ইসলামে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় পদ্ধতি -এস এম শাহনূর

জনতার কন্ঠ, 3 May 2022, 284 বার পড়া হয়েছে,

ঈদের নামাজ পড়ার পর সবাই একে অপরকে অভিনন্দন জানাবেন। একে অপরকে নিজ বুকে টেনে নেবেন। এটাই স্বাভাবিক।ব্যক্তিগত জীবনে পৃথিবীর নানান দেশে বেশ কয়েকটি ঈদ উদযাপন করেছি।কিন্তু বাংলাদেশের মত উৎসব মুখর আর প্রাণের ছোয়া কোথাও দেখিনি।এখানকার অভিবাদন পদ্ধতিও মন কাড়ে।তাই তো ইসলামী বিধান মতে অভিবাদনের পর্যায়ক্রমিক সঠিক পদ্ধতি গুলো তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি।সেই সাথে মহান আল্লাহর নিকট সামর্থ্য কামনা করছি।”ইয়া কানাবুূুদু ওয়া ইয়া কানাস তাঈন”।সাথে সাথে আমার সকল বন্ধু,নিকটাত্মীয় ও মুসলিম জাতির প্রতি অগ্রিম ঈদের শুভেচ্ছাও জ্ঞাপন করছি।ঈদ মোবারক।

♦মুসলিম জাতির প্রাণের উৎসব হলো দুই ঈদ। ঈদে অভিবাদন বা শুভেচ্ছা বিনিময়েরও রয়েছে অনেক সুন্দর শিষ্টাচার। ইসলামের শিষ্টাচার অন্যান্য জাতি থেকে অনেক অর্থবহ, সমৃদ্ধ, প্রাণসম্পন্ন ও কল্যাণমুখী। আমাদের দেশে ‘ঈদ মোবারক’ বলে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর প্রচলন রয়েছে। ‘ঈদ মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা বিনিময় জায়েজ। কিন্তু সশরীরে সাক্ষাতে কিংবা ফোনে সালামের আগেই ঈদ মোবারক বলে শুভেচ্ছা বিনিময় করা বৈধ নয়।

♦ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’ বলা। এর অর্থ হলো, আল্লাহ আমাদের এবং আপনার পক্ষ থেকে সৎকর্মগুলো কবুল করুন। হজরত ওয়াসিলা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে ঈদের দিন সাক্ষাত করলাম। আমি বললাম, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’ আর তিনিও বললেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’। (বায়হাকি: ৩/৪৪৬)।

ঈদের নামাজের পর সালাম, মুসাফাহা ও মুয়ানাকা :
===============================
মুসলমানদের পরস্পরে সালাম বিনিময় হলো একটি ইবাদত এবং পরস্পরিক অভিবাদন, সৌহার্দ-সম্প্রীতি ও ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম। মুসাফাহা বা করমর্দন হলো সালামের পরিপূরক। আর দীর্ঘদিন পর একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে পরস্পরে মুয়ানাকা বা কোলাকুলি করা হলো আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ।

সালামঃ-সালাম ইসলামি অভিবাদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও সুন্নত। সালামের মাধ্যমে আল্লাহ পারস্পরিক মুহব্বত বৃদ্ধি করে দেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ইমানদার না হওয়া পর্যন্ত তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর একে অন্যকে ভালো না বাসলে ইমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কাজ শিখিয়ে দেব না, যা কারলে তোমরা পরস্পরে ভালোবাসতে পারবে? তোমাদের মধ্যে সালামের প্রচলন করো।’ (মুসলিম: ১/৪৭)।

মুসাফাহাঃ-পারস্পরিক সাক্ষাতে মুসাফাহা বা হাত মেলানোর অনেক ফজিলত রয়েছে। হজরত বারা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি দুজন মুসলিম সাক্ষাত করে পরস্পরে হাত মেলানো বা মুসাফাহা করেন তাহলে তাদের উভয়ের পৃথক হওয়ার আগেই তাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।’ (তিরমিজি: ৫/৭৪; ইবনে মাজা: ২/১২২০)।
মুসাফাহার নিয়ম হলো দুই হাতে মুসাফাহা করা। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন (মাসাফাহার সময়) আমার হাতটি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর দু হাতের মধ্যে ছিল। (বুখারি: ৫/২৩১১)। অন্যের ডান হাতকে নিজের দুহাতের মধ্যে এবং নিজের ডান হাতকে অন্যের দুহাতের মধ্যে রেখে এই দুআ পাড়া,
মুসাফাহা বা করমর্দন করার দু’আ—-
ﻳَﻐْﻔِﺮُﺍﻟﻠﻪُ ﻟَﻨَﺎ ﻭَﻟَﻜُﻢ
উচ্চারণঃ- ইয়াগফিরুল্লাহু-লানা ওয়ালাকুম।

মুসাফাহার পর হাতে চুমু খাওয়া, হাত
বুকে লাগানো বিদআত। তাই এ জাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকা উচিৎ। [রদ্দুল মুহতার : ৯/৫৫০; রহীমীয়া:১০/১২১; অাদাবুল মুঅাশারাত:৩২;]

মুয়ানাকা বা কোলাকুলির পদ্ধতিঃ- মুয়ানাকা বা কোলাকুলি হলো দুই ব্যক্তির প্রত্যেকে নিজ নিজ থুতনি অন্যের কাঁধের ওপর রাখা এবং গলা অন্যের গলার ওপর রাখা এবং উভয় হাত দ্বারা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরা। (মুহাম্মদ কালজায়ি, মুজামু লুগাতিল ফুকাহা : ৪৩৮)।

মুয়ানাকা ( কোলাকুলি) করা সুন্নাত। [আবু দাউদ : ২/৭০৮; তিরমিবী : ২/১০২]
পরিচিত কারও সাথে কিছুদিন বা অনেকদিন পর দেখা হলে তার সাথে মুহাব্বতের সাথে কোলাকুলি করা সুন্নত।
উভয়ে ডান গলা মিলিয়ে একবার মুয়ানাকা করবে। তিনবার জরুরী নয়। [তিরমিবী : ২/১০২; লিসানুল আরব : ১০/২৭২; মাহমুদিয়া : ২৮/২১১; জামিউস সুনান : ১৫৯]
ঈদের দিন ঈদের নামাযের পর জরুরী মনে করে মুয়ানাকা/কোলাকুলি করা বিদআত। জরুরি মনে না করলে বিদআত হবে না। [ইসলাহি খুতুবাত : ১/১৮৬-১৮৭]

মু’য়ানাকা বা কোলাকুলি করার দু’আ—-
মুআনাকা করার সময় এই দুআ পড়বে- ﺍَﻟﻠّﻬُﻢَّ ﺯِﺩْ ﻣَﺤَﺒَّﺘِﻲْ ﻟِﻠّﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮْﻟِﻪ
উচ্চারণ- আল্লাহুম্মা যিদ মুহাব্বাতী লিল্লাহি ওয়া রাসূলিহী। অর্থ- হে আল্লাহ! আমার মহব্বত বৃদ্ধি কর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের খাতিরে। (দেখুনঃ ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া)

💻এস এম শাহনূর
(কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক)