অনেক ভালোবেসে ফুফাতো ভাই ফয়সালকে বিয়ে করেছিলেন খাদিজা আক্তার। তার স্বপ্ন ছিল সারাজীবন একসঙ্গে সুখে কাটাবেন দাম্পত্য জীবন। কিন্তু যৌতুকের বলি হয়ে অকালে এ পৃথিবী থেকে চলে গেলেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যৌতুকের জন্য স্বামী, শাশুড়ি-শ্বশুর মিলে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে গোপনে লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার কদমতলী গ্রামে দাফন করতে এলে মেয়ের বাড়ির লোকজনের সন্দেহ হয়। তারা লাশের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়ে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়।
নিহত খাদিজা আক্তার স্বামীর সঙ্গে ঢাকার দক্ষিণ পীরেরবাগ এলাকায় বসবাস করতেন। এ ঘটনায় নিহতের মা ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে ঢাকার মিরপুর মডেল থানায় সোমবার দুপুরে একটি হত্যা মামলা করেছেন।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে স্বামী ফয়সাল আহমেদকে (২২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মামলাসূত্রে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দরিয়াদৌলত ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের সৌদি প্রবাসী আবু মিয়ার মেয়ের সঙ্গে একই গ্রামের খায়ের মিয়ার ছেলে ফয়সাল মিয়ার বিয়ে হয় গত ছয় মাস আগে। বিয়ের পর থেকে স্বামীর সঙ্গে ঢাকার দক্ষিণ পীরেরবাগ এলাকায় বসবাস করে আসছে। বিয়ের পর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন যৌতুকের জন্য মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে আসছিল।
গত জানুয়ারি মাসে যৌতুক হিসেবে এক লক্ষ টাকা ছেলের পরিবারকে দেয় মেয়ের পরিবার। তার পরও আরও যৌতুকের জন্য তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল।
লাশ গোসল করানোর সময় মেয়ের মা ও কয়েকজন কদমতলীতে ছেলের বাড়িতে গিয়ে মেয়ের লাশ দেখতে পেয়ে তাদের সন্দেহ হয়, তারা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। পরে রাত ১১টার দিকে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় খবর দিলে থানা থেকে একদল পুলিশ এসে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য থানায় নিয়ে যায়।
নিহতের মা ফাতেমা বেগম জানান, তিনি মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে লোকজনসহ গেলে তাদের কথাবার্তা সন্দেহ হলে মেয়ের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখে থানায় খবর দিই।
নিহত মা ফাতেমা বেগম জানান, আমার মেয়ে ভালোবেসে পরিবারের অমতে জোর করেই বিয়ে করে তার ফুফাতো ভাই ফয়সালকে। বিয়ের পর থেকে ঢাকার দক্ষিণ পীরেরবাগে একটি ভবনের ছয় তলায় বসবাস করে আসছিল। শ্বশুরবাড়িতে বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিল তারা।
এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক শ্রীধাম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে— যৌতুকের জন্য তাকে হত্যা করা হয়েছে। ঘাতক স্বামী ফয়সালকে আমরা তার গ্রামের বাড়ি বাঞ্ছারামপুরের কদমতলী থেকে গ্রেফতার করেছি। নিহতের মা ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে ফয়সাল, তার বাবা খায়ের মিয়া ও মা ময়না বেগমের নামে একটি হত্যা মামলা করেছেন মিরপুর মডেল থানায়। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছি।