জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার উদ্যোগে ১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছর ২৭ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক পর্যটন দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশে যে কটি পর্যটন স্পট রয়েছে তার মধ্যে সাগরকন্যা কুয়াকাটা অন্যতম। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে নিঃসন্দেহে এর গুরুত্ব ও সম্ভাবনা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।
মানুষ মাত্রই প্রকৃতির পূজারি।প্রাকৃতিক আকর্ষণগুলো মানুষকে বরাবরই টানে। প্রকৃতিকে ভালোবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। জীবন যেখানে বৈচিত্র্যময়, প্রকৃতি যেখানে মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। সমুদ্রের গর্জন যেখানে মানুষকে আবেগাপ্লুত করে, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের লুকোচুরি যেখানে মানুষকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করে। এমনই একটি পর্যটন সম্ভাবনাময় স্থানের নাম কুয়াকাটা। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। এটি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নে অবস্থিত। আশির দশক থেকে ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক সমুদ্রসৈকতটির কদর বাড়তে থাকে। এখানে রয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্যময় পরিবেশ ও তাদের ঐতিহাসিক বৌদ্ধবিহার।১৯৯৮ সালের মে মাসে কুয়াকাটাকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়।
কুয়াকাটা নামের পেছনে রয়েছে আরকানদের এদেশে আগমনের সঙ্গে জড়িত ইতিহাস। ‘কুয়া’ শব্দটি এসেছে মূলত ‘কুপ’ থেকে। ধারণা করা হয় ১৮ শতকে মোঘল শাসকদের দ্বারা বার্মা থেকে বিতাড়িত হয়ে আরকানরা এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করে। তখন এখানে সুপেয় জলের অভাব পূরণ করতে তারা প্রচুর কুয়ো বা কুপ খনন করেছিলেন, সেই থেকেই এই অঞ্চলের নাম হয়ে যায় কুয়াকাটা! সেই কুয়া খনন থেকে আজকের ‘কুয়াকাটা’ নামকরণ করা হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। জিরো পয়েন্টের কাছে এমন একটি কুয়া এখনো টিকে আছে।
কুয়াকাটার সন্নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থানগুলো হচ্ছে ফাতরার বন, কুয়াকাটার ‘কুয়া’, সীমা বৌদ্ধ মন্দির, কেরানিপাড়া, আলীপুর বন্দর, মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির, গঙ্গামতির জঙ্গল, চর বিজয় ইত্যাদি। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা ‘চর বিজয়’। জনবসতিহীন দ্বীপজুড়েই লাল কাঁকড়া ও নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখির অভয়াশ্রম।এখনকার প্রধান দুটি আকর্ষণীয় স্থান লাল কাঁকড়ার চর এবং অতিথি পাখির অভয়ারণ্য চর বিজয়।
পায়রা সমুদ্রবন্দর বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশের তৃতীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ার একটি সামুদ্রিক অন্যতম এক সমুদ্র বন্দর পায়রা। আগস্ট ১৩, ২০১৬ সালে সমুদ্র বন্দরটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ হলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের ছোট ছোট বিভিন্ন দ্বীপগুলোতে মালদ্বীপের মতো পর্যটন উপযোগী করা যাবে। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ঘিরে দেখা দেবে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা।
সাগরকন্যা কুয়াকাটাকে সম্ভাবনা থেকে সমৃদ্ধ করতে প্রয়োজন দক্ষ নেতৃত্ব, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্থানীয়দের পর্যটনবান্ধব আচরণ, হোটেল ও রেস্তোরাঁ পরিচালনার প্রয়োজনীয় নীতিমালা, ট্যুরিস্ট পুুলিশের সহযোগিতা, ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা, দক্ষ গাইড, ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর, স্থানীয় পরিবহন সংস্থাগুলোর পর্যটনবান্ধব আচরণ ও সহযোগিতা। পর্যটনের মাধ্যমে মানুষ স্বাবলম্বী হবে, স্থানীয় লোকজন উপকৃত হবে।
লেখক: এস এম শাহনূর
কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক।