শবে মিরাজের অর্থ ও তাৎপর্য -জাকারিয়া জাকির

ধর্ম, 1 March 2022, 362 বার পড়া হয়েছে,

মিরাজের ঘটনায় আমরা সর্বত্র দুটি শব্দের প্রয়োগ দেখতে পাই। ইসরা ও মিরাজ। শব্দ দুটি একই ঘটনার বিবরণ উপস্থাপন করলেও প্রকৃত অর্থে এখানে মর্যাদাপূর্ণ এ ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন দুটি অধ্যায়ের বিবরণ প্রকাশ করা হয়। ইসরা শব্দের অর্থ রাতেরমিরাজ এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ, আর মহিমান্বিত সফর, যেখানে রয়েছে বিস্ময়ের পর বিস্ময়। যার বিশদ বিবরণ এখানে সম্ভব নয়। ইসরার বিবরণে মহাগ্রন্থ কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পবিত্র মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের মাধ্যমে ভ্রমণ করালেন আল-মসজিদুল হারাম থেকে আল-মসজিদুল আকসা পর্যন্ত…। ’ (সুরা : বনই সফর।)

আর  ইরশাদ হয়েছে, ‘আর অবশ্যই তিনি তাকে আরেকবার দেখেছিলেন; সিদরাতুল মুনতাহা তথা প্রান্তবর্তী কুলগাছের কাছে; যার কাছে জান্নাতুল মাওয়া অবস্থিত; যখন কুলগাছটিকে যা আচ্ছাদিত করার তা আচ্ছাদিত করেছিল; তার দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি, দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যুতও হয়নি; অবশ্যই তিনি তার রবের মহান নিদর্শনাবলির কিছু দেখেছিলেন। ’ ( সুরা : নাজম, আয়াত : ১৩-১৮)নবুয়তের দশম বছরে একের পর এক বিপদ রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ঘিরে ধরে। চাচা আবু তালিব মারা যান; উম্মুল মুমিনীন খাদিজা (রা.) মারা যান। তাঁদের মৃত্যুতে রাসুল (সা.) অসহায় বোধ করলেন। তিনি বিভিন্ন গোত্রপতিদের কাছে নিজেকে পেশ করে বলেন, ‘কে আমাকে আশ্রয় দেবে, যাতে আমি আমার রবের কথা প্রচার করতে পারি?

মহানবী (সা.)-কে রাতের একাংশে মক্কা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস সফর করানো হয়েছিল বলে সেটিকে ইসরা বলা হয়। আর মিরাজ শব্দের অর্থ ওপরে আরোহণ। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধু মুহাম্মদ (সা.)-কে ভূমি থেকে আকাশে আরোহণ করিয়ে প্রথম আকাশ থেকে শুরু করে সপ্তাকাশ ভেদ করে সিদরাতুল মুনতাহা পেরিয়ে তাঁর নিজের কাছে ডেকে নিয়েছিলেন। সেটাকেই মিরাজ বলা হয়।

মিরাজ এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ, আর মহিমান্বিত সফর, যেখানে রয়েছে বিস্ময়ের পর বিস্ময়। যার বিশদ বিবরণ এখানে সম্ভব নয়। ইসরার বিবরণে মহাগ্রন্থ কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পবিত্র মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের মাধ্যমে ভ্রমণ করালেন আল-মসজিদুল হারাম থেকে আল-মসজিদুল আকসা পর্যন্ত…। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ০১)

এ ছাড়া বুখারি ও মুসলিমসহ বিভিন্ন হাদিসগ্রন্থে অনেক বিবরণ রয়েছে।

ইসরা ও মিরাজের পটভূমি

নবুয়তের দশম বছরে একের পর এক বিপদ রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ঘিরে ধরে। চাচা আবু তালিব মারা যান; উম্মুল মুমিনীন খাদিজা (রা.) মারা যান। তাঁদের মৃত্যুতে রাসুল (সা.) অসহায় বোধ করলেন। তিনি বিভিন্ন গোত্রপতিদের কাছে নিজেকে পেশ করে বলেন, ‘কে আমাকে আশ্রয় দেবে, যাতে আমি আমার রবের কথা প্রচার করতে পারি?’ কিন্তু কেউ তাঁর কথায় কর্ণপাত করল না। উপরন্তু তাঁকে তায়েফে পাথর মেরে রক্তাক্ত করা হলো।

সেই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাঁকে সম্মানিত করতে চাইলেন। তিনি তাঁকে ইসরা ও মিরাজের মতো বিরল সম্মানে সম্মানিত করলেন।

ইসরা ও মিরাজের সংক্ষিপ্ত ঘটনা

মহানবী (সা.) কাবার হাতিমে শুয়ে ছিলেন। এ অবস্থায় তিন ফেরেশতা এসে বলেন, এদের মধ্যে কোনটি সে লোক? একজন বলল, মাঝখানে যিনি শুয়ে আছেন তিনি। তারপর তারা চলে গেলেন।

পরবর্তী দিন মহানবী (সা.) রাতের নামাজ আদায় করে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। তখন ঘরের ছাদ ভেদ করে ফেরেশতাগণ অবতরণ করলেন। জিবরাইল (আ.) মহানবী (সা.)-কে জমজমের কাছে নিয়ে গেলেন। তারপর তাঁর বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। তারপর তাঁকে জমজমের পানিতে ধুয়ে আবার যথাস্থানে লাগিয়ে দিয়ে বক্ষ মিলিয়ে দিলেন।

এরপর বুখারির বর্ণনায় এসেছে, মহানবী (সা.)-কে নিয়ে আকাশের দিকে যাত্রা করা হয়। সেখানে প্রথম আকাশে আদম, দ্বিতীয় আকাশে ঈসা ও ইয়াহইয়া, তৃতীয় আকাশে ইউসুফ, চতুর্থ আকাশে ইদরিস, পঞ্চম আকাশে হারুন, ষষ্ঠ আকাশে মুসা ও সপ্তম আকাশে ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তিনি বাইতুল মামুর দেখতে পেলেন। সেখানে তাঁকে দুধ, মধু ও মদ এ তিন প্রকার পানীয় দেওয়া হয়। তিনি দুধ পছন্দ করে নেন। তখন জিবরাইল বলেন যে আপনি স্বাভাবিক বিষয় গ্রহণ করতে সমর্থ হলেন। তারপর তিনি সিদরাতুল মুনতাহায় উপনীত হলেন। তারপর এত উঁচুতে গেলেন যে কলমের লেখার খসখস আওয়াজ শুনতে পেলেন। এরপর আল্লাহ তাঁর ও তাঁর উম্মতের ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিলেন। (…মুসা (আ.)-এর পরামর্শে কমানোর পর সবশেষে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে এসে তা শেষ হয়) এরপর তিনি দুনিয়াতে ফেরত আসেন। (বুখারি, হাদীস)

মেরাজের রাতে মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে যা ঘটেছিল।

মহানবী (সা.)-কে রাতের একাংশে মক্কা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস সফর করানো হয়েছিল বলে সেটিকে ইসরা বলা হয়। আর মিরাজ শব্দের অর্থ ওপরে আরোহণ। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধু মুহাম্মদ (সা.)-কে ভূমি থেকে আকাশে আরোহণ করিয়ে প্রথম আকাশ থেকে শুরু করে সপ্তাকাশ ভেদ করে সিদরাতুল মুনতাহা পেরিয়ে তাঁর নিজের কাছে ডেকে নিয়েছিলেন। সেটাকেই মিরাজ বলা হয়।

এ ছাড়া বুখারি ও মুসলিমসহ বিভিন্ন হাদিসগ্রন্থে অনেক বিবরণ রয়েছে।

সেই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাঁকে সম্মানিত করতে চাইলেন। তিনি তাঁকে ইসরা ও মিরাজের মতো বিরল সম্মানে সম্মানিত করলেন।

ইসরা ও মিরাজের শিক্ষা

এক. ইসরা ও মিরাজের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে সব নবীর মিশন একটাই। সেটা হলো, একমাত্র আল্লাহর ইবাদত প্রতিষ্ঠা করা।

দুই. ইসরা ও মিরাজে নবীদের ইমামতির মাধ্যমে এ বিষয় প্রমাণিত হলো যে সব নবীর প্রাপ্ত শরিয়ত শেষ (রোহিত) হয়েছে। এখন মুহাম্মদ (সা.) নবুয়ত ও শরিয়তই চলবে।

তিন. নামাজ ফরজ হওয়ার ঘোষণা সরাসরি আল্লাহ দিয়েছেন। আর তা দুনিয়াতে ফরজ না করে আকাশে প্রিয় নবীকে ডেকে এনে জানিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং এতে কোনো ত্রুটি কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

চার. মসজিদুল আকসা সমস্ত মুসলিমের সম্পদ। যেখানে মহানবী (সা.) নামাজ আদায় করেছেন। ইমামতি করেছেন। সেখানে গেলে সওয়াব হওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মহানবী (সা.)-এর আনিত আদর্শের ওপর অটল থেকে আমাদের জীবন পরিচালনা করতে পারি আল্লাহপাক আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমিন।