মানুষ একা নয়। কোনো না কোনোভাবে সে একত্রিত ও যূথবদ্ধ। একথা অস্বীকার করলে চলবে না, মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তার পরিবার। পরিবারমুখিতা মানুষের চিরায়ত ও সহজাত প্রকৃতি। এছাড়াও জীবনের পরতে পরতে বিভিন্ন উপলক্ষে সে ক্রমশ যুক্ত হতে থাকে নানা সামাজিক বন্ধনে। এসব সম্পর্কের গাঁথুনি যার জীবনে যতটা সুনিবিড় ও দৃঢ়, জীবনটাও তার কাছে ততটা উপভোগ্য ও সহজ। সমাজতাত্ত্বিকদের পর্যবেক্ষণে এ আজ এক সার্বজনীন সত্য।
পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সম্পর্ক যদি চমৎকার আন্তরিক হয় তাহলে পরিবারই হবে সুন্দর জীবনের অনুপ্রেরণা, হয় সুখ ও শান্তিময় মানবীয় আবাস এবং নৈতিক চরিত্র গঠনের প্রকৃষ্ট ক্ষেত্র। পারস্পরিক দয়া-করুণা-সহানুভূতি, দায়িত্বশীলতা, আন্তরিক, সহযোগিতা, অন্তরের স্বতঃস্ফুর্ত দরদ ও প্রণয়-প্রীতি, অপরিসীম স্নেহ ভালোবাসার বন্ধনে পরিবার হয় সুখ-শান্তি ও সর্বাঙ্গীণ উন্নতির অনাবিল উৎস।
একটা মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তার পরিবার। কিন্তু আজকাল পরিবারের মধ্যে এমন পারিবারিক বন্ধন দেখা যায় না। তার কারণ বর্তমান সমাজ অনেকটাই নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি হয়ে গেছে।
আধুনিক সময়ে মানুষ যত বেশি উচ্চাশাকাঙ্ক্ষী হচ্ছে তত তার আত্মকেন্দ্রিক মনোভাবও বাড়ছে৷ আমাদের সমাজে দিনদিন ব্যাপকভাবে বেড়ে চলছে পারিবারিক অসহিষ্ণুতা ও বিরোধ। এর কুফল সমাজ ব্যবস্থায় আঘাত হানছে চরমভাবে। মূল কারণ পারিবারিক বিভেদ, যেটা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। সবচেয়ে বড় কথা সমাজ ও পরিবারের প্রতি আমাদের যে দায়বদ্ধতা সে জায়গায় ব্যাপক ফাটল ধরেছে, আর ফাটলটা দিন দিন বেড়েই চলছে। আমাদের শিক্ষার মূল জায়গা হলো আমাদের পরিবার। পরিবার একটি চিরস্থায়ী সামাজিক সংগঠন। আর একটি পরিবারের মাঝে সবচেয়ে আশার বিষয় থাকে পারিবারিক বন্ধন। পারিবারিক বন্ধন হলো পরিবারের সকল সদস্যদের মধ্যে তৈরি হওয়া আবেগীয় সম্পর্ক। পারস্পরিক বিশ্বাস, স্নেহ, ভালোবাসা, সম্মান, আস্থা ইত্যাদি পারিবারিক বন্ধনের ভিত্তি। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় না হলে পরিবারের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়ে, যার ফলে সমাজ ব্যবস্থা দুর্বল হয় এবং তৈরি হয় সামাজিক অস্থিরতা। মানবজাতির বিকাশ লাভের সাথে সাথে সমাজের অগ্রগতি ও পরিবারের রূপ এবং কাঠামোর পরিবর্তন হয়েছে। এর পরে রয়েছে সামাজিক অবস্থান। মানুষ সামাজিক জীব। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করে আসছে। সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করাই মানুষের ধর্ম। সমাজ মূলত একটি সংগঠন বিশেষ।
বর্তমানে পরিবারের বন্ধন এখন ব্যাপকহারে ভেঙ্গে যাচ্ছে। এ কারণেই আমাদের সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে চলেছে দিন দিন। আগে এক সময় একান্নবর্তী পরিবার ছিলো কিন্তু সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে আস্তে আস্তে একপ্রকার চালু হতে থাকে। তখনই সমাজের বিশিষ্ট জন সামাজিক বিজ্ঞানীরা এর বিরুদ্ধে কথা বলেও, প্রতিবাদ করেও তেমন একটা সুফল বয়ে আনতে পারেনি।
যখন একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে যাচ্ছে তখন থেকেই স্বামী স্ত্রী তাদের মা বাবাকে ছেড়ে আলাদা বাড়ি তৈরি করে বসবাস করতে শুরু করল। হয়তো স্বামী কোন একটা ব্যবসা করছে বা চাকরি করছে ওদিকে স্ত্রী বাসায় রান্নাবান্না কাজ, ঘরগুছানো নিয়েই দিন পার করতেছে। স্বামী দীর্ঘক্ষণ কর্মের মধ্যে ব্যস্ত থাকায় হয়তো স্ত্রীকে বেশি সময় দিতে পারে না বা কোন সময় রাগারাগি হয়ে যায় ঝগড়া-বিবাদ লেগে যায়। তখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এক ধরনের সম্পর্কের দ্বন্দ্ব লেগে যায়।
পরিবার প্রথার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এমনকি পারিবারিক পবিত্র বন্ধনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা সার্থক ও অর্থবহ জীবনের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পারিবারিক বন্ধন ছিল আমাদের গর্ব। অথচ কালের পরিক্রমায় এই বন্ধন আজ হুমকির সম্মুখীন। নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের অভাবে ভেঙ্গে যাচ্ছে পরিবারের আদর্শ-মূল্যবোধ; ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে পরিবারিক-বন্ধন। যান্ত্রিক জীবনে অস্থিরতা ও হতাশা বাড়ায় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে এবং খুনখfরাবির মতো ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে।
অথচ পারিবারিক বন্ধন বজায় রাখা আমাদের শুধু আজকের নয়, সব সময়ের প্রয়োজন; যা আমাদের মাঝে স্থিতিশীলতার বোধ এবং আধ্যাত্মিক প্রশান্তি এনে দেয়। তাই মায়া-মমতা, অনুশাসন আর নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে আধুনিক ব্যস্ত জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে পুরনো সেই পারিবারিক বন্ধন। কেননা পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ়করণেই মানুষের সামগ্রিক কল্যাণ নিহিত।
প্রযুক্তিনির্ভর এ সমাজ ব্যবস্থায় দিনদিন বাড়ছে নবীন ও প্রবীণ প্রজন্মের মধ্যে মানসিক দূরত্ব, মানুষে মানুষে ভালোবাসা কমছে এবং মানব মনের কোমল দিক সম্পর্কে যে আস্থা ছিল তা ভেঙ্গে যাচ্ছে। নড়বড়ে পরিবার, বিয়ে বহির্ভূত শিশুদের জন্ম, বয়স্ক পিতামাতার সেবাযত্মহীন জীবনযাপন এখন নির্মম বাস্তবতা। মানুষে মানুষে সন্দেহ, হিংসা, ঘৃণা, লোভ, ক্রোধ আর অবিশ্বাস বেড়ে চলছে। প্রতারণা ও ছলচাতুরি করে অন্যকে ঠকিয়ে হলেও নিজে এগিয়ে যাওয়া বা বিজয়ী হওয়ার মানসিকতা দেখা যাচ্ছে। সন্তান নেয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের সংজ্ঞা পাল্টে যাচ্ছে। প্রতিটি পরিবারের সামাজিক মর্যাদা ও জীবনচর্চা ভিন্ন ধরনের হচ্ছে। যদিও পরিবারগুলি এখনও সমাজের মজবুত কোষ ও বাচ্চাদের বড় করার একমাত্র মজবুত আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে চলছে। তারপরও এখনই পরিবার সম্পর্কিত সুস্থধারার সংস্কৃতি চর্চা বাড়াতে না পারলে দ্রুতই পারিবারিক বন্ধন ঢিলেঢালা হয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে।
পরিবারের মাঝেই একজন মানুষের ব্যক্তিত্বের পূর্ণবিকাশ ঘটানো সম্ভব এবং এটাই একমাত্র উপায় যেখানে শিক্ষার সুষ্ঠু ধারাকে অব্যাহত রেখে একটি শিশুকে একজন পরিপূর্ণ নাগরিকে রূপদান করা যায়। সুস্থধারার বিনোদন এবং রুচিবোধকে প্রভাবিত করে পরিবার সম্পর্কিত এমন গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনচিত্র প্রভৃতির চর্চা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আমরা যদি পারিবারিক বন্ধন হারিয়ে ফেলি তাহলে আমাদের মানবিক বোধেরা নিজেদের বিকলাঙ্গ ঘোষণা করে চলে যাবে মহাকালের অতল গহ্বরে। যেখান থেকে আর কোনো দিন ফেরার কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না।সুতরাং সময় থাকতে সাবধান হওয়াই হবে সময়ের অপরিহার্য দাবি।
যান্ত্রিক সভ্যতার অগ্রগতি, শিল্পায়ন, নগরায়ন এবং আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার বর্তমান সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। সমাজের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় অনুশাসন প্রভৃতির মাঝেও পরিবর্তন ঘটেছে। পরিবার দ্বারা সমাজ নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই পরিবারের পরিবর্তনের ফলে সমাজে ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়েছে। সমাজের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ ঘটেছে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে। তাই একথা বলা যায়, সুষ্ঠু পারিবারিক জীবনই সমাজ-রাষ্ট্রের মূলভিত্তি। পরিবার এবং সমাজব্যবস্থার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় একটি সুশীল সমাজ আমরা পেয়ে থাকি। আর তার সাথে জড়িত থাকে শিক্ষা। আধুনিক যুগে বিজ্ঞানের অবদান অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এই সুযোগ আমরা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে কীরূপ ব্যবহার করছি? পারিবারিক ও সামাজিক যে শাসন ও শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে তা আমরা ক্রমান্বয়ে হারিয়ে ফেলছি। যার ফলে সমাজ ব্যবস্থায় বিশৃংখলা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা নিজেদের এতই ব্যস্ত করে তুলছি যে, সামাজিকভাবে ব্যয় করার জন্য একটু সময়ও রাখছি না।
খ্যাতনামা কলামিস্ট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমানের লাশ নিজের বাসা থেকে দরজা ভেঙ্গে উদ্ধার করা হয়। বাসায় তিনি ছিলেন একা। স্ত্রী ও কন্যা আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। অসুস্থ ও মৃত্যুর সময় কেউ ছিল না পাশে এবং মারা যাওয়ার বিষয়টি কেউ জানেনি কিছু। এক করোনা রোগী সুইসাইড নোট লিখে মুগদা হাসপাতাল থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। তিনি লিখে গেছেন, নিজের একাকিত্বের কথা। টাকা ছিল কিন্তু আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু ছিল না কাছে। পরিবার ও আত্মীয়দের সবাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশে! একাকীত্ব সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন বলে লিখে গেছেন। এর প্রত্যেকটি বিষয়ই হৃদয়স্পর্শী, যা সমাজ ও পরিবারকে কঠোরভাবে আঘাত করেছে।
দুুইটি ঘটনা উল্লেখ করার পর অস্বীকার করার কোনো সুযোগ থাকে না যে, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে একাকি হওয়ার প্রবণতা। কিন্তু কেন একাকিত্ব? কেবলই ভালো থাকার আশা নাকি সামাজিক বন্ধন ছিন্ন করার একটি প্রক্রিয়া? উল্লেখিত দুু’টি বিষয় যখন মিডিয়াতে আসে ক্ষণিক সময়ের জন্য কিছুটা আলোড়নের সৃষ্টি হয়। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে তা আবার হারিয়ে যায়। এসব ঘটনা হারিয়ে গেলেও এই লেখাগুলো সমাজ এবং রাষ্ট্রকে যে ম্যাসেজ দিয়ে যাচ্ছে তা কিন্তু অনেক জটিল ও এর ফলাফল আমাদের জন্য ভয়ানক বার্তা দিচ্ছে। জীবনের এসব ক্ষতবিক্ষত বিষয় রাষ্ট্রের পক্ষে আইনের মাধ্যমে সমাধান করা কি আদৌ সম্ভব? এক সময় বৃদ্ধাশ্রমের কথা শুনলেই আঁতকে উঠতো মানুষ। কিন্তু এখন আর সে অনুভূতি জাগ্রত হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত ভালো ও বড় হওয়ার আশায় মানুষ পরিবারের বন্ধন ছিন্ন করছে। কিন্তু আমরা অর্থনৈতিকভাবে বড় হলেও হারিয়ে ফেলছি মানবিকতার জায়গাটুকু। ফলে তৈরি হচ্ছে বন্ধন ছিন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া।
বিষয়গুলো ক্ষণিক সময়ের জন্য নাড়া দিলেও কিছু সময় পর তা হারিয়ে যাচ্ছে। আসলেও কি হারিয়ে যাচ্ছে? একসময় চিঠির মাধ্যমে একজনের খবর আরেকজনে পেতো। আর এখন মোবাইলে হ্যালো বলার পর্যন্ত সময় হচ্ছে না। প্রশ্ন হলো, এ কি শুধু সময়ের অভাব নাকি অন্য কোন বিষয় জড়িয়ে আছে এর সাথে? একটু যাচাই বাছাই করলে দেখা যাবে, এর সাথে কেবল সময়ই জড়িত নয়। আমরা আমাদের প্রজন্মকে মানবিকতার শিক্ষাটুকু দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। যে উদ্দেশ্যে পরিবার গঠিত হয়ে থাকে তার প্রকৃত উদ্দেশ্যে তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছি। কেবলমাত্র ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছি। সবাই তার সন্তানকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পরও যে ভালো মানুষ হতে হবে বা সামাজিকভাবে বসবাস করতে হবে, এ শিক্ষা দিচ্ছি না আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে। পারিবারিক মূল্যবোধের জায়গাটা আর্থিকভাবে মূল্যায়ন করছি অনেক ক্ষেত্রেই।
মানুষকে মাপার প্রধান হাতিয়ার এখন অর্থ, যা আমাদের অনেক ক্ষেত্রেই ভাবাচ্ছে। এর সুফল যেমন রয়েছে, তেমনি এ অর্থ রোজগারের সাথে মানবিকতা যোগ না হওয়ার কারণে সব বিনষ্ট হচ্ছে। প্রতিদান না পেয়ে ভালো কিছু করার আগ্রহটা হারিয়ে ফেলছে অনেকেই। সমাজকর্মীরাও রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনকি সামাজিকভাবে জেগে থাকা মানুষগুলো আজ সমাজের চোখে অকর্মণ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। একসময় মানুষের উপকার করা রাজনৈতিক নেতাদের প্রধান লক্ষ্য ছিলো এবং এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মনে জায়গা করে নিতেন রাজনৈতিক নেতারা। মানুষের উপকার করাই ছিলো তাদের প্রধান ব্রত। কালক্রমে চেয়ার দখল এবং শাসকের ভূমিকায় পরিণত হয়েছে রাজনীতি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, পারিবারিক এবং সামাজিক মূল্যবোধের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় যে সব সিলেবাস অন্তর্ভুক্ত ছিল তা অদৃশ্য কালো থাবায় হারিয়ে গেছে। আমরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় যে অর্জন করতে পেরেছিলাম সেটাও আজ মলিন। শিক্ষা কেবলমাত্র সার্টিফিকেটে আটকে যাচ্ছে, যার ফলে নম্বর পাওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক মানুষের জীবনে শান্তি উৎস পরিবার। তাই পারিবারিক সম্পর্ক গুলো আমরা যেন কোন ভাবেই গুরুত্বহীন মনে না করি। পরিবারে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় কিন্তু পারস্পরিক বোঝাপড়া যদি অক্ষুন্ন থাকে তবে জীবন চলার পথে কোন চ্যালেঞ্জ বা প্রতিবন্ধকতা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারবে না।
পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হলে ও দেশি সংস্কৃতির চর্চা বাড়ালে আগামী প্রজন্মকে জঙ্গিবাদের কালো থাবা থেকে বাঁচানো যাবে। সন্তানকে দেশপ্রেম ও মানবতার শিক্ষা পরিবার থেকেই দিতে হবে। সাধারণত মা-বাবার মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা-ভালোবাসা থাকলে সন্তান বিপথগামী হয় না। তাই ছেলে-মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। বড়রা যাই করে, শিশুরা তা অনুকরণ করে। মা-বাবার মধ্যে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, ক্ষমাশীলতা, সহনশীলতা, ধৈর্যশীলতা না থাকলে শিশুদের মধ্যে তা গড়ে ওঠে না। এজন্য সন্তানকে সময় দিতে হবে, উদারতা শিখাতে হবে। সকল ধর্মের, সকল শ্রেণির মানুষকে সম্মান করতে জানতে শিখাতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বাস্তব জীবনে সন্তান কি করছে, কোথায় যাচ্ছে এসব বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। পরিবারের ভালোবাসা, যত্ন ও পিতা-মাতার সঙ্গে সন্তানের বন্ধুত্ব অপরাধপ্রবণতা রোধে কাজে আসবে। পিতা-মাতাকে সন্তানের মন খারাপ বা হতাশার কারণগুলো বুঝতে শেখা দরকার।
– আদিত্ব্য কামাল : সাংবাদিক ও কলামিস্ট