অনলাইন জুয়ার কারণে পারিবারিক সহিংসতা বাড়ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। গত এক বছরে জুয়ার টাকা লেনদেন হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। প্রায় ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়ে গেছে এই ব্যাংকিং মাধ্যমে।
বুধবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, দেশের জুয়ার সাইটগুলো রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভারত থেকে পরিচালিত হয়। আমাদের দেশে যারা থাকেন, তারা মাস্টার এজেন্ট। বিদেশে যারা পরিচালনা করেন, তারা সুপার এজেন্ট। যখন আইপিএল ও বিপিএল খেলাগুলো চলে, তখন তারা বাজি ধরে।
হাফিজ আক্তার বলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে ডিএমপির গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম ও অর্গানাইজ ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে অনলাইনে জুয়া (বেটিং) পরিচালনাকারী চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন, তরিকুল ইসলাম বাবু (২৮), রানা হামিদ (২৬) ও সুমন মিয়া (২৫)। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার, নগদ ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ৪টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন, ৫টি সিম কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৩টি অ্যাকাউন্ট নম্বর ও ২৩টি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়।
ডিবি জানায়, গ্রেফতাররা দেশে বিভিন্ন লিংকের মাধ্যমে অনলাইনে জুয়া পরিচালনা করতেন। তরিকুল, রানা ও সুমন অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে গাড়ি-বাড়ি-জমি কিনেছেন।
হাফিজ আক্তার বলেন, এ চক্রটির আমরা তিনজনকে গ্রেফতার করেছি। এখনো ৫০ থেকে ৬০ জন পলাতক আছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছে। তারা রিমান্ডে রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেফতারদের প্রকাশ্য কোনো আয়ের উৎস নাই। আইপিএল ও বিপিএলসহ মূলত ক্রিকেট খেলাকে ঘিরেই এই বেটিং সাইট পরিচালিত হয়। বেটিং সাইটগুলোতে বিভিন্ন ক্রিকেট খেলায় নির্দিষ্ট ওভার বা বলে কত রান হবে অথবা নির্দিষ্ট ম্যাচটি কোন দল জিতবে তার উপর ১:৩ অনুপাতে বেটিং করা হয়। সাধারণ ইউজারের নির্দিষ্ট টার্গেটকৃত রান বা তার নির্দিষ্ট দল জিতলে বেটিংয়ের পিবিইউ পরিমাণের তিনগুণ বা বেটিংয়ের শর্ত অনুসারে পিবিইউ ফেরত পায়। এভাবেই বেটিং বা অনলাইন জুয়া পরিচালিত হয়।
ডিবিপ্রধান হাফিজ আক্তার বলেন, রাশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারতে এর এডমিন রয়েছে। এগুলো বন্ধ করা হয়ত সম্ভব হবে না। তবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বন্ধ করতে গেলে তারা অন্য সাইটে চলে যাবে। আমরা বিটিআরসির মাধ্যমে একসঙ্গে কাজ করব। মনিটরিং আরও বাড়াতে হবে। তবে সামাজিকভাবে এটা প্রতিরোধে কাজ করা উচিত। কারণ যারা বেটিংয়ে অংশ নেয় তারা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এটা নেশার মতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা।