ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ক্রামাগত কমছে গ্যাসের চাপ, দুর্ভোগ চরমে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 23 January 2024, 43 বার পড়া হয়েছে,
মোঃ নিয়ামুল ইসলাম আকঞ্জি,ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্যাসের চাপ কম থাকার কারণে আবাসিক গ্রাহকদের পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়েছেন বাণিজ্যিক গ্রাহকরা। জেলার একমাত্র বিসিক শিল্পনগরীর কারখানাগুলোতে উৎপাদন কমেছে ৩০ শতাংশেরও বেশি। এতে করে লোকসানের মুখে কারখানা মালিকরা। যদিও শীতকালে পাইপলাইনে গ্যাস কিছুটা জমে যাওয়ায় গ্যাসের চাপ কমে যায় বলে জানিয়েছে গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলার প্রায় ২২ হাজার আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহককে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিশন কোম্পানি লিমিটেড। গত কয়েক মাস ধরেই গ্যাসের চাপ কমছে। এ সমস্যা শীত মৌসুম আরও তীব্র হচ্ছে। ফলে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। এতে করে রান্নাসহ দৈনন্দিন কাজে বেগ পেতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
বিশেষ করে দুপুর এবং রাতে গ্যাসের চাপ কম থাকে। তখন গ্রাহকদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। জেলা শহরের ফুলবাড়িয়া, মধ্যপাড়া, কাজীপাড়া, কালাইশ্রীপাড়া ও মৌড়াইলসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাপ অনেক কম থাকে বলে জানিয়েছেন গ্রাহকরা। ফলে এসব এলাকায় দিনের বেশিরভাগ সময় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাওয়া যায় না। আর চাপ কম থাকার কারণে রান্নায় স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ সময় লাগছে।
জেলা শহরের কাজীপাড়া এলাকার গৃহবধূ হোসনে আরা জোনাকি জানান, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গ্যাসের চাপ থাকে না। অথচ এ সময়টাতেই সকালের নাস্তা এবং দুপুরের খাবার রান্না করতে হয়। কিন্তু চাপ না থাকার কারণে ঠিকমতো আগুন জ্বলে না চুলায়। ফলে রান্না করতে দীর্ঘ সময় লাগে।তাই গত কয়েকদিন ধরে ইলেকট্রিক চুলায় রান্না করছি।
জেলা শহরের মধ্যপাড়ার আরেক গৃহবধূ শাম্মি আক্তার জানান, গ্যাস সংকটের কারণে বাড়ির ছাদে ইট দিয়ে চুলা বানিয়ে রান্না করি প্রতিদিন।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যমতে, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিশন কোম্পানি লিমিটেড থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গ্রাহকদের জন্য প্রতিদিন ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে বাখবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনে। তবে এই গ্যাসের চাপ ৪০ পিএসআই। এর ফলে চাপ কম থাকার কারণে স্বভাবিক গ্যাস পেতে সমস্যা হচ্ছে গ্রাহকদের। সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গ্যাসের চাপ ৬০ পিএসআই থাকা প্রয়োজন।
এদিকে, গ্যাসের চাপ কমার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নন্দনপুরে অবস্থিত বিসিক শিল্পনগরীর কারখানাগুলোর উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। বিশেষ করে সোডিয়াম সিলিকেট, বিস্কুক ও আটা-ময়দাসহ বিভিন্ন পণ্যের কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস না পাওয়ায় অন্তত ৩০ শতাংশ কমেছে উৎপাদন।
বিসিক শিল্পনগরীর আরমান কেমিক্যালের ব্যবস্থাপক মাইনুল ইসলাম জানান, তাদের কারখানায় সোডিয়াম সিলিকেট উৎপাদন হয়। শীত মৌসুম শুরুর আগ থেকেই গ্যাসের চাপ কম। তবে শীত আসার পর থেকে গ্যাসের চাপ আরও অনেক কমেছে। এর ফলে তাদের কারখানার স্বাভাবিক উৎপাদন কাজ ব্যহত হচ্ছে। গ্যাসের চাপ কমার কারণে কারখানার উৎপাদন প্রায় ৩৫ শতাংশ কমেছে বলে জানান তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিক শিল্পনগরী ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের বেশিরভাগ কারখানার পণ্য উৎপাদন গ্যাসনির্ভর। কিন্তু এখন নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রায় সব কারখানার উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। এতে করে লোকসান গুণতে হচ্ছে কারখানা মালিকদের।
প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের জনসংযোগ বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস গ্যাস ফিল্ডের কূপগুলো থেকে উত্তোলিত গ্যাস যায় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনেও। মূলত তিতাস গ্যাস ফিল্ডের কূপগুলোতে গ্যাসের মজুত কমতে থাকায় চাপ কমেছে। বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের চাপ ৭০০ পিএসআই হলেও তিতাসের কূপগুলোতে সেই চাপ ৬০০ পিএসআইয়ে নেমেছে- যা ক্রামাগত কমছে। এর ফলে জাতীয় গ্রিডের চাপের সঙ্গে সমন্বয় করে গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটছে।
যদিও, জাতীয় গ্রিডের চাপের সঙ্গে সমন্বয় করে গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে তিতাস গ্যাস ফিল্ডের চারটি লোকেশনে চারটি ওয়েলহেড কম্প্রেসর স্থাপন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুইটি কম্প্রেসর স্থাপন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গত নভেম্বরে বাকি দুইটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, ‘আমরা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন থেকে যে গ্যাস পাচ্ছি তার চাপ ৪০ পিএসআই। কিন্তু গ্রাহকদের স্বাভাবিক গ্যাস সরবরাহের জন্য ৬০ পিএসআই চাপ প্রয়োজন। ফলে আমরা ইচ্ছে করলেও স্বাভাবিক গ্যাস সরবরাহ করতে পারছি না’।
‘এছাড়া শীতের সময় পাইপলাইনে গ্যাস কিছুটা জমে যায়। ফলে চাপ কমে যায় গ্যাসের। তবে গ্রাহক দুর্ভোগ লাঘবে বিষয়টি নিয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছেন।