সর্বস্তরে চালু হোক মাতৃভাষা বাংলা🔳এইচ.এম. সিরাজ

মতামত, 20 February 2022, 379 বার পড়া হয়েছে,
একুশ। আমাদের অনন্য এক চেতনা। বায়ান্ন’র একুশ’র বদৌলতেই আজকে আমরা মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারি-পারছি।একুশ হয়েছিলাম বলেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, সার্বভৌম দেশের নাগরিক। ব্রিটিশ বেনিয়াদের দুইশ’ বছরের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েই আমরা সাতচল্লিশে শিকার হই আরেক দাসত্বের।সেই শোষকের নাম পাকিস্তান তথা পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী।
পাকিস্তানি জান্তা সর্বপ্রথমেই আঘাত হানে আমাদের মায়ের ভাষার উপর। তদানীন্তনকালে শতকরা ৫৬ ভাগ মানুষের মুখের ভাষা ছিলো ‘বাংলা’। প্রকারান্তরে কেবল ১৪ শতাংশ মানুষের মুখের ভাষা ছিলো ‘উর্দু’। আর এই চার চতুর্থাংশেরও কম সংখ্যক মানুষের মুখের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার অপতৎপরতা চালাতে থাকে পাকিস্তান সরকার। সিংহভাগ মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়া অন্যায় সিদ্ধান্তকে আজন্ম সংগ্রামী বাঙালি জাতির দামালেরা সেদিনকে কিছুতেই বাস্তবায়ন হতে দেয়নি। মাতৃভাষা ‘বাংলা’র বিপক্ষে ‘উর্দু’র পক্ষে অবস্থানকারীদের ষড়যন্ত্র সমূলে নস্যাৎ করে দেয় বীর বাঙালি।
সেই বায়ান্ন থেকে একুশ। পেরিয়েছে সুদীর্ঘ ৬৯টি বছর। মাতৃভাষা বাংলা’র সম্ভ্রম রক্ষায় রচিত হয়েছে অসংখ্য  গান-কবিতা-নাটক আরো কত্তো কি। সবচে’ বড় বিষয়, পৃথিবীতে একমাত্র বাঙালি-ই অনন্য একটি জাতি যারা ভাষার জন্য ঢেলে দিয়েছিলো বুকের তাজা রক্ত। অবশ্য বাঙালির সেই রক্ত বৃথা যায়নি। ছাপ্পান্নতে পাকিস্তানের সর্প্রবথম সংবিধান রচনাকালে আনুষ্ঠানিকভাবে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্তকে বদলাতে বাধ্য হয় সরকার। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে একুশে ফেব্রুয়ারি স্বীকৃতি পায় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে। একুশের মর্যাদা আজ বিশ্বজুড়ে। কিন্তু বড্ড পরিতাপের বিষয়, আজও আমাদের দেশেই সর্বস্তরে চালু হয়নি বাংলা ভাষা!
মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব আয়োজন করে আলোচনা সভার।২০ ফেব্রুয়ারি’২২ রোববার সন্ধ্যে সাতটায় ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তৃতাকালে ‘সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হোক’ এই দাবী জানাই। প্রেস ক্লাব সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামি’র সভাপতিত্বে অলোচনা সভায় বক্তাগণ ভাষা আন্দোলন, এর প্রেক্ষাপট, বিস্তার, সফলতা, সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনে আমাদের নানাবিধ দৈন্যতার বিষয়াসয় তুলে ধরেন। মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠায় বায়ান্ন’র একুশে ফেব্রুয়ারি বুকের তাজা রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিতের মাধ্যমে জীবন উৎসর্গকারী সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউরসহ নাম না জানা বহু শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনাসহ তাদের স্মৃতিতে জানাই সশ্রদ্ধ-বিনম্র শ্রদ্ধা।
           ‘সর্বোপরি আজকে দাবী হোক একটাই
            সর্বস্তরে মাতৃভাষা বাংলা’র প্রচলন চাই।’
 এইচ.এম. সিরাজ : কবি, সাংবাদিক ও শিক্ষানবিশ অ্যাডভোকেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। পাঠাগার ও ক্রীড়া সম্পাদক- ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব, নির্বাহী সম্পাদক- দৈনিক প্রজাবন্ধু