ফেসবুকের অপব্যবহার বন্ধ হোক

মতামত, 10 September 2022, 440 বার পড়া হয়েছে,

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ফেসবুক। শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অ্যাপ ফেসবুক। অ্যাপটির জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। কে ব্যবহার করছে না এটি! আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই বুঁদ হয়ে আছে ফেসবুকের মায়াবী রাজ্যে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ফেসবুকের মাসিক সক্রিয় সদস্য দুই বিলিয়ন অর্থাৎ ২০০ কোটি।

যোগাযোগ ব্যবস্থার এই সাইটটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। তবে ২০০৩ সালে মার্ক জুকারবার্গ কর্তৃক নির্মিত ফেসমাস নামের সাইটটির উত্তরসুরী হিসেবেই ফেসবুকের জন্ম। ফেসবুকের মাধ্যমে আমরা সহজেই পরিচিতজনের সাথে আন্ত যােগাযােগ স্থাপন করতে পারি। আমাদের দেশে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা ও ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে বিপদের আশংকা বহুগুন বেড়ে গেছে।
পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন বয়সি, শ্রেণি, পেশা, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ এই মাধ্যমটি ব্যবহার করে। সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় ও আর্কষণীয় মাধ্যম এখন ফেসবুক। ২০০৪ সালে মার্ক জার্কারবার্গের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের এই এ্যাপটি নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা ও বির্তকের  যেন শেষ নেই। ফেসবুকের প্রভাব নিয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষণার সংখ্যাও কম নয়। উদ্ভাবনের পর মাত্র ১৭ বছরে কাম্পউটার প্রযুক্তির অন্য কোনো এ্যাপ্লিকেশন বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষের মাঝে এমন সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ফেসবুক। শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অ্যাপ ফেসবুক। অ্যাপটির জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। কে ব্যবহার করছে না এটি! আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই বুঁদ হয়ে আছে ফেসবুকের মায়াবী রাজ্যে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ফেসবুকের মাসিক সক্রিয় সদস্য দুই বিলিয়ন অর্থাৎ ২০০ কোটি।
সারাবিশ্বে কয়েকশ কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। বাংলাদেশে এই সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। ফেসবুকে একই পরিবারের সদস্যরা যেমন বাবা, মা, ভাই-বোন, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা একই সাথে কোনো ব্যক্তির বন্ধু তালিকায় স্থান পাচ্ছে। পারিবারিক সদস্যদের বাইরে অন্যান্য বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী, রাজনৈতিক নেতা, ধর্মীয় গুরু, বিভিন্ন  শ্রেণি ও পেশার মানুষ একইসাথে একই ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছে। সুতরাং নিঃসন্দেহে এই মাধ্যমটির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। ফেসবুককে কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত সম্প্রচার মাধ্যম হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। ফেসবুকের কল্যাণে সামাজিক যোগাযোগের মাত্রা দ্রুত বেড়েছে। ফেসবুকে যে কেউ তার ব্যক্তিগত আবেগ, অনুভূতি, ছবি ও ভিডিও আপলোড করে সবার সাথে শেয়ার করতে পারে। সমসাময়িক রাজনীতি, অর্থনীতি, সাহিত্য ও সামাজিক বিষয় নিয়ে যে কেউ এখন ফেসবুকে লিখতে পারেন; তাদের মতামত তুলে ধরতে পারেন।
অনলাইনে ব্যবহারকারীর প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত হওয়া খুবই জরুরি। প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত করা হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের হয়রানি কমবে। পাশাপাশি ব্যবহারকারীদেরও নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হচ্ছে টিনএজ নারীরা। এ বয়সের একটি আবেগ থাকে। এ কারণে তারা তাদের বন্ধুদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবিও তুলছে। বন্ধুরা সেসব ছবি ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়ে তাকে হয়রানি বা ব্লাকমেইল করছে। এজন্য বন্ধুত্ব করার ক্ষেত্রে নারীদের আরও বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন। হয়রানির শিকার নারীদের আইনি সহায়তা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেসবুক আমাদের জীবনের বড় একটি সময় কেড়ে নিচ্ছে। বিজনেস ইনসাইডারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে মানুষ গড়ে প্রায় এক ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় করছে প্রতিদিন ফেসবুক স্ট্যাটাস আপডেট, ছবি আপলোড, চ্যাটিং বা হোমপেজ ব্রাউজিং করতে। আর টিনএজরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরও বেশি জড়িয়ে পড়ছে। নাওয়া-খাওয়া, ঘুমের চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করছে ফেসবুকে। ফেসবুক আসক্তি এখন একটা মারাত্মক নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি ‘ডিজিটাল কোকেন’ অ্যাডিকশনের মতো হয়ে গেছে। আজকাল তরুণ প্রজন্ম একবার ফেসবুকের মধ্যে ঢুকলে আর বের হতে চায় না। একথা অনস্বীকার্য, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সবার হাতে হাতে পৌঁছে গেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করায় বাস্তবে ইয়ং জেনারেশনে খুব একটা ক্রিয়েটিভ হচ্ছে না। ইয়ং জেনারেশনের ভেতরে ম্যাক্সিমাম ব্যবহার করে ফেসবুক চ্যাটিং করার জন্য। এটি ক্রিয়েটিভ ইউজ না। তরুণদের ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হতাশা থেকে শুরু করে ঘুম কম হওয়াসহ নানা অসুস্থতার জন্যও একে দায়ী করা হচ্ছে। কাজেই ফেসবুক ব্যবহারে প্রয়োজন সচেতনতা। আর শিশু কিংবা উঠতি বয়সীদের ফেসবুক ব্যবহারে প্রয়োজন সঠিক দিকনির্দেশনা।
গত বছরের এক হিসাব অনুযায়ী, দেশের অনলাইন ব্যবহারকারী ৭০ শতাংশ নারীই কোনো না কোনো ধরনের হয়রানির শিকার। শুধু দেশই নয়, বিশ্বজুড়ে অনলাইনে নারী হয়রানির এমন ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাইবার নিরাপত্তা শাখার তথ্যমতে, তথ্যপ্রযুক্তি অবাধ বিচরণের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ভূমিকা রাখছে আবার এসব মাধ্যমে নারী হয়রানির ঘটনাও বাড়ছে। পুলিশের দাবি, অভিযোগকারীদের প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই সাইবার নিরাপত্তা ইউনিট থেকে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রতিকার করা সম্ভব হচ্ছে।

ফেসবুকের ব্যবহার, অপব্যবহার ও প্রভাব নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। পত্র-পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। সেসব গবেষণা ও লেখা থেকে জানা যায়, নাগরিকদের ভাবনা-চিন্তা তুলে ধরার ক্ষেত্রে ফেসবুক একটি জনপ্রিয় প্লাটফর্ম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় নাগরিকরা কোন ইস্যুকে প্রাধান্য দিচ্ছে তা প্রতিফলিত হচ্ছে এই মাধ্যমে। জনমত গঠনে ও সচেতনতা সৃষ্টিতেও ফেসবুকের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বেশ কিছু ঘটনার ভিডিও এবং ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর মেইন স্ট্রিম গণমাধ্যমগুলো তা প্রচার করে। জাতীয় পর্যায়ের অনেক পত্রিকাই এখন ফেসবুক কর্নার নামে নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রচার করে। ফেসবুকে প্রকাশিত রাষ্ট্র, সমাজ ও আইনবিরোধী কার্যকলাপ  প্রকাশিত হলে রাষ্ট্র, সরকার বা আইনশৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। প্রতিদিনের কার্যকলাপ, লেখাপড়া, রাজনীতি, সমাজসেবা, রান্নাবান্না এবং অনলাইন ব্যবসার জন্যও অনেকে ফেসবুক ব্যবহার করেন। ফেসবুক অর্থনীতি এখন বিশাল অঙ্কের। অর্থাৎ সারা পৃথিবীর জনসংখ্যার বিশাল এক অংশ এখন ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের দৈনন্দিন কাজের বড়ো একটি অংশ সম্পাদন করেন যা অনস্বীকার্য।

ফেসবুক প্রধানত পারস্পরিক যোগাযোগ, জনমত তৈরি, সমাজসেবামূলক, সৃজনজনশীল ও ব্যাবসায়িক-অর্থনৈতিক কাজের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হলেও নানা নেতিবাচক ও অপরাধমূলক কাজে এর ব্যবহারও আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ফেসবুকের কারণে অনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেড়েছে। তরুণ প্রজন্মের বড় একটি অংশ অতিমাত্রায় ফেসবুকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। যা তাদের মেধা ও মনন বিকাশের অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। ফেসবুকে কোনো নারীর নগ্ন ছবি বা ভিডিও আপলোড করা, নারীদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করা, স্পর্শকাতর বিষয়ে অপপ্রচার চালানো, সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্র ধর্মীয় মতবাদ ছড়ানো, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও গুজব ছড়ানো নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে ওঠেছে। মতাদর্শগতভাবে পৃথক গ্রুপগুলো ফেসবুকের মাধ্যমে একে অপরকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে। অশ্লীল, কুরুচিকর ও উদ্দেশ্যমূলক মন্তব্য, বানোয়াট কিংবা মিথ্যা তথ্য প্রকাশ ও সম্মানহানিকর মন্তব্য প্রকাশ করছে। বিশেষ করে নারীদের বিরুদ্ধে সাইবার বুলিংয়ের ভয়াবহ অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও অন্যের ছবিতে আরেকজনের ছবি সুপার ইম্পোজ করে পর্নোগ্রাফির মতো কুৎসাও রটনা করা হচ্ছে। এছাড়াও ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নারীদেরকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ কিংবা পাচারের কথাও শোনা যায়। সমাজে বিভক্তি সৃষ্টি, সামাজিকভাবে কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং ব্যক্তিগত ক্রোধের কারণে কাউকে মানসিক যন্ত্রণা দেওয়ার মতো প্রভাবও রয়েছে ফেসবুকের। অনেকেই নামকরা ব্যক্তি বা সেলিব্রেটির সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে অন্যদেরকে প্রতারিত করেন। ফেসবুকে অনেককে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়।

অনেকের মতে, বৈষম্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থায় ফেসবুক ব্যক্তির মানসিক অবস্থার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। সমাজে যারা ধনবান ফেসবুকে তাদের জীবনযাত্রার ধরন যেমন বিদেশ ভ্রমণ, ভালো খাবার, ভালো বাড়ি, দামি গাড়ি, সন্তানদের ভালো স্কুলে পড়ালেখা, অবসর বা বিনোদন যাপনের আড়ম্বরপূর্ণতা, ইত্যাদির প্রদর্শনি সমাজে যারা পিছিয়ে রয়েছে তাদের মানসিক অবস্থার ওপর প্রভাব ফেলছে। তাদের মধ্যে একধরনের হতাশাবোধ তৈরি করছে। আবার অনেকেই মনে করেন, ফেসবুককে কেন্দ্র করে সমাজের এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে অহমিকাবোধ তৈরি হচ্ছে। আমিই সেরা, আমিই উত্তম এমন মনোভাব সৃষ্টিতে ফেসবুক ভূমিকা রাখছে। অনেক সময় অনেকেই অপ্রয়োজনে তাদের ফেসবুকের পেজ ভরে রাখেন বিভিন্ন খাবার-দাবার এর ছবি দিয়ে। যেসব খাবার হয়ত অনেকেই খেতে পারেন না বা পরিবারের কোনো সদস্য বিশেষ করে নিজ সন্তানদেরকে দিতে পারেন না। এজন্য হীনমন্যতায় ভোগেন। এসবই সমাজে বৈষম্য ও হতাশা বাড়িয়ে তোলে।

এসব সমালোচনা সত্ত্বেও ফেসবুক বর্তমানে মানুষের জীবনে ব্যাপক প্রভাব রেখে চলেছে। পৃথিবীর এক প্রান্তের মানুষকে আরেক প্রান্তের মানুষকে যুক্ত করছে ফেসবুক। প্রিয়জনের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে দেয় ফেসবুক।  ফেসবুকের কল্যাণে অনেকেই তাদের হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের ফিরে পাচ্ছেন। অনেকেই বিপদ আপদে ফেসবুকে বার্তা প্রদান করে সাহায্য পাচ্ছেন। অপরদিকে, ফেসবুক মাধ্যমের সদস্যরা নির্দিষ্ট কাউকে বন্ধু হিসেবে বেছে নিতে পারেন। আবার কারও বন্ধুত্বের আহ্বান ফিরিয়েও দিতে পারেন। কোনো বন্ধুকে বন্ধু তালিকা থেকে বাদ দিতে পারেন কিংবা ব্লক করে দিতে পারেন। কারো ছবি বা ভিডিও কিংবা বক্তব্য পছন্দ হলে লাইক ও মন্তব্য করতে পারেন আবার নাও পারেন। এ অবাধ স্বাধীনতা ফেসবুক ব্যবহারকারীর রয়েছে।

ফেসবুকে ব্যবহারের ভালো মন্দ উভয় দিকই রয়েছে। এটা মূলত: নির্ভর করে কে কোন্ উদ্দেশে এটাকে ব্যবহার করছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুকের নিজস্ব কোনো খারাপ দিক নেই। খারাপ, ভালো নির্ধারিত হয় ব্যবহারকারী ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের মানসিকতার ওপর। সম্প্রতি ফেসবুকের এক সাবেক কর্মী ফেসবুকের বিপক্ষে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেছেন যা নিয়ে আমেরিকার সিনেট কমিটিতে শুনানি পর্যন্ত হয়েছে। এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরুষ্কারজয়ী একজন সাংবাদিকও ফেসবুক নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের দায় দায়িত্ব নিয়ে কথা বলেছেন।

ফেসবুক কর্তৃপক্ষও স্বীকার করেছেন যে ফেসবুকের মাধ্যমে যেসব নেতিবাচক কর্মকা- সংঘঠিত হয় তা নিয়ন্ত্রণের জন্য ইন্টারনেটে ব্যবহারের কিছু নিয়মকানুন তৈরির সময় এসেছে। এসবই সত্য। তবে সবচেয়ে বড়ো বিষয় হলো যারা এটা ব্যবহার করে তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি না হলে যত নিয়মকানুনই তৈরি করা হোকনা কেনো এর অপব্যবহার ঠেকানো সম্ভব হবেনা। সেজন্য বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে অনেক পথ বাতলে দিয়েছেন। যেমন, অনৈতিক কাজ বন্ধ করার জন্য অ্যাকাউন্ট সিকিউরিটি বৃদ্ধি করা, অশালীন ছবি ও তথ্য সম্পর্কে একটা শালীন নীতিমালা প্রণয়ন করা, ব্যবহারকারীদের নীতি ও নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করা এবং ফেসবুকের নেতিবাচক দিক বর্জন করতে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি পরিচালনা করা। অভিভাবকদের আরো সচেতন হওয়া, আইনশৃংখলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো, ইত্যাদি। সেসব কার্যকর করা গেলে এর অপব্যবহার কমানো যাবে। তা করা না  গেলে- একমাত্র উপায় হবে ফেসবুকের মতো জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যমটিকে বন্ধ করে দেয়া। যেটি বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় অসম্ভব বলে প্রতীয়মাণ হয়।

লেখক – জাকারিয়া জাকির,নির্বাহী সম্পাদক জনতার খবর