ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহের নামে মিল মালিকদের কাছ থেকে বিবর্ণ চাল নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সরকারীভাবে বিবর্ণ চাল নেওয়ার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা আমলে নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশন হওয়ার পর তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত সোমবার তদন্ত কমিটির সদস্যরা তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
আশুগঞ্জ খাদ্য গুদাম সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামকে ২৯ হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন বোরো চাল সংগ্রহের নির্দেশ দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। সিদ্ধ চাল ৪০ টাকা কেজি দরে ২২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন এবং ৩৯ টাকা কেজি দরে আতব চাল ৬ হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন। গত ২৭ জুলাই পর্যন্ত মোট ১৩ হাজার ৩৪০ মেট্রিক টন সিদ্ধ এবং ৫ হাজার ৪৪৮ মেট্রিক টন আতব চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।
এছাড়া ২৭ টাকা কেজি দরে ৫৭৭ মেট্রিক টন বোরো ধান সংগ্রহ করার কথা থাকলেও গত ২৭ জুলাই পর্যন্ত কৃষকদের কাছ থেকে মাত্র ৬৫ মেট্রিক টন বোরো ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। চলতি বছরের ১৬ মে থেকে আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহ শুরু হয়। আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামের অধীনে এখানকার ১৮৫টি রাইস মিল থেকে এই চাল সংগ্রহ করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ১৬ টি ড্রায়ার ও (অটোমেটিক রাইস মিল) রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, গুদাম কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে মিল মালিকরা নিম্নমানের ও বিবর্ণ চাল গুদামে সরবরাহ করছেন। গুদাম কর্তৃপক্ষকে প্রতি কেজি চালে ৫৭ পয়সা করে কমিশন দিচ্ছেন।
অভিযোগকারীরা জানান, গুদামে চাল সরবরাহ করে পাওয়া চেক ব্যাংকে ক্যাশ হওয়ার পরই মিল মালিকরা গুদাম কর্তৃপক্ষকে কমিশনের টাকা দিয়ে দেন। বছরে কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য চলে আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামে।
চলতি মৌসুমে আশুগঞ্জ উপজেলার ১৮৫টি মিল মালিকের কাছ থেকে ২৯ হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন বোরো চাল সংগ্রহ করা হবে।
এই চাল সংগ্রহে প্রতি কেজিতে ৫৭ পয়সা করে মোট এক কোটি ৬৮ লাখ ৫৪ হাজার ৯০০ টাকা কমিশন আদায় হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা চাতাল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম ভূইয়া স্বপন বলেন, সরকার নির্ধারিত চালের মূল্যের চেয়ে বাজার মূল্য বেশী হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। বিবর্ণ চাল নেওয়ার বিষয়টি আমিও শুনেছি।
আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সুলাইমান মিয়া বলেছেন, মাস দেড়েক আগে এখানে যোগদান করেছি। ড্রায়ারের ( অটোমেটিক রাইস মিল) চাল ক্রিম কালারের হয়। ব্যবসায়ীদের ভালো চাল দেয়ার জন্য অনুরোধ করে যাচ্ছি। কমিশন বাণিজ্য কিংবা নিম্নমানের চাল সংগ্রহের অভিযোগ সত্য নয়। অভিযোগ উঠার পর তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাকারিয়া মোস্তফা বলেন, খাদ্য গুদামে বিবর্ণ চাল নেওয়ার অভিযোগ উঠার পর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ তিনি খাদ্য গুদাম পরিদর্শন করেছেন। অভিযোগ উঠেছে তাই রবিবার বিজয়নগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নূর আলীকে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বিবর্ণ চাল নেয়ার বিষয়টি প্রমাণ হলে আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।