আখাউড়ায় ভূমি অফিসে ঘুষ ছাড়া মেলে না সেবা,জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 6 February 2022, 855 বার পড়া হয়েছে,

মো. জুয়েল মিয়া, আখাউড়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মনির উদ্দিন আহমেদ ও উপ-সহকারী কর্মকর্তা সামসুদ্দোহা রিপনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি ও হয়রানিসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে।ঘুষ না পেলে একটি ফাইলও ছাড়েন না তারা। শুধু তাই নয়, তারা একজনের জমি আরেকজনকে খারিজ দিয়ে চেক কাটেন এবং সংশোধনের নামে আবারও মোটা অংকের টাকা দাবি করে থাকেন।তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিচার চেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন শিপন বণিক নামে এক ভুক্তভোগী।এমন চিত্র আখাউড়া উপজেলার প্রায় সবগুলো ভূমি অফিসের।তবে এব্যাপারে নির্বিকার স্থানীয় প্রশাসন।এতে করে সাধারণ মামুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে।এর থেকে পরিত্রাণের জন্য আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক, দুর্নীতি দমন কমিশন , জেলা প্রশাসন ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীসহ আখাউড়ার সচেতন মহল। ভূমি অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিচারের দাবিও জানান স্থানীয়রা।

গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ভূমি অফিসে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী জানান, মনির উদ্দিন আহমেদের সকল অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করে থাকেন সামসুদ্দোহা রিপন ও অফিস সহায়ক হনুফা বেগম সহ দালাল সিন্ডিকেট চক্র।

ভুক্তভোগী সেবাপ্রার্থী শিপন বণিক অভিযোগ করে বলেন, ‘আখাউড়া পৌরসভার রাধানগর মৌজার সিএস ১০৫, আরওআর ১৬০,১৬১, ১৬২,১৬৩ এবং সাবেক ১৬৬ দাগে( হাল দাগ ২৬৬,২৬৭, ২৬৮ এবং বিএস খতিয়ান ৭১৪, ৩৯৭, ৭৫১,১/১,৭১৪)মোট ৩৯ শতক ভিটা ভূমির মধ্যে আখাউড়া সহকারী জজ আদালতের দেওয়ানী ১৪৫/২০০১ ইং, দেওয়ানী ৪৪/১০ ইং ও দেওয়ানী ৯০/১৯ ইং রায় ও ডিক্রি মতে বিজ্ঞ আদালত আমার পিতা রাখাল বণিক গংদের পক্ষে ১৮.১৮ শতক, বাদী জহর লাল গংদের পক্ষে ১৫.৪৩ শতক এবং বিবাদী ফাতেমা বেগম গংদের পক্ষে ০.৬৪ শতক একুনে ৩৪ শতকের রায় ডিক্রি ঘোষণা করেন।অবশিষ্ট ৫ শতকের কোন পক্ষের নিকট মালিকানার কাগজ না থাকায় রায়ের বাইরে রাখেন। ৩.৬৭ শতক জমির খাজনা আমরা দিচ্ছি।সবকিছু বিবেচনায় আমরা ১৪.৫১ শতক জমির নামজারি খারিজ পাওয়ার যোগ্য।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, আখাউড়া সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা ঘুষের বিনিময়ে ফাতেমা বেগম গং এর খারিজ বহাল রেখে খাজনা আদায় করছেন। তিনি (শিপন বণিক) অবগত হয়ে প্রতিবাদ জানালে আদালতের রায় অনুযায়ী তাকে খারিজ করে দিবেন বলে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন মনির উদ্দিন আহমেদ ও সামসুদ্দোহা রিপন। অবশেষে নিরুপায় হয়ে দুইবারে ত্রিশ হাজার টাকা করে মোট ষাট হাজার টাকা দেন ভুক্তভোগী শিপন বণিক। ঘুষ প্রদানের সময় উপস্থিত থাকা একজন ব্যক্তি গণমাধ্যমের কাছে এ বিষয়ে স্বাক্ষীও দেন।

শিপন বনিকের অভিযোগ, ষাট হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার পরও তার খারিজের কাজ হচ্ছে না। আদালতের রায় ও বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও খারিজ না দিয়ে প্রধান কর্মকর্তা মনির উদ্দিন আহমেদ নিজের মনগড়া মতো ভূয়া দাগ নাম্বার( ২৬০) লিখে মৃত রাখাল বণিক গংদের মালিকানা যায়গাটিকে ‘ক’ তালিকাভূক্ত সরকারী খাস জমি উল্লেখ করে আখাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)মোঃ সাইফুল ইসলামের নিকট প্রতিবেদন দাখিল করেন।যা পরবর্তীতে বাতিল করেন তিনি( সহকারী কমিশনার সাইফুল ইসলাম)।

পরে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা দাগের জমির অবস্থান ও পরিমাণ জানতে চাইলে মনির উদ্দিন আহমেদ ওই ঘটনায় ভুল স্বীকার করেন।

সরজমিনে গেলে ভূমি অফিসের বাইরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মসজিদপাড়ার এক সেবা গ্রহিতা বলেন, ‘নামজারি(খারিজ)করতে সরকার নির্ধারিত ফি মাত্র ১১শত ৭০ টাকা। পাঁচ মাস আগে ২৫ শতক পরিমাণ তিনটি জমির নামজারির জন্য উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সামসুদ্দোহা রিপন ১৮ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েও এখন পর্যন্ত খারিজ করে দেয়নি।

একইভাবে তিন থেকে চার মাস আগে রাধানগর এলাকার এক সেবা প্রার্থী তার দুটি নামজারির(খারিজ)জন্য মোট ১১ হাজার টাকা ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা সামসুদ্দোহা রিপন কে দিয়েও এখনো খারিজ পাননি।
বরিশল গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তি জমির নামজারি খারিজের জন্য তিন মাস ধরে ভূমি অফিসে এসেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

তারাগন গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমি একটা খতিয়ানের বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে এক হাজার টাকা চেয়েছে উপ-সহকারী কর্মকর্তা সামসুদ্দোহা রিপন। ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় আমার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া খতিয়ানের সঠিক তথ্য দেননি তারা।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া সদর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মনির উদ্দিন আহমেদ বলেন,‘ঘুষ নেয়ার অভিযোগটি মিথ্যা। মাসে অনেক নামজারির আবেদন জমা পড়ে এই অফিসে। সরকার নির্ধারিত ফির বাড়তি টাকা আমরা নিই না।

ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন আখাউড়া সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা সামসুদ্দোহা রিপন।

ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, এসব ক্রাইম বরদাস্ত করা হবে না। ভুক্তভোগীদের সু-নির্দিষ্ট এবং লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’তাছাড়া এবিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে ডিসি অফিসে দেওয়া অভিযোগের তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি।