মোঃ নিয়ামুল ইসলাম আকঞ্জি,ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের নন্দীপাড়ার কালীমন্দির চত্বরে বসে ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী ‘বউমেলা’। সব বয়সি নারী-পুরুষের মিলনমেলায় পরিণত হলেও মেলার নাম ‘বউমেলা’।
পঞ্জিকামতে মাঘ মাসের প্রথম দিনে এই মেলা জমে। প্রতিবছরের মতো মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল থেকেই এলাকার নানা বয়সি ছেলেমেয়ে, নারী-পুরুষ কেনাকাটার জন্য আসতে থাকে মেলায়। দুপুরের দিকে মেলা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে ক্রেতাদের পদভারে।
দর্শনার্থী নারীরা জানান, তারা প্রতিবছর নিজেদের ব্যবহারের জন্য কসমেটিকস ও ইমিটেশনের গয়না কেনেন এই মেলায়। এবারও এসেছেন। তবে এবার দাম কিছুটা বেশি। মেলায় চুড়ি, ফিতা, কানের দুল, মালা, আংটিসহ সব ধরনের ইমিটেশন রয়েছে।
সরাইল সদর থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার উত্তরে উপজেলার কালীকচ্ছ গ্রামের নন্দীপাড়ার কালীমন্দির চত্বরে এই মেলার আসর জমে। মেলা উপলক্ষে প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়স্বজনের আগমন ঘটে।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই ত্রিপল ও শামিয়ানা টানিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন দোকানিরা। মেয়েদের প্রসাধনীসামগ্রীই মেলার প্রধান উপজীব্য হলেও তার সঙ্গে স্থান পায় ছোটদের খেলনাসামগ্রী আর গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় সামগ্রী। জিলাপি, বাতাসা, মিষ্টান্নের দোকানে শিশুদের ভিড় দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ভিড় জমাতে শুরু করে নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সি লোকজন। স্থানীয়রা যুগ যুগ ধরে উৎসবমুখর পরিবেশে এই ঐতিহ্যবাহী বউমেলা উপভোগ করে থাকে।
মেলার আয়োজক কমিটির সহসভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বাউল সমিতির সভাপতি বাউল দূর্গা চরণ দাস জানান, শতবর্ষী এই মেলাটির প্রচলন হয় গ্রামের বউদের ঘিরে। শুরুর দিকে গ্রামীণ নারীরা এই মেলা থেকে প্রসাধনীসামগ্রী, অলংকার ও তৈজসপত্র কেনাকাটা করতেন। নারীদের ঘিরেই মেলা বসত, তাই মেলাটি বউমেলা হিসেবে পরিচিত।
একই গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগম জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীদের ঘিরেই প্রথম দিকে মেলাটির প্রচলন হলেও বর্তমানে সব বয়সের নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে। তবু ঐতিহ্য অনুযায়ী মেলাটি আজও বউমেলা হিসেবে পরিচিত। এটি আমাদের এলাকার ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।