এখনও শেষ হয়নি কাজ। তার আগেই বেঁকে গেছে দরজা। ফাঁকফোকরও সৃষ্টি হয়েছে। পাল্টফরম ঢালাইয়ের কাজও নিম্নমানের। বড় কথা হচ্ছে এসব কাজের কোন তদারকি নেই। কাজ তদারকের দায়িত্ব যে কর্মকর্তা তার দেখা যেমন মিলে না, তেমনি ঠিকাদারেরও। গুরুত্বপূর্ন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল ষ্টেশনের এমন কাজ নিয়ে চাপা ক্ষোভ জমা হয়েছে ষ্টেশনের কর্মচারীদের মধ্যেই।
এদিকে ৬ মাসের বেশি সময় ধরে অচল ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন। যাত্রা বিরতি নেই অধিকাংশ ট্রেনের। তাতে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে। জেলা সদরের যাত্রীদের ৩০/৪০ কিলোমিটার দূরে আশুগঞ্জ বা আখাউড়া রেলস্টেশনে গিয়ে ট্রেনে উঠতে হচ্ছে। ষ্টেশনের এই অবস্থায় মাসে কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়-দরজা নিম্নমানের এবং ফাঁকফোকর সৃষ্টি হওয়ায় টিকেটিং ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা সিএনএন নামক প্রতিষ্ঠান তাদের জন্যে বরাদ্দ করা কক্ষ বুঝে নেয়নি। ষ্টেশনের অনেকে জানান-ঢালাইয়ের কাজে রড যথাযথ ব্যবহার করা হয়নি। নিম্নমানের সিমেন্ট দিয়ে কাজ সারা হচ্ছে। বিভিন্নস্থানে গাঁথুনিতে ইট বসানো হচ্ছে মাটি-ময়লা-আবর্জনার ওপরই।
পাল্টফরম উঁচুকরণ এবং প্লাটফরম বিল্ডিংয়ের মেরামত কাজ করছে মাহফুজ ট্রেডার্স ও রেজাউল মোল্লা নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে প্লাটফরম উঁচুকরণ কাজের বরাদ্দ ১ কোটি টাকা। আর পাল্টফরম বিল্ডিংয়ের মেরামত কাজ হচ্ছে ৪৩ লাখ টাকায়।
ষ্টেশনের কাজের মান নিয়ে ক্ষুব্ধ শহরের নাগরিকরাও। রেলস্টেশন সচল করার দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধন-বিক্ষোভে এ বিষয় নিয়ে নাগরিকরা অভিযোগ তুলছেন বারবার। ঠিকাদাররা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী কারও আত্মীয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। সে কারণে এই ষ্টেশনের কাজ চলছে ঠিকাদারের মর্জিমতো। আবার তদারককারী কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশিকুর রহমানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে। হাত বদলে তিনি নিজেই একাজের ঠিকাদারি বাগিয়ে নিয়েছেন। ষ্টেশনে গিয়ে ঠিকাদার রেজাউল মোল্লা ও জহির কারও দেখাই পাওয়া যায়নি।
জহির ঢাকায় আর রেজাউল ভৈরব আছেন বলে জানান। তবে মোবাইলে রেজাউল মোল্লা জানান-কাজের বিষয়ে এখন কিছুই জানানো যাবে না। সিক্রেসির বিষয় আছে। কাজ দেখার দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান বলেন- কাজ নিম্নমানের হচ্ছে সেটা বুঝলেন কিভাবে।তিনি এখান থেকে ভৈরব বদলী হয়ে গেছেন বলে জানান।
ষ্টেশনের অচলাবস্থা নিরসন এবং নিম্নমানের কাজের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রয়েছে জেলার নাগরিক সংগঠনগুলো। এই দাবীতে পূর্বাঞ্চল রেলপথ অচল করে দেয়ার আল্টিমেটামও রয়েছে তাদের।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরোধিতা করে গত ২৬-২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা। এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে ব্যাপক হামলা-ভাংচুর হয়। আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় স্টেশনের সবকিছু। এরপর থেকে এ স্টেশনে আন্তঃনগর, মেইল ও কমিউটার ট্রেনের যাত্রাবিরতি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ষ্টেশনের মর্যাদা ডি শ্রেণিতে নামিয়ে দেয়া হয়।
আন্দোলনের মুখে ঘটনার সাড়ে ৪ মাস পর ১৫ই জুন থেকে পুরনো আমলের সিগনালিং ব্যবস্থায় এখানে ৬ জোড়া ট্রেনের যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা করা হয়। আন্ত:নগর পারাবত,নোয়াখালী এক্সপ্রেস,তিতাস কমিউটার,কর্ণফুলী এক্সপ্রেস এবং নাসিরাবাদ যাত্রাবিরতি করলেও যাত্রীদের চাহিদার কোন ট্রেন এখানে থামছে না। প্রতিদিন এ ষ্টেশন থেকে ৬ হাজারের বেশি যাত্রী চলাচল করলেও এখন হাজার দু’য়েক যাত্রী চলাচল করতে পারছে। তাদেরও দুর্ভোগের শেষ নেই।
ষ্টেশনের মেরামত কাজ শেষ হলে আগামী একমাসের মধ্যে ষ্টেশন সচল হতে পারে বলে জানিয়েছেন ষ্টেশন মাষ্টার মো. শোয়েব। তিনি জানান,বিল্ডিং মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে। সিগন্যালের পয়েন্টগুলো সেট করা হয়েছে। তবে সিগন্যালের তার টানা শেষ হয়নি। মেশিনপত্র আসলে এই কাজ সম্পন্ন হবে। ১ কোটি টাকায় ব্রডগেজ লাইনের জন্যে প্লাটফরম উঁচু করা হচ্ছে। আর ৬০ লাখ টাকায় বিল্ডিং মেরামতের কাজ হচ্ছে বলে জানান তিনি। (সূত্র : আরটিভি)