আকাশজুড়ে মেঘের ঘনঘটা হোক বা না হোক, অঝোর ধারায় বৃষ্টির দেখা মিলুক আর নাই মিলুক; ঋতু পরিক্রমায় বাংলার বুকে আজ এসেছে প্রেমময়-উচ্ছল বর্ষা। রূপময় ঋতুর প্রথম দিন।
মানুষ প্রেমে পড়ে কদমের, বরষার এবং বৃষ্টির রিমঝিম মায়াময়ী শব্দের। কারণ আষাঢ় সকলের ভালোবাসার। আকাশে মেঘেদের আনাগোনা থাকুক কিংবা না থাকুক, বৃষ্টির অঝোর ধারা আসমান হতে বেয়ে পড়ুক কিংবা না পড়ুক আজ প্রেমময় পহেলা আষাঢ়। রুপময় বাংলাদেশের ঋতু পরিক্রমায় আজ আগমন ঘটেছে প্রেমের ঋতু বর্ষার।
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খরতাপে দাহ্যমান জনজীবনে শীতলতার পরশ ভোলানোর বারতা নিয়ে আগমন ঘটে বর্ষার। এ উপলক্ষে প্রকৃতি সাজে এক অপরূপ সাজে। ফুল-গাছ-লতাপাতায় নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়৷ এককথায় বলতে গেলে আষাঢ়কে কেন্দ্র করে যেন প্রকৃতিতে বেজে উঠে প্রাণের সঞ্জীবনী গান। এ গান সকলের, সকল জীবের।আষাঢ় মানুষকে প্রেম শেখায়। ভালোবাসতে শেখায়। হাসতে ও কাঁদতে শেখায়। এ আষাঢ়ের প্রেমে পড়েই হয় তো বৈষ্ণব কবি বিদ্যাপতি তাঁর লেখায় আষাঢ় বন্দনা করেছেন। আষাঢ়ের গভীর আষাঢ়ীয় প্রেমে মত্ত হয়ে হয় তো কালিদাস তাঁর ‘মেঘদূত’ কাব্যগ্রন্থে লিখেছেন-
আষাঢ়ষ্য প্রথম দিবসে মেঘমাসৃষ্ট সানুং
বপ্রক্রীড়া পরিণতগজ প্রেক্ষণীয়ং দদর্শ।আষাঢ়ে থাকে অবিরাম বৃষ্টি। আকাশের থাকে মন খারাপ। কখন কাঁদে আকাশ আর কখন হাঁসে তার হিসাব কষা দূরুহ। গ্রামের উচ্ছ্বলা গৃহবধূ স্নান শেষে ভিজা কাপড় রোদে শুকাতে দিয় ঘরে যাওয়ার আগেই বৃষ্টির হামলা। অথবা ফর্সা আকাশ দেখে ছাতা ছাড়া ঘর হতে বের হওয়া বৃদ্ধের কাক ভেজা হয় ঘরে ফেরা কিংবা বটবৃক্ষের তলে আশ্রয় নেওয়া। এ আমাদের চিরচেনা গ্রামীণ দৃশ্য। এমনটা ঘটে হরহামেশাই। আষাঢ় কখন আসে, কীভাবে এলো আষাঢ় শব্দ। ১৪২৯ বাংলা সন চলছে। আষাঢ় বাংলা সনের তৃতীয় মাস। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে জুন-জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আষাঢ় মাস। আষাঢ় নামটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া ও উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। এমাসে প্রচুর বৃষ্টি হয়। গ্রীষ্মের দাবদাহ শেষে আষাঢ়ে বৃষ্টির ছোঁয়ায় বাংলার প্রকৃতি যেন প্রাণ ফিরে পায়। নতুন আনন্দে জেগে উঠে প্রকৃতি। গ্রীষ্মের রুদ্র প্রকৃতির গ্লানি আর জরাকে ধুয়ে মুছে প্রশান্তি স্নিগ্ধতা আর সবুজে ভরে তোলে বর্ষা।