নিউজ ডেস্ক : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার-এর আয়োজনে বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মজয়ন্তী ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার সকালে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের হলরুমে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা-এর মহাপরিচালক, প্রফেসর ড. হাকিম আরিফ। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রুহুল আমিন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজ-এর উপাধ্যক্ষ, প্রফেসর ড. মো. ইব্রাহিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. জয়নাল আবেদীন, সাহিত্য একাডেমির সভাপতি, কবি ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক জয়দুল হোসেন।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম লিমন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, সাবেরা সোবহান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার মো. আব্দুর রহিম, উদীচী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংসদের সভাপতি, লেখক ও লোকগবেষক জহিরুল ইসলাম স্বপন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঝিলমিল একাডেমির পরিচালক মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদেরকে লেখাপড়ার পাশাপাশি মানবীয় গুণাবলিতে গুণান্বিত করে গড়ে তুলতে হবে। আর এই জন্য তাদেরকে বই পড়ায় অভ্যাস করে তোলার বিকল্প আর নেই। আমাদের যুগে এবং তার আগেকার যুগেও মানুষেরা পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই অনেক বেশি পরিমাণ পড়েছেন বলেই তারা সফল মানুষ হতে পেরেছেন। বর্তমান প্রজন্ম বই ছেড়ে প্রচÐ রকম ভাবে মোবাইল আসক্তিতে পড়েছে। ফলে এই প্রজন্ম আগামী কয়েক বছর পরে একটি মূর্খ প্রজন্ম হিসেবে গড়ে উঠবে বলে বিশেষজ্ঞগণ ধারণা প্রকাশ করছেন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে তাদেরকে অবশ্যই বই পড়ায় আগ্রহী করে তুলতে হবে। তিনি বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহারে কোন দোষ নেই। তবে তার সঠিক ব্যবহার না করলে প্রযুক্তি সমাজের জন্য আশীর্বাদের বদলে অভিশাপ হয়ে দেখা দেয়। মোবাইলের ব্যবহার যদি হতো সফট লেখা বা পিডিএফ বই পড়ার জন্য তাহলে অবশ্যই মোবাইল ছেলেমেয়েদের জন্য আশীর্বাদ হতো।
বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, আমরা বাঙালি, বাংলাভাষী, বাংলাদেশের অধিবাসী। আমাদের হাজার বছরের যে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে তার একটি হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। প্রতিটি জাতি গোষ্ঠীর নিজস্ব কিছু আচার অনুষ্ঠান থাকে। বেশিরভাগ বৃহৎ উৎসবগুলো ধর্মীয় উৎসব হলেও আমাদের এই পহেলা বৈশাখ একটি সার্বজনীন বৃহৎ উৎসব। বক্তব্যের তিনি বলেন, বাঙালি হিসাবে আমাদের রয়েছে হাজার বছরের কৃষ্টি- কালচার, আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। এ সকল গৌরব ও ঐতিহ্য সম্পর্কে তরুণদেরকে জানতে হবে। আর এই জানা তখনই সার্থক যখন তারা বাঙালি জাতিসত্তার প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ প্রমুখ মনীষীদের জীবন নিয়ে সম্পর্কে জানবে, তাদের লেখা বই পড়বে। এই মনীষীদের সম্পর্কে জানলে এবং তাঁদের লেখা বই পড়লে তরুণ প্রজন্মের মাঝে তখন মানবীয় গুণাবলির বিকাশ, দেশাত্মবোধ, অসা¤প্রদায়িক চেতনা, রাজনৈতিক সচেতনতা ও বাঙালি মানস গড়ে উঠবে। পাশাপাশি এই বই পড়া তরুণ প্রজন্মকে প্রগতিশীলতার পথে, উন্নতির পথে পরিচালিত করবে। যে প্রজন্ম আগামীর বাংলাদেশকে একটি জ্ঞান সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।অনুষ্ঠানে সভাপতি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বই জ্ঞানের প্রতীক, আলোর প্রতীক সভ্যতার প্রতীক। বাগবাদ যখন ইতিহাসের সভ্য নগরী হিসেবে গড়ে উঠেছিলো তখন হালাকু খানের সেনাবাহিনী এসে বাগদাদ আক্রমণ করে বাগদাদের শ্রেষ্ঠ লাইব্রেরিগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছিলো। কয়েকবছর আগে আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও আমরা সেই হালাকু খানের উত্তরসূরিদের তাÐব দেখেছিলাম। তিনি সবরকম বই পড়ার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আগামীতে এই রকম ঘটনা না ঘটাতে দিতে চাইলে মানুষের মাঝে জ্ঞানের আলো জ্বালাতে হবে। তাই বেশি বেশি লাইব্রেরি গড়ে তুলতে হবে।
সভা শেষে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার কর্তৃক আয়োজিত বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ ও নজরুল জয়ন্তী ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষ্যে বই পাঠ, চিত্রাঙ্কন, কুইজ ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সভায় প্রধান অতিথিকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রধান করা হয়। অনুষ্ঠানে লেখক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন গ্রন্থাগার প্রতিনিধি, বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকগণ উপস্থিত ছিলেন।