জনতার খবর ডেস্ক : লাইলাতুন নিসফা মিন শাবান তথা অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতটি শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত হিসেবে পরিচিত। আরবি বছরের ৮ম মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত এটি। আজ বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে শবে বরাত। মুমিন মুসলমান এ রাতটিকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করে ইবাদত-বন্দেগি, তওবা-ইসতেগফার ও দোয়া-দরুদে অতিবাহিত করে থাকেন।
যদিও এই রাতে সম্মিলিতভাবে ইবাদত সম্পর্কে হাদিসে কোনো দিক-নির্দেশনা নেই। তবে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রাতে অধিক পরিমাণে ইবাদত করতেন। নবিজি (স.) কিছু আমল দ্বারা বিশেষ কিছু ইবাদত প্রমাণিত হয় যা তিনি করেছেন। সে আলোকে এ রাতের কিছু আমল তুলে ধরা হলো-
★ নফল নামাজ পড়া-
এই রাতে দীর্ঘ (কেরাতে) তেলাওয়াতে নফল নামাজ পড়া। অর্ধ শাবানের রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক পরিমাণে দীর্ঘ নফল নামাজ পড়তেন।
★দোয়া করা
নিসফা শাবানের রাতের দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। তাই বেশি বেশি দোয়া করা। হাদিসে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (র.) বর্ণনা করেন, পাঁচটি রাত এমন আছে, যে রাতে বান্দার কোনো দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না। আর তাহলা-
১. জুমআর রাতের দোয়া।
২. রজব মাসের প্রথম রাতের দোয়া।
৩. নিসফা শাবান তথা অর্ধ শাবানের রাতের দোয়া।
৪. ঈদুল ফিতর তথা রোজার ঈদের রাতের দোয়া।
৫. ঈদুল আজহা তথা কুরবানির ঈদের রাতের দোয়া। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক)
★ তওবাহ ও ইসতেগফার করা-
বান্দার গুনাহ মাফে তওবাহ করার বিকল্প নেই। বান্দা নিজের গুনাহের কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে তা থেকে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা। তবে আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।
★তাসবিহ-তাহলিল পড়া-
★পর দিন রোজা রাখা
নিসফা শাবানের রাতের পরের দিন রোজা রাখা। হাদিসে এসেছে-হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন শাবান মাসের ১৫তম রাত তোমাদের সামনে এসে যায় তখন তোমরা সে রাতে নামাজ পড় এবং পরবর্তী দিনে রোজা রাখ।’ (ইবনে মাজাহ)
এ ছাড়াও আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া (নিজ ঘরে) রাত জেগে উল্লেখিত নফল নামাজ, জিকির-আজকার, কুরআন তেলাওয়াত ও তওবা-ইস্তিগফার ইত্যাদি ইবাদত বন্দেগি করা। হাদিসে এসেছে-
‘এ রাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং ফজর পর্যন্ত মানুষকে তাঁর কাছে ক্ষমা, রোগ মুক্তি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি, রিজিকসহ ইত্যাদি বৈধ প্রয়োজনীয় চাহিদার জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে আহ্বান করতে থাকেন।’
আবার আনুষ্ঠানিকতা জাঁকজমকবিহীন একাকি কবর জিয়ারত করা যেতে পারে। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাউকে না জানিয়ে একাকি জান্নাতুল বাকিতে গিয়ে কবর জিয়ারাত করেছিলেন। এমনকি যা তিনি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকেও জানাননি।
চাইলে এ আমলগুলোও করা যেতে পারে-
১. এ রাতের নফল নামাজের কেরাত এবং সেজদা হবে দীর্ঘ।
২. কোরআনুল কারিম তেলাওয়াত করা।
৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরূদ পাঠ করা।
৪. গুনাহের কথা স্মরণ করে ইস্তেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা।
৫. নিজের জীবনের বড় বড় গুনাহের কথা স্মরণ করে তওবাহ করা।
৬. আল্লাহর রহমত ও কল্যাণ কামনা করা।
৭. রাতের কিছু সময় ঘুমানো।
৮. শেষ রাতে সেহরি খাওয়া।
৯. পরের দিন রোজা রাখা।
তবে এমনটি যেন না হয় যে অনেক রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি, তাসবিহ-তাহলিল করার ফলে ফজরের ফরজ নামাজ তরক হয়ে যায়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিসফা শাবানের রাতের ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। সারা বছর এ আমল অব্যাহত রাখার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।