তালেবানের কবল থেকে বাঁচতে আফগান নারীরা তাদের সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলছেন বলে দাবি করেছেন তালেবানের হামলায় চোখ হারানো সাবেক আফগান নারী পুলিশ কর্মী খাতেরা (৩৩)।
তিনি জানান, তালেবান সদস্যরা কোনো নারীর শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ পেলে অত্যাচার চালাতে পারে। এই ভয়ে অনেক পরিবারই মেয়েদের সার্টিফিকেট পুড়িয়ে দিচ্ছেন বলে খাতেরার বেশ কয়েকজন আত্মীয় তাকে জানিয়েছেন।
আফগানিস্তানের গজনি শহরে বাস করতেন খাতেরা। একদিন কাজ থেকে ফেরার পথে অন্তঃসত্ত্বা খাতেরাকে আটকান তালেবানের কয়েকজন সদস্য। পরিচয়পত্র দেখার পর ক্ষেপে যায় তারা। তাকে বেশ কয়েকবার গুলি করা হয় বলে দাবি করেছেন খাতেকা।
খাতেরার বাবা ছিলেন একজন সাবেক তালেবান যোদ্ধা। বাবাই তালেবানের কাছে খাতেরার খবর পৌঁছে দেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
খাতেরা জানান, তারা (তালেবান) প্রথমে নারীদের ওপর নির্যাতন চালাতো। এরপর শাস্তির ভয়াবহতা বোঝাতে নারীদের শরীরগুলো ফেলে দেওয়া হতো। এমনকি অনেক সময় নির্যাতনের শিকার নারীদের শরীর কুকুরকে খাওয়ানো হতো। আমি ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই।
তালেবানের হামলার পর চিকিৎসার জন্য দিল্লি পালিয়ে যান খাতেরা। বর্তমানে দিল্লিতেই স্বামী আর সন্তান নিয়ে বাস করছেন তিনি।
তিনি বলেন, তালেবান নারীদের কোনো পুরুষ চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে দিত না। আবার নারীদের পড়াশুনা কিংবা চাকরিও করতে দিত না। তাহলে নারীদের সামনে আর কোন পথ খোলা থাকে, মৃত্যু ছাড়া।
তিনি জানান, আফগান নারী আর তরুণ সমাজ এই ২০ বছরে অনেক এগিয়ে গেছে। নারীরা ২০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় অবধি পৌঁছাতে পেরেছিল। আফগান মেয়েদের স্কুলে যেতে দেখে খুব ভালো লাগত। কিন্তু সবকিছু এক সপ্তাহের মধ্যে বদলে গেল।
এর আগে ১৯৯৬-২০০১ সালের শাসনামলে তালেবান নারীদের স্কুল ও কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। পুরুষ আত্মীয় ছাড়া নারীদের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি বাইরে বের হওয়ার সময় নারীদের চেহারা দেখানো পুরোপুরি নিষিদ্ধ ছিল।
তবে এবার নিজেদের রক্ষণশীল মনোভাব থেকে অনেকটাই সরে এসেছে বলে দাবি করছে তালেবান। কাতারের দোহায় তালেবানের রাজনৈতিক দপ্তরের উপপ্রধান আব্দুস সালাম হানাফি নারী চাকরিজীবীদের কর্মস্থলে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
হানাফি বলেন, কারও প্রতি অবিচার করা হবে না এবং নারীরা তাদের হিজাব রক্ষা করে কর্মস্থলসহ সব কাজ স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যেতে পারবেন।