ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ খাদ্যশস্য ছাড় করাতে এই কর্মকর্তা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সভাপতি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের কাছ থেকে টনপ্রতি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা করে উৎকোচ নিচ্ছেন বলে।অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে কাবিখা কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ২০-২৫টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য খাদ্যশস্য চাল ও গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এসব খাদ্যশস্য উন্নয়ন প্রকল্পের সভাপতি বরাবর ছাড় করতে ছাড়পত্র দেন।
খাদ্যশস্যের সরবরাহ পেতে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে বিলি আদেশ (ডেলিভারি অর্ডার) নিতে হয়। কিন্তু খাদ্যশস্যের ছাড়পত্রের বিপরীতে বিলি আদেশের (ডিও) জন্য উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিভিন্ন প্রকল্পের সভাপতি এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারের কাছে টনপ্রতি উৎকোচ দাবি করেন। উৎকোচ না দিলে তিনি বরাদ্দ করা খাদ্যশস্যের বিলি আদেশ দেন না এবং প্রকল্প সভাপতিদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন। তবে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ঘুষ আদায় এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সভাপতি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বাঞ্ছারামপুরের কৃষ্ণনগর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, উপজেলায় স্থানীয় সাংসদের নামে ও সাধারণ হিসেবে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য খাদ্যশস্য (চাল ও গম) বরাদ্দ দেওয়া হয়। সাংসদের নামে চাল ১৫৯ ও গম ১৫৯ টন এবং সাধারণ হিসেবে চাল ৭৫ ও গম ৭৫ টন বরাদ্দ দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, খাদ্য কর্মকর্তার বিলি আদেশ পেলে খাদ্যশস্য ছাড় করা হয়। উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য দেড় থেকে দুই টন করে খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এখন পর্যন্ত কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের আওতায় ২০-২৫ উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ৪০–৫০ টন খাদ্যশস্য ছাড় করা হয়েছে। তবে বর্তমানে গমের বরাদ্দ নেই। সলিমাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিসুজ্জামান বকুল বলেন, উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের সাহেবনগর গ্রামের মুক্তার মিয়ার বাড়ি থেকে হেলাল মিয়ার পুকুর পর্যন্ত মাটি ভরাট উন্নয়নকাজের জন্য চার টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ পান। প্রকল্পের চালের ডিও আনতে গেলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা প্রতি টন খাদ্যশস্যের জন্য ৩০০ টাকা করে উৎকোচ চান। পরে টাকা দিয়েই বিলি আদেশ নিতে হয়েছে।
আনিসুজ্জামান বকুল বলেন, কিসের টাকা জিজ্ঞেস করলে তিনি জেলার কর্মকর্তার ও তাঁদের অফিস বাবদ খরচের কথা জানান। উপজেলার ভিটি ঝগরারচর গ্রামের চাল ব্যবসায়ী ওয়াদুদ মিয়া বলেন, ‘বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সভাপতির কাছ থেকে আমি বিলি আদেশ কিনে উপজেলা খাদ্য কার্যালয়ে যাই। খাদ্যশস্য ছাড় করতে ডিওর জন্য প্রতি টনের বিপরীতে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে উৎকোচ চান খাদ্য কর্মকর্তা। পরে টনপ্রতি ২০০ টাকা করে দিয়েছি। মোট চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছি। এসব টাকা থেকে তাঁর কার্যালয়ে ও জেলা খাদ্য কর্মকর্তার অফিস খরচ দিতে হয় জানান খাদ্য কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির একাধিক ডিলার বলেন, খাদ্য কর্মকর্তা চালের বিলি আদেশের জন্য ও মাস্টাররোল সমন্বয় করতে আমাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন। টাকা না নিলে ডিও তুলতে সমস্যা হয়। তাই বাধ্য হয়ে টাকা দিই। প্রতি টন খাদ্যশস্যের জন্য ২০০ থেকে ৪০০ টাকা করে দিতে হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাকারিয়া মোস্তফা বলেন, ‘আমি এখানেনতুন যোগ দিয়েছি। খাদ্যশস্যের ডিও দেওয়ার সময় টনপ্রতি টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম বা বিধান নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পবিত্র চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘২০২১-২২ অর্থবছরে ২০-২২টি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ৪০-৫০ মেট্রিক টন
খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা শমসাদ বেগম বলেন, ‘বিভিন্ন প্রকল্পের চাল, গম ও অতিদরিদ্র খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিও দিতে টাকা চাওয়ার কোনো বিধান নেই। এমনটি করে থাকলে অবশ্যই অন্যায় করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।