এদিকে গত ৭ আগস্ট পশ্চিম কেদেরখোলা বালুমহালের সঠিক সীমানা নির্ধারণসহ অপরিকল্পিত ও নিয়মবহির্ভূত বালু উত্তোলন বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে লিখিত দেন উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কেদেরখােলা পশ্চিম বালুমহালের আয়তন ২০ একর। গত ১৫ জুলাই করা বিআইডব্লিউটিএ এর হাউড্রোগ্রাফিক জরিপের নিয়মকে তোয়াক্কা না করে যেখানে ২-৩টি ড্রেজার চালানোর অনুমতি আছে সেখানে ১০০ থেকে ১২০ একর জায়গায় ৮০-৯০ফুট গভীর থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ২০-২৫টি ড্রেজার দিয়ে গড়ে ১৫-২০লাখ ঘনফুট বালু তোলা হচ্ছে। এভাবে নিয়মবহির্ভূত বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে উপজেলার শিবপুর, দাসকান্দি, নজরদৌলত, ছয়ঘরহাটি হয়ে কেদেরখোলা পর্যন্ত গ্রামগুলো ফসলি জমি ও বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়ায় গত ১৩ জুলাই মো. বরকত উল্লাহ সাগরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাহানারা কন্সট্রাকশন এন্ড সাপ্লাইয়ার্সকে আড়াই কোটি টাকায় বাংলা সনের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত কেদেরখোলা বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়। প্রতিদিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কেদেরখোলা মৌজা থেকে বালু উত্তোলনে ইজারা পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১০টি ড্রেজার ব্যবহার করার শর্ত দেয়া হয়েছে।
নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কবির আহমেদ, ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী সরকারসহ দাসকান্দি ও শিবপুর গ্রামের লোকজন বলেন, বীরগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হোসেন সরকার, সাবেক সাধারণ সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন ও বীরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, সাবেক ইউপি সদস্য ইউসুফ মিয়া ও বিএনপির কর্মী হাবিব মিয়ার নেতৃত্ব দিয়ে চলছে এই বালু উত্তোলন। এসবের প্রতিবাদ করায় ইজারাদারের লোকজন আলমগীর হোসেনকে প্রধানসহ ১০জনকে আসামী করে তহশিলদারকে দিয়ে একটি মামালা করিয়েছেন। তারা ক্ষোভ নিয়ে বলেন, গ্রাম ও ফসলি জমি বিলীন হলে কোনো সমস্যা নেই তবু বালু উত্তোলন চলমান থাকা চাই। গ্রাম, ফসলি জমি ও মানুষ থেকে বালু গুরুত্বপূর্ণ।
দাসকান্দি গ্রামের নারায়ন চন্দ্র দাস ও আশ্রাফ উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কেদেরখোলা মৌজার বাইরে থেকে এবং রাত থেকে ভোর সকাল পর্যন্ত নদীর তীর থেকে ১০০ থেকে ১৫০ ফুট দূর থেকে তারা বালু উত্তোলন করছেন। কিছু বলা যায় না তাদের। ভয় দেখান। আমাদের শিবপুরসহ আমাদের গ্রাম হুমকির মধ্যে রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় চার লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন তুলে লাখ লাখ টাকা তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এখানে লাখ লাখ টাকার খেলা চলছে।
উপজেলার শিবপুর গ্রামের ফয়সাল রানা ও জাকির হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাদের লোকজন দিনে ও রাতে ছুরি, দা, বল্লম ও ক্রিজ নিয়ে বালু উত্তোলনের সময় নৌকায় পাহাড়ায় থাকেন। তাদের কিছু বলা যায় না। রাতের বেলায় পাড়ের কাছে এনে ড্রেজার লাগিয়ে তারা বালু তুলছে।
বীরগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, আমরা নির্ধারিত সীমানা থেকে বালু তুলতেছি। উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি তদারকি করছেন।
বীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি এর সঙ্গে জড়িত না। যারা এখন অভিযোগ করছেন, তারা নিজেদের লাভের জন্য এমন অভিযোগ করছেন।
ইজারাদার বরকত উল্লাহ সাগর ফোন ধরেননি।
বীরগাঁও ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা সালেক আহমেদ বলেন, রোববার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বালুমহালের নির্ধারিত সীমানার প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ ফুট বাইরে বালু উত্তোলন করতে দেখা গেছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন স্যারদেরও জানানো হয়েছে।
নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর ফরহাদ বলেন, ইজারার নির্ধারিত জায়গার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর ব্যতিক্রম হলে আমরা ব্যবস্থা নিব। তারা ১০টির বেশি ড্রেজার ব্যবহার করতে পারবে না। ১০টি বেশি ড্রেজার ব্যবহার করলে আমরা সেগুলো জব্দ করব।