জুয়েল মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিঃ নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী এবং রড কম দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম আখাউড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে আসেন। এসময় তিনি নির্মাণ কাজে বিভিন্ন অনিয়ম দেখতে পেয়ে ১৪২ টি ঘরের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কর্মকর্তাকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং ফৌজদারী মামলা করা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ২ শতক ভূমিতে আধা পাকা ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে ১৩৮টি ঘর নির্মাণ শেষে উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকী ঘর গুলোর নির্মাণ কাজ চলছিল। ৩০ শে জুনের মধ্যে বাকী ঘরগুলো নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
বৃহস্পতিবার সকালে নির্মাণ কাজ পরিদর্শণে আসেন জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম। দুপুর পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে নির্মাণ কাজ দেখেন। সেসময় কাজের সঠিকতা যাচাই করতে গ্রেড ভিম, পিলার, লিন্টারের কিছু অংশ ভেঙ্গে ভেঙ্গে দেখেন। এসময় তিনি দেখতে পান সঠিক মাপের রড দেওয়া হয়নি। রড কম দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট দূরত্বে রডের রিং না দিয়ে অতিরিক্ত দূরে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইট, বালি, সিমেন্টেও কিছু ত্রুটি পাওয়া গেছে। এসব কারণে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৭টি স্থানের ১৪২ টি ঘরের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসক। এ বিষয়ে প্রাথমিক ভাবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাপস চক্রবর্তী, ঠিকাদার নূরুজ্জামান ভূইয়া, মোঃ আক্তার মাস্টার এবং মোঃ লিটনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। অন্য কোন সরকারী কর্মকতার অনিয়মের সাথে জড়িত কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার বলেন, ৫ সদস্যের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আমি। সদস্য সচিব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাপস চক্রবর্তী। তিনিই কাজের মনিটরিং করছেন। অনিয়মের বিষয়ে আমাকে কখনও কোন তথ্য দেননি। ঠিকাদার নুরুজ্জামান ভূইয়া এবং আক্তার মাস্টার করেছে। তারাও যে কাজ খারাপ করবে তা ভাবতে পারিনি।
সদস্য সচিব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাপস চক্রবর্তী বলেন, আমি এসবের সাথে জড়িত না। সবকিছু ইউএনও স্যারের মাধ্যমে হয়েছে।
তবে ঠিকাদার নূরুজ্জামান ভূইয়া বলেন, আমি নির্মাণ সামগ্রী সাপ্লাই দিয়েছি। কাজের সাথে আমি জড়িত নই।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম বলেন, রড কম দেওয়াসহ বড় ধরনের অনিয়ম পেয়েছে। এ কারণে ১৪২টি ঘরের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। এ ব্যপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে যাদের অপরাধ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা সহ ফৌজদারী মামলা করা হবে। কিছু সরকারী কর্মকর্তা এবং রাজনীতিক ঠিকাদার যারা প্রধানমন্ত্রীর আবেগকে শ্রদ্ধা করেনি তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিব।