আতংকিত আদম সন্তান নিস্তব্ধ পৃথিবীতে বছর ঘুরে ফিরে এলো সেই প্রতিশ্রুত রাত, নিজের শাপমুক্তি দুর্ভাগাদের ভাগ্য গড়তে জাহানে এলো আল্লাহর উপহার শবে বরাত।
শবে বরাত কোন উৎসবের রাত নয়,এটি ইবাদত বন্দেগির রাত।কেউ কেউ বলে থাকে সহীহ হাদিস দ্বারা শবে বরাত প্রমাণিত না। তারা অন্য রাতের মতই মনে করেন। তবে হাদিসে এ রাতের মহিমা ও ফজিলত বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে।
শবে বরাতের নামকরণ : হাদিস শরীফে এ রাতের বিশেষ কোন নাম বর্ণিত হয়নি। বরং ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান’ অর্থাৎ ‘শাবানের ১৫তম রজনী’- শব্দে উল্লেখিত হয়ে এ রাতের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। শবে বরাত ফারসি শব্দ, যা ‘শব’ এবং ‘বারাআত’ দুটি শব্দে মিলে গঠিত হয়েছে। শব শব্দের অর্থ হলো রাত এবং বারাআত শব্দের অর্থ হলো নাজাত, মুক্তি, রক্ষা, রেহাই ইত্যাদি। এ রাতে যেহেতু গোনাহ মাফ হয় এবং অসংখ্য অপরাধীর অপরাধ ক্ষমা করা হয়, সেহেতু এ রাত মুসলমানদের মাঝে ‘শবে বরাত’ বলে প্রসিদ্ধ হয়েছে।
শবে বরাত সম্পর্কিত সকল হাদিস সমূহ অধ্যয়ন করে মনে হয়েছে শবে বরাতের পক্ষে বিপক্ষে নয় আমি শবে বরাতের পক্ষে। হাদিসের আলোকে লাইলাতুল বরাতের দলিল সমূহ।
➤দলিল নং-১
হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা শাবানের মধ্যবর্তী রাতে মাখলুকাতের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ্ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)। হজরত আওফ ইবনে মালিক (রা.) থেকে ইবনে খুজাইমা হজরত আবু বকর (রা.) থেকে এবং আবু মুসা আশআরী (রা.) থেকে এ রকম বর্ণনা করেছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৯০, রাজীন: ২০৪৮; সহিহ্ ইবনে খুজাইমা, কিতাবুত তাওহিদ, পৃষ্ঠা: ১৩৬)।
➤দলিল নং-২
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: আল্লাহ তাআলা এ রাতে বিদ্বেষ পোষণকারী ও নিরপরাধ মানুষকে হত্যাকারী ছাড়া বাকি সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। (মুসনাদে আহমদ, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ১৭৬)।
➤দলিল নং-৩
হজরত আবু সালাবা (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন শাবানের মধ্যরাত আসে, তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মাখলুকাতের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান; মুমিনদিগকে ক্ষমা করে দেন, কাফিরদের ফিরে আসার সুযোগ দেন এবং হিংসুকদের হিংসা পরিত্যাগ ছাড়া ক্ষমা করেন না। (কিতাবুস সুন্নাহ, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৩৮২)।
হাদিস শরিফে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে: নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.) তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনী কালবের ভেড়া বকরির পশমের পরিমাণের চেয়েও বেশিসংখ্যক গুণাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি শরিফ: ৭৩৯)।
➤দলিল নং-৪
হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন: ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত–বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো; কেননা এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন: কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিকপ্রার্থী আছো কি? আমি রিজিক দেব; আছো কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে উদ্ধার করব। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা বান্দার বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)।
➤দলিল নং-৫
হজরত উসমান ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, এ রাতে আল্লাহ তাআলা মুশরিক ও ব্যভিচারিণী ছাড়া সবার ইচ্ছা পূরণ করে থাকেন। (শুআবুল ইমান, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৩৮৩)।
আমাদের সমাজে কিছু কিছুলোক আছেন যারা বুখারী ও মুসলিমের হাদিস ছাড়া মানতে চান না। আবার কেউ কেউ আছেন সিহাসিত্তার হাদিস ছাড়া মানতে চান না। তাদেরকে বলছি- এই কিতাবের বাহিরেও বহু হাদিসের কিতাব আছে। সেগুলোও দেখতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন। (আমিন)
💻এস এম শাহনূর
(কবি ও গবেষক)