল ইসলামের ছেলে। তবে তার মা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে দীর্ঘদিন যাবৎ নার্সের চাকরি করার সুবাধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাইম অতীতে বসবাস করেছেন। ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে তার বন্ধু-বান্ধব রয়েছে। আর এদের সহযোগীতায় নাইম এই প্রতারণা করে চলেছেন দিনের পর দিন। এছাড়াও নাইমের বিরুদ্ধে একাধিক বিয়ে করে রেখেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধান করে নাইমের বিরুদ্ধে হওয়া একটি মামলা থেকে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২২ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের জগৎসার (ভাদুঘর) গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের মেয়ে সুমিকে (কমলা) সিআইডি পরিচয়ে বিয়ে করেন নাইম। তখন পাঁচ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করা হয়। এছাড়াও চার লক্ষ টাকার স্বর্ণালঙ্কার ও আসবাবপত্র দিয়ে দেওয়া হয়। তারপরও নাইম যৌতুকের জন্য তার স্ত্রী সুমিকে মারধোর করতো। সবশেষ গত ১৪ জানুয়ারী নাইম তার শশুর বাড়িতে এসে তার স্ত্রী সুমিকে মারপিট করে মারাত্নক আহত করে। এরপরই স্বামী নাইমের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা করেন তিনি। বিয়ের দুই মাসের মাথায় এই ঘটনা ঘটে। মামলায় বাদি সুমি নাইমকে জুয়ারি ও নেশাখোর বলে উল্লেখ্য করেন।
এর আগে ২০২১ সালের ১৫ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিআইডির এসআই পরিচয় দিয়ে জনৈক এক ব্যক্তির (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) মোবাইল থেকে তার ব্যক্তিগত ভিডিও জোর করে নিয়ে তা ফাস করার ভয় দেখিয়ে চার লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। ওই ঘটনায় ওই ব্যক্তি ব্রাহ্মণবাড়িয়া চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ে করেন। ওই মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কাজীপাড়া এলাকার নুরু মিয়ার ছেলে সুমন নূরকে (ডিস সুমন) ২ নম্বর আসামী করেন। বলা হয়, সুমন নূরের সহযোগীতায় নাইম দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তবে এই ঘটনায় সুমন নূর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে এই ঘটনায় জরিত বলেও উল্লেখ্য করা হয়।
অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, তার একটি মোবাইল নম্বরে ফোন করলে ট্রু কলার এ্যাপে “ইন্সপেক্টর” নাম আসতো। এছাড়াও তার বন্ধু সুমন নূর তাকে সিআইডির সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবেই পরিচয় করিয়ে দিতো মানুষের কাছে। কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে ভূয়া সিআইডি নাইম ও সুমন নূরের মুখোমুখি হলে তারা সিআইডির কোন অফিসার নয় বলে জানান। তবে অনেক আগে সে ঢাকার সিআইডির কোন এক অফিসে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কাজ করতো বলে জানিয়েছে। তবে এর পক্ষে তিনি কোন প্রমান দিতে পারেনি। এসময় নাইম জানিয়েছে, এই ঘটনায় জনৈক ব্যক্তিকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা নেওয়ার জন্য সুমন নূর নাইমকে পরামর্শ দিয়েছিলো বলে জানিয়েছে নাইম। বর্তমানে ভূয়া সিআইডির মা রৌশনা বেগম ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নার্স হিসেবে নিয়োজিত আছেন বলে জানিয়েছে নাইম।