ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও লিচু বাগানগুলোতে মুকুলে গাছগুলো ভরে মুখরিত হয়ে উঠেছে নৈসর্গিকীয় প্রামাণ্যচিত্রে। ফুলের সৌন্দর্য দেখলে মনে হয় কে যেন সাদা ফুলের পাপঁড়ি দিয়ে পুরো এলাকাটিকে মুড়িয়ে রেখেছে এক অপরূপ প্রাকৃতির সৌন্দর্যের প্রতীকে। চারদিকে মৌমাছির গুনগুনে ফুলের আমারুহে মনে হয় বিশেষ করে উপজেলার বিষ্ণুপুর, পাহাড়পুর ও সিঙ্গারবিল ইউনিয়ন যেন প্রকৃতি তার নিজ হাতে সাজিয়ে তুলেছেন এই লিচু বাগান অঞ্চলগুলোকে।
সরজমিনে পুরো এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হাজার হাজার লিচু গাছ মুকুলে পূর্ণ হয়ে আছে। গত বছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে লিচুর ফলন তেমন ভালো না হলেও, এবছর গাছে গাছে মুকুলের অবস্থা দেখে কৃষকের মনের আশা জাগছে এই মুকুলের প্রতিফলন ঠিকঠাক ভাবে ঘটবে।
উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের লিচু চাষী ইকবাল মিয়া জানান, এবছর আবহাওয়া এখনো অনুকূলে আছে। গাছে গাছে প্রচুর মুকুলও এসেছে। গত বছর তুলনায় এবছর মুকুলের পরিমাণ অনেক বেশি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর রেকর্ড সংখ্যক ফলন হবে আশা করছি। উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আব্দুল ওদুদ ও উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মোহাম্মদ নূরে আলম আমাদের লিচু চাষীদের নিয়ে পরামর্শ সভা এবং পরিচর্যা বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেন। পরামর্শ মোতাবেক আমরা লিচু গাছের পরিচর্যা করছি।
উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মোহাম্মদ নূরে আলম জানান, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি অফিসারকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে লিচু চাষীদের সাথে উঠান বৈঠক, পরামর্শ সভা করে যাচ্ছি কিভাবে বিষমুক্ত নিরাপদ ফল উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছি।
তিনি আরো জানান, লিচু চাষে সার ও সেচ ব্যবস্থানা খুবই জরুরী। সঠিক সময়ের সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা লিচু ছিদ্রকারী পোকা ব্যবস্থাপনার জন্য ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার ও অন্যান্য পোকার রোগ দমনে বিভিন্ন ধরনের জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছি। এবছর অন্তত ১০০ হেক্টর জমিতে লিচু নিরাপদ উপায়ে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। নিরাপদ লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। নিরাপদ লিচু উৎপাদনে কৃষকের খরচ যেন কম হয় এবং নিরাপদ ফল (লিচু) এর বাজার মূল্য বেশি থাকায় কৃষকেরা জৈব প্রযুক্তি ব্যবহারে দিন দিন উৎসাহিত হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ জানান, এবছর বিজয়নগর উপজেলায় ৪৩০ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে যা থেকে ৪৫ কোটি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অনুমান করা হয়েছে। লিচু গাছ এখন মুকুলে মুকুলে ভরে উঠেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার লিচুর বাম্পার ফলন হবে এবং লক্ষ্যমাত্রায় ছাড়িয়া যাবে। আমাদের সকল উপ-সহকারী কৃষি অফিসারসহ সংস্কৃত সকলকে লিচু চাষীদের পাশে থেকে যথাযথ পরিচর্যা ও রোগবালাই দমনের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশনা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।