দুই সন্তানের জননী লাকি বেগমের (৩৬) সাথে মোবাইলে প্রেম হয় পুলিশ সদস্য জীবন মিয়ার (২২) সঙ্গে। লাকির বাড়ি নারায়ণগঞ্জ আর জীবনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলের বড়বুল্লা গ্রামের মাহফুজ মিয়ার ছেলে। প্রেমের টানে গত ৩রা মে বুধবার স্বামী সন্তানদের ফেলে লাকি ছুটে আসেন বড়বুল্লা গ্রামে। বিয়ে করেন জীবনকে। ৪ দিন পরই শনিবার রাতে লাকি মারা যান। এই ঘটনার পর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় জীবন ও তার পরিবার। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে।
পুলিশ, নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, ১৮ বছর আগে ঢাকার পোস্তগোলার আলম মার্কেট এলাকার মেহেদী হাসানের সঙ্গে বিয়ে হয় লাকির। লাকির রয়েছে মাইশা (১১) ও তায়েব (৪) নামের দু’টি সন্তান। পুলিশ কনস্টেবল জীবন মিয়া বর্তমানে সিলেটের জৈন্তাপুর থানায় কর্মরত আছেন। লাকির সঙ্গে জীবনের মোবাইল ফোনে পরিচয়ের পর প্রেম হয়। ঈদুল ফিতরে চারদিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন পুলিশ কন্সটেবল জীবন।
গত শুক্রবার ৬ মে বিকালে নারায়ণগঞ্জের পাগলা এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে দুই সন্তানকে বাবার বাড়িতে রেখে বাসা থেকে বের হয়ে আসেন লাকি। রাত ১০টা পর্যন্ত যখন ফিরেননি তখন চিন্তিত হয়ে পড়েন লাকি’র স্বামী মেহেদী। মেহেদী বিষয়টি তার সব স্বজনদের জানান। মুঠোফোনে স্বজনদের কথা হয় লাকির। স্বামীসহ স্বজনরা লাকিকে বাসায় ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু সে আর ফিরে যাননি।
গত শনিবার ৭ মে বিকাল ৫টায় লাকির সঙ্গে মুঠোফোনে সর্বশেষ কথা হয়েছে নতুন স্বামী জীবনের। শনিবার সন্ধ্যার পর অসুস্থ অবস্থায় লাকিকে ধরাধরি করে সরাইল হাসপাতালে নিয়ে যান জীবনের মা রেখা বেগম ও তার বোনেরা। সরাইল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাকির শারীরিক অবস্থা অবনতি দেখে কোন চিকিৎসা না করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নেয়ার পর লাকিকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
অন্য একটি সূত্র জানায়, ঈদুল ফিতরের পরদিন বড়বুল্লা গ্রামে আসেন লাকি। ওইদিন জীবনের সঙ্গে লাকির বিয়ে হয়। এরপর লাকি চলে যান। আবার গত শুক্রবার বড়বুল্লায় আসেন লাকি। শনিবার গভীর রাতে প্রেমিক জীবন লাকির স্বামীকে মুঠোফোনে জানিয়েছেন লাকি খুবই অসুস্থ। কোথায় আছে জানতে চাইলে মুঠোফোনেই মেহেদীকে বড়বুল্লা গ্রামে যাওয়ার ঠিকানা বলে দিয়েছে জীবন। এই সূত্র ধরেই রোববার সকালে সরাইলে আসেন নিহত লাকির স্বামী সহোদর ছোট ভাই রবিনসহ স্বজনরা।
রোববার ভোরে সরাইল থানা পুলিশ বড়বুল্লা গ্রামে জীবনদের বাড়ি থেকে লাকির লাশ উদ্ধার করেন। পরে সুরতহাল রিপোর্ট শেষে জিডি মূলে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছেন। অপরদিকে লাশ উদ্ধারের জন্য পুলিশ যাওয়ার আগেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে জীবন ও তার পরিবারের সদস্যরা।
লাকির আগের স্বামী মেহেদী হাসান বলেন, আমাদের দাম্পত্য জীবন খুবই সুখের ছিল। আমি একটা জব করি। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ভালোভাবেই চলছিল সংসার। হঠাৎ কীভাবে কি হয়ে গেল? কিছুই বুঝতে পারছি না।
সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসলাম হোসেন বলেন, তাদের মধ্যে বয়সের ব্যবধান অনেক। লাকি অনেক ফ্যাটি। স্বামী, দুই সন্তান, মাসহ সব স্বজন ছেড়ে গ্রাম এলাকায় এসেছে। মানসিক বড়ধরনের চাপে ছিল লাকি। শরীরে নির্যাতনের কোনো চিহ্ন নেই। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে স্ট্রোক করে থাকতে পারে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। -(সরোদ)