আদিত্ব্য কামাল : মোতাহার হোসেন খান (৪৫)। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার গ্রীন ভ্যালী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ছিলেন। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার ছেলে মাহিদুল হোসেন খান (মিরাজ) এই বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন জেলা শহরের অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। সে ওই বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। বুধবার যখন উপজেলার দেবগ্রামে নিজ বাড়িতে পরদিনের গণিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন তার বাবা মৃত্যুবরণ করেন। বাবা’র মৃত্যুতে মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছে না মিরাজ। সারারাত বাবার মরদেহের পাশে বসে বিভিন্ন দোয়া পড়েছে।
মিরাজ বুধবার দুপুরেও বাবার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছিল। কিন্তু সন্ধ্যায় বাবার মৃত্যুতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তার। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া। নিজের বাড়িতে বাবার লাশ! চারদিকে স্বজনদের কান্না-আহাজারি!
শেষ পর্যন্ত বাড়িতে বাবার লাশ রেখেই অশ্রুজলে বুক ভাসিয়ে অশ্রু মুছতে মুছতে কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে মিরাজ। কেন্দ্রে তাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন কক্ষ পর্যবেক্ষকসহ অন্যরা।
এলাকাবাসী ও মিরাজের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় আকস্মিক স্ট্রোকজনিত কারণে মিরাজের বাবা মোতাহার হোসেন খান হাসান (৫২) মারা যান। পরিবারের কর্তার হঠাৎ এমন চলে যাওয়া কোনোভাবেই মানতে পারছেন না স্বজনরা। এমন অবস্থায় মিরাজ তার এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের গভঃ মডেল গার্লস হাইস্কুল কেন্দ্র পরীক্ষা দিতে যায়। সেখানে বৃহস্পতিবার পরীক্ষা চলাকালে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মিরাজ বলে- বাবা আর নেই! বাবা আর কখনই আমাকে আদর করে ডাকবে না! এটা আমি মানতে পারছি না! বাবার স্বপ্ন ছিল আমি অনেক বড় হব। তাই আমি পরীক্ষা দিতে এসেছি; কিন্তু বাবার এভাবে চলে যাওয়া আমাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে। আমি সহ্য করতে পারছি না।
এই শিক্ষার্থী যখন অশ্রুসজল চোখে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকছিল তখন তার বন্ধুদের চোখেও জল। সেটি ছুঁয়ে গেছে শিক্ষকদেরও।
মিরাজের শিক্ষকরা জানান, সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের অনেক মেধাবী ছাত্র। পড়াশোনায় ভীষণ মনযোগী।
পরীক্ষা কেন্দ্র গভঃ মডেল গার্লস হাইস্কুলের ১৬ নম্বর হলের কক্ষ পরিদর্শক মো. অলি আহমদ বলেন, বাবার লাশ বাড়িতে রেখে মনে কষ্ট চেপে সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। আমি তার প্রতি সমবেদনা জানাই। আল্লাহ তাকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা দাও। মিরাজ অনেক বড় হোক তার প্রতি শুভ কামনা।
মো. মাহিদুল হোসাইন খান মিরাজের মামা মো. আরিফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, মিরাজকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের গভঃ মডেল গার্লস হাইস্কুল কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানোর জন্য আমি সকালে নিয়ে আসি। বাড়িতে মিরাজের বাবার লাশ অপেক্ষা করছে মিরাজের জন্য। আসর নামাজ বাদ দেবগ্রাম সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।