জুয়েল মিয়া,ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় দুই ছেলে ও ছেলের বউয়ের হাতে অমানবিক মারধরের শিকার হয়েছেন আশি বছরের বৃদ্ধা জাহানারা বেগম।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালের ঘটনায় সন্তানের হাতে মারধরের বিচার চেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন অসহায় ওই মা।
নির্যাতিত ওই মা জেলার বিজয়নগর উপজেলার সিংগারবিল ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের মৃত আব্দুল আউয়াল ভূইয়ার স্ত্রী।
সাংবাদিকদের সামনে দুই ছেলে এবং ছেলের বউয়ের নির্যাতনের কথা তুলে ধরে জাহানারা বেগম বলেন, আমার মেজো ছেলে জসিম উদ্দিন ( ৫০ ) এবং ছোট ছেলে শরীফ উদ্দিন ( ৪৫ )ও তার স্ত্রী আমেনা বেগম(৩৫) দীর্ঘদিন ধরেই আমাকে বিভিন্নভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে। আমার নিজের টাকায় ক্রয়কৃত একটি যায়গা আমার মেয়ের নামে দলিল করে দেয়।এজন্য তারা যায়গা নিতে আমাকে মারধর করে।
আমার বাড়ির সামনের ওই যায়গাটির লিচু বাগানে গেলে লোহার শাবল দিয়ে ডান পায়ের হাটুর উপর আঘাত করে। তারপর লোহার রড দিয়ে আমার মাথা ও ডান হাতে আঘাত করে । আমার চিৎকার শুনে আমার বড় ছেলে জহিরুল ইসলাম ও তার মেয়ে এগিয়ে আসলে তাদেরও প্রচণ্ড মারধর করে। তারা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। মা হয়ে দুই ছেলে ও বউয়ের নির্যাতন আর সইতে পারছি না।বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ করি। তবে থানায় অভিযোগ করলেও এখনো মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়নি। তারা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমিও আমার বড় ছেলের পরিবার বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
তিনি আরও বলেন, দুই বছর আগে আমার স্বামী মারা যান। তারা আমাদের খোঁজখবর নিতো না, ভরণপোষণ করতো না, চিকিৎসা খরচ ও দেয়না। দীর্ঘদিন ধরে এই দুই ছেলে ও ছেলের বউদের দ্বারা নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছি।আমার বড় ছেলে জহিরুল ইসলাম এখন আমার দেখাশোনা ও ভরণপোষণ করে।
জাহানারা খাতুনের বড় ছেলে জহিরুল ইসলাম বলেন, ছোট দুই ভাই ও তাদের স্ত্রী-সন্তানরা লিচু বাগানে ঢুকে আমার মাও মেয়েকে টেনে হিচড়ে নিয়ে মাটিতে ফেলে মারধর করে।তাদের চিৎকার শুনে এসে দেখি মা বেহুশ হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। পরে আমাকেও লাঠি দিয়ে পায়ে বারি মারে। এসময় তাদের সহযোগী বিল্লাল ও তার ছেলে তুষার, মোশাররফ সহ আরও কয়েকজন মিলে বাগান থেকে ২০-২৫হাজার লিচু ধ্বংস করে বস্তায় ভরে নিয়ে যায়।
এবিষয়ে অভিযুক্ত জসিম উদ্দিন বলেন, মাকে মারধর করিনি, এগুলো মিথ্যা অভিযোগ। যায়গা জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে।
এবিষয়ে সিংগারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মনির বলেন, জসিম ও শরীফরা সব সময় তাদের মা বাবাকে অত্যাচার করে। তাদের বাবা তাদের বোনের নামে জমি লিখে দিয়ে গেছে। সেই জমি তাদের লিখে দিতে মাকে মারধর করে। তাদের সেই বোন ও বাবা দুজনই মারা গেছে।মাকে মারধর করে, এসব অত্যাচার অবিচার যদি মার প্রতি করে এটা খুব খারাপ।
সিংগারবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান ভূইয়া বলেন, জসিমের মা তাদের অনেক লেখাপড়া শিখিয়েছে। তাদের পিতার বিরাট সম্পত্তি ছিল। শেষ পর্যায়ে জসিম ও শরীফ তার মা বাবাকে দেড় থেকে দুই বছর যাবৎ বাড়িতে থাকতে দেয় নি। তখন বড় মেয়ে তার স্বামীর বাড়িতে নিয়ে মা বাবার লালনপালন করেছে। তখন দাদা তার নাতি খালেদ সাইফুল্লাহ কে ১২শতক যায়গা লিখে দেয়। লিচু বাগানের সম্পূর্ণ যায়গাটা বড় মেয়েকে লিখে দিছিল মা। পরে ওই মেয়েটা ছয় মাস পর মারা যায় এবং বাবা ও মারা যায়। এখন তো যায়গাটা তার নাতিরা মালিক। মাকে এখন মারধর করে যায়গাটা ফিরিয়ে এনে দেওয়ার জন্য। মেয়ে মারা যাওয়ার পর বৃদ্ধার বড় ছেলে জহির এখন মাকে বাড়িতে এনে লালন পালন করে। কিছুদিন আগেও রমজানের সময় মাকে মারধর করে জসিম ও শিপনরা। গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখি জহিরের মাকে লিচু বাগানের একটা ছোট ঘরের পাশে ডেঙ্গা খেতের মধ্যে ফেলে রাখছে। বেহুশ অবস্থায় পড়ে রয়েছে তিনি। জহিরকে পায়ে বাইরাইছে তারা। তখন থানায় ফোন দিছি, দারোগা এসে তদন্ত করে গেছে। চেয়ারম্যান সাহেব ওসিকে কল দিয়ে অবগত করেছে। পরে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছে জসিমের মা।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার গিয়াস উদ্দিন বলেন, এটা তাদের ঘরোয়া ব্যাপার, বোনেরে মা যায়গা লিখে দিছে,এটা নিয়ে কয়েকটা মামলা মোকদ্দমা চলতাছে। খবর পেয়ে গিয়ে দেখি লিচু বাগানের বেড়া ভাঙ্গা। যারা আহত হয়েছে তাদের দেখে আসছি।
বিজয়নগর থানার এসআই পিযুশ বলেন, দুইপক্ষই থানায় অভিযোগ দিয়েছিল। পরে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। এর আগেরও অভিযোগ জমা আছে। জরুরী ডিউটি থাকায় আজ ব্যবস্থা নিতে পারিনি, আগামীকাল এটা দেখবো।